নেতা: নির্বাচনী প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মধ্যপ্রদেশের মন্দসৌরে শনিবার। ছবি: পিটিআই।
চার দিন বাকি ভোটের। দু’পক্ষের তিন মহারথী আজ একই দিনে মধ্যপ্রদেশে হাজির হয়ে প্রচারের ঝাঁঝ তুঙ্গে তুলে নিয়ে গেলেন। এক দিকে রাহুল গাঁধী। অন্য পক্ষে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ। কথা না-রাখা, দুর্নীতি, প্রতারণার মতো রাজনৈতিক বিষয়ের পাশাপাশি জোর তরজা চলল অভদ্রতার প্রশ্নে।
সাগর, দমোহ ও টীকমগঢ়ের সভাগুলিতে যেমন রাহুল অভিযোগ করলেন, মানুষকে ঠকিয়েছেন মোদী। বছরে দু’কোটি কর্মসংস্থান, বিদেশের কালো টাকা উদ্ধার করে প্রত্যেক দেশবাসীর অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে জমা দেওয়ার কথা বলে ২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসেছিলেন। কথা রাখেননি। রাহুলের কথায়, ‘‘এখন হারার ভয় থেকেই ঘৃণা জন্মেছে মোদীর মনে। আমার ও আমার পরিবার সম্পর্কে ঘৃণা নিয়ে কথা বলেন তিনি।’’
এই সূত্রে রাহুল তুলনা টানেন বিজেপিরই মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের সঙ্গে। কংগ্রেস সভাপতির কথায়, ‘‘দুর্নীতি শিবরাজও করেছেন। কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে কিছু বললে, ভব্য ভাষাতেই বলেন। মোদী ভদ্র ভাবে কথাই বলতে পারেন না।’’ এর পরে তাঁর নিজের সম্পর্কে সংযোজন, ‘‘রাহুল গাঁধী সব সময় ভদ্রতা বজায় রেখেই চলবে।’’
অসৌজন্য নিয়ে মোদী-অমিতরা দুষেছেন গোটা কংগ্রেস দলটাকেই। ছত্তরপুরের সভায় মোদী বলেন, ‘‘দুঃখের সঙ্গে বলছি, এত বছর দেশ শাসনের পরে মোদীর বিরুদ্ধে দলটার সব অস্ত্র ভোঁতা হয়ে গিয়েছে। বলার মতো বিষয়ও নেই। দেউলিয়া হয়ে পড়েছে দলটা। মোদীর টক্কর নিতে না পেরে মাকে অপমান করছে। বলার মতো প্রসঙ্গ না-থাকলেই কেউ কারও মায়ের সম্পর্কে কুকথা বলে।’’ প্রসঙ্গটা কংগ্রেস নেতা রাজ বব্বরের গত কালের এক মন্তব্য নিয়ে।
টাকার দামের পতনের প্রসঙ্গে মোদী নিজেই এক সময়ে সনিয়া গাঁধী ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহনের বয়স ছুঁয়ে ফেলা নিয়ে কটাক্ষ করতেন। তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বব্বর কাল ‘টাকার দাম এ বার মোদীর মায়ের বয়সও ছুঁয়ে ফেলছে’ বলে কটাক্ষ করেন। এতেই ফুঁসে উঠেছে বিজেপি। এবং মোদী। কংগ্রেসের মণিশঙ্কর আইয়ার এক সময়ে মোদীকে ‘নীচ প্রকৃতির লোক’ বলার পরেও মোদী ও তাঁর দল এ ভাবেই শোরগোল তুলে দিয়ে গুজরাতের ভোটে কংগ্রেস বিরোধী হাওয়া তুলছিল। আনন্দকে তখনকার মতো শাস্তিও দেন রাহুল।
কংগ্রেসের নেতারা বলছেন, বব্বর আক্রমণ করছেন মোদীরই পথ ধরে। তাতেই ঘা লেগেছে বেশি। তবে রাহুল যে তা পছন্দ করছেন না সেটা তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন দিয়েছেন সাগরের জনসভায়। তবে মোদী ছাড়ছেন না। ছত্তরপুরের সভায় কার্যত হুঙ্কারের সুরে বলেছেন, ‘‘মোদীর সঙ্গে লড়াইয়ের সাধ্যই নেই কংগ্রেসের লোকজনের। গত ১৭-১৮ বছর ধরে প্রতিটি ক্ষেত্রে আমি আপনাদের চ্যালেঞ্জ করেছি। এবং হারিয়েছি। আপনারা এখন আমার মাকেও রাজনীতিতে টানছেন! এটাই কংগ্রেস ও তার লোকজনের আচরণ!’’
সনিয়া গাঁধী থেকে শুরু করে নেহরু-গাঁধী পরিবারকেও বিঁধেছেন মোদী। তাঁর কথায় ‘‘আমার সরকার ঘরে বসে থাকা ম্যাডামের রিমোট কন্ট্রোলে চলে না। দেশের ১২৫ কোটি মানুষ এই সরকারের হাইকম্যান্ড।’’ মন্দসৌরের সভায় জওহরলাল নেহরুকে নিশানা করে তাঁর বক্তব্য, বল্লবভাই পটেল দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হলে কৃষকদের এই দুর্দশায় পড়তে হত না। ইন্দিরা গাঁধী ‘গরিবি হটাও’ স্লোগান তুলে ভাঁওতা দিতে পারতেন না। আর অমিত শাহের বক্তব্য, মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসের কোনও মুখ নেই শিবরাজের টক্কর নেওয়ার মতো। সভা করার পাশাপাশি টিভি সাক্ষাৎকারে তিনি এ দিন সবিস্তার ব্যাখ্যা করেন, ভোটের হাওয়া তোলার জন্য পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ বা রামমন্দিরের মতো বিষয়ে হাওয়া তোলার দরকার বিজেপির নেই। হওয়া উঠেই রয়েছে এই সরকারের কাজকর্ম উপকৃত জনতার ঘরে ঘরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy