Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে সরাসরি দ্বন্দ্বে নরেন্দ্র মোদী সরকার

আজ বিচারপতি মদন বি লোকুরের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চকে অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল বলেন, ‘‘জনস্বার্থের মামলায় শীর্ষ আদালত সরকারকে তোপ দাগছে। কিন্তু বিচারপতিদের পক্ষে একটা সমস্যার সব দিক জানা সম্ভব নয়।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৮ ০৪:২২
Share: Save:

সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে সম্মুখসমরে নামল নরেন্দ্র মোদী সরকার।

শীর্ষ আদালতের এজলাসে দাঁড়িয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল আজ বিচারপতিদের স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, ‘‘আপনারা সরকারের সমালোচনায় সংযত হোন।’’

আজ বিচারপতি মদন বি লোকুরের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চকে অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল বলেন, ‘‘জনস্বার্থের মামলায় শীর্ষ আদালত সরকারকে তোপ দাগছে। কিন্তু বিচারপতিদের পক্ষে একটা সমস্যার সব দিক জানা সম্ভব নয়।’’

ছেড়ে কথা বলেননি বিচারপতিরাও। সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়ামের অন্যতম সদস্য প্রবীণ বিচারপতি লোকুর পাল্টা ধমকের সুরে বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট সমস্যার সমাধানেরই চেষ্টা করছে। সরকারের এমন কোনও ধারণা তৈরি করা উচিত নয় যে আদালত সরকারের অকারণে সমালোচনা করছে আর কাজে বাধা দিচ্ছে।’’

বিচারপতিদের সঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেলের এ হেন বাগ্‌যুদ্ধ সাম্প্রতিক অতীতে ঘটেনি।

বিরোধী শিবিরের যুক্তি, লোকসভা ভোট এগিয়ে আসছে। এ দিকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা এজলাসে বসে সরকারের সমালোচনা করছেন। বিচারপতিদের কটাক্ষ দিয়েই সংবাদপত্রের শিরোনাম তৈরি হচ্ছে। সরকারকে অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে। সেই কারণেই এখন সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে সরাসরি দ্বন্দ্বে নামছে।

বস্তুত আজ সরকারের সমালোচনার জবাব দিতে রীতিমতো তৈরি হয়ে সুপ্রিম কোর্টে হাজির হয়েছিলেন বেণুগোপাল। বিচারপতিদের কটাক্ষ দিয়ে তৈরি সংবাদপত্রের শিরোনামের প্রসঙ্গ টেনে বিচারপতি লোকুরের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চকে তিনি বলেন, ‘‘দিনের পর দিন আমি আপনাদের মন্তব্য কাগজে পড়ছি। কিন্তু এ সব বিরূপ মন্তব্য করার সময়ে এক জন বিচারপতির পক্ষে সব কিছু জানা সম্ভব নয়।’’

বিরোধীদের যুক্তি, ইউপিএ-সরকারের শেষ পর্বে টু-জি স্পেকট্রামের মতো বিভিন্ন দুর্নীতির মামলায় যখন বিচারপতিরা বিরূপ মন্তব্য করতেন, তখন সেগুলিকেই রাজনৈতিক হাতিয়ার করতেন বিজেপি নেতারা। এখন একই রকম তিরের মুখে পড়ে বিজেপি সরকার বিচারপতিদের সংযত হতে বলছে।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজ উদাহরণ হিসেবে টু-জি মামলারই প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল। তাঁর যুক্তি ছিল, সমস্ত টু-জি লাইসেন্স বাতিল করে দিয়ে আদালত বিপুল বিদেশি লগ্নি আটকে দিয়েছে। জাতীয় সড়কের ৫০০ মিটারের মধ্যে মদ বিক্রি বন্ধ করতে বলায় বহু মানুষের রোজগার গিয়েছে। বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট নানা রকম কল্যাণকর পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু সেই কাজের জন্য অর্থ কোথা থেকে আসবে?’’

বিচারপতি লোকুর পাল্টা যুক্তি দেন, আদালতের নির্দেশেই বেআইনি খনন থেকে পরিবেশ উন্নয়ন তহবিল হিসেবে সরকার দেড় লক্ষ কোটি টাকা আয় করেছে। সেই টাকা খরচ হয়নি কেন? কেন নির্মাণকর্মীদের কল্যাণের তহবিল থেকে ল্যাপটপ, ওয়াশিং মেশিন কেনা হয়েছে?

বিচারপতি আব্দুল নাজির ও বিচারপতি দীপক গুপ্তকে পাশে নিয়ে বিচারপতি লোকুর বলেন, ‘‘একটা কথা স্পষ্ট করে দিতে চাই। আমরা সব বিষয়ে মোটেই সরকারের নিন্দা করিনি, করছিও না। আমরাও এ দেশের নাগরিক। এমন ধারণা তৈরির চেষ্টা করবেন না যে আমরা সরকারের সমালোচনা করে কাজে বাধা দিচ্ছি। আমরা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করছি।’’

অ্যাটর্নি জেনারেলকে বিচারপতি বলেন, ‘‘আপনারা শুধু সরকারি অফিসারদের সংসদের তৈরি আইন মেনে কাজ করতে বলুন।’’

বিচারপতি লোকুরের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে সম্প্রতি দূষণ, পরিবেশ, মহিলা-শিশুদের দুরবস্থা, শিশুদের হোম, বিধবাদের পুনর্বাসন, বেআইনি খনন, জেলের দুরবস্থার মতো বিষয়ে সরকারকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। বিচার বিভাগে মোদী সরকারের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে বিচারপতিদের সাংবাদিক বৈঠকেও বিচারপতি লোকুর অংশ নিয়েছিলেন। আজ জেলের দুরবস্থা নিয়ে শুনানির সময়ই এই বাগ্‌যুদ্ধ হয়। অ্যাটর্নি জেনারেল আর্জি জানান, বিচারপতিরা যেন তাঁর কথায় অপরাধ না নেন। আর্জি বিবেচনা করেন।

দেশের রাজনীতি, দেশের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE