Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মেমন যোগে কাঠগড়ায় দাঙ্গাই

১৯৯৩ সালের ১২ মার্চ মুম্বইয়ে এয়ার ইন্ডিয়া বিল্ডিংয়ের কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলেন বছর পঁচিশের অশোক চতুর্বেদী। হঠাৎ প্রবল বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে গোটা চত্বর। পাঁচ দিন পরে যশলোক হাসপাতালে মারা যান অশোক। ইয়াকুব মেমনের ফাঁসির পরে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন তাঁর আত্মীয়েরা।

মেমনের ফাঁসির পর নাগপুর জেলের বাইরে পুলিশ পাহারা। ছবি: পিটিআই।

মেমনের ফাঁসির পর নাগপুর জেলের বাইরে পুলিশ পাহারা। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৫ ০৪:১৮
Share: Save:

১৯৯৩ সালের ১২ মার্চ মুম্বইয়ে এয়ার ইন্ডিয়া বিল্ডিংয়ের কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলেন বছর পঁচিশের অশোক চতুর্বেদী। হঠাৎ প্রবল বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে গোটা চত্বর। পাঁচ দিন পরে যশলোক হাসপাতালে মারা যান অশোক। ইয়াকুব মেমনের ফাঁসির পরে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন তাঁর আত্মীয়েরা। এবং ১৯৯৩ সালের বিস্ফোরণে অন্য নিহতদের পরিবারও। এখন দাউদ ইব্রাহিম-সহ বাকি চক্রীদের শাস্তি চান তাঁরা।

কিন্তু আরম্ভেরও আরম্ভ থাকে। ১৯৯৩ সালের বিস্ফোরণের উৎস কোথায়? বাবরি মসজিদ ও তার পরের দাঙ্গার তদন্তকারী শ্রীকৃষ্ণ কমিশনের রিপোর্ট সাফ জানাচ্ছে, মু্ম্বই বিস্ফোরণ ওই দুই ঘটনারই ফল। ইয়াকুবের ফাঁসিতে বিস্ফোরণের নিহতদের পরিবার কিছুটা স্বস্তি পেলেও, দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্তদের কী খবর?

তাঁরা এক বাক্যে জানাচ্ছেন, সুবিচার আদৌ পাওয়া যায়নি। শিবসেনার প্রয়াত প্রধান বালাসাহেব ঠাকরে থেকে একেবারে নীচুতলার কর্মীর দিকে সরাসরি আঙুল তুলেছিল শ্রীকৃষ্ণ কমিশন। মজুত রয়েছে ১৫ হাজার পাতার সাক্ষ্যপ্রমাণ। কিন্তু শাস্তি হয়েছে কেবল প্রাক্তন শিবসেনা সাংসদ মধুকর সরপোতদার ও দুই পার্টিকর্মীর। সঙ্গে সঙ্গেই জামিন পান সরপোতদার। ২০১০ সালে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তাঁকে সাজা ভোগ করতে হয়নি।

ইয়াকুবের পরিবারেরও যে মুম্বই দাঙ্গায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছিল তা জানিয়েছেন বিচারপতি শ্রীকৃষ্ণই। ইয়াকুবের দাদা টাইগারের যে ‘‘প্রতিশোধ নেওয়ার যথেষ্ট কারণ’’ ছিল তাও জানিয়েছেন তিনি।

কী ভাবে এই চক্রান্তে জড়িয়েছিল মেমন পরিবার? তদন্তকারীরা জানান, ১৯৯৩ সালের মধ্যেই চোরাচালানে নাম করে ফেলেছিল ইয়াকুবের দাদা টাইগার। অন্য ব্যবসার আড়ালে বেআইনি কাজ করত সে। তখন মুম্বইয়ের মাহিম এলাকায় আল-হুসেইনি বিল্ডিংয়ে তখন থাকত মেমন পরিবার। মাহিম চার্চের কাছে ছিল টাইগারের অফিস। দাঙ্গার সময়ে সেই অফিসে আগুন লাগিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। সেই রাগেই মুম্বই বিস্ফোরণের ষড়যন্ত্রে যোগ দেয় টাইগার। চোরাচালানের সূত্রে দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল টাইগারের। তদন্তকারীদের মতে, পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই দাউদকেই মুম্বই বিস্ফোরণ ঘটানোর দায়িত্ব দেয়। মহারাষ্ট্রে বিস্ফোরক পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিল দাউদ। উপকূল থেকে সেগুলি যথাস্থানে পাঠানোর ব্যবস্থা করে টাইগার। সেই সঙ্গে হামলা চালানোর জন্য কিছু মুসলিম যুবককে বেছে নেওয়া হয়। এই কাহিনিরই যেন প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে শ্রীকৃষ্ণ কমিশনের রিপোর্টে। যেখানে স্পষ্টই বলা হচ্ছে, বাবরি মসজিদ ধ্বংস ও দাঙ্গার পরে ‘‘সরকার ও পুলিশের বিরুদ্ধে মুসলিম যুবকদের বিরাট অংশের মধ্যে প্রবল ক্ষোভ দেখা দেয়। সেই ক্ষোভকেই কাজে লাগায় পাকিস্তানি মদতপুষ্ট দেশদ্রোহীরা। ওই যুবকদের প্রতিশোধ নিতে উৎসাহিত করা হয়। দাউদ ইব্রাহিমের নির্দেশে ছক কষে তা কার্যকর করা হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE