Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ঢাকার সিদ্ধান্তে দ্রুত নেট পরিষেবা পাচ্ছে উত্তর-পূর্ব

বাংলাদেশে শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার একটি সিদ্ধান্তে ত্রিপুরা-অসম সহ গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মুখে হাসি ফুটতে চলেছে। বাংলাদেশের সরকারি সংস্থা ‘সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানি’র অব্যবহৃত ব্যান্ডউইদ ভারতের কাছে বিক্রির সিদ্ধান্তে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে বাংলাদেশের মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদের সচিব মোশাররফ হোসাইন ভুঁইয়া সোমবার জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ বিষয়টি উত্থাপন করে।

বাপি রায়চৌধুরী
আগরতলা শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২৭
Share: Save:

বাংলাদেশে শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার একটি সিদ্ধান্তে ত্রিপুরা-অসম সহ গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মুখে হাসি ফুটতে চলেছে।

বাংলাদেশের সরকারি সংস্থা ‘সাবমেরিন কেব্‌ল কোম্পানি’র অব্যবহৃত ব্যান্ডউইদ ভারতের কাছে বিক্রির সিদ্ধান্তে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে বাংলাদেশের মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদের সচিব মোশাররফ হোসাইন ভুঁইয়া সোমবার জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ বিষয়টি উত্থাপন করে। আলোচনার পরে তাতে আনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। সচিব জানিয়েছেন এ বিষয়ে ভারতের সঙ্গে চুক্তির পরে কক্সবাজার থেকে আখাউড়া হয়ে ত্রিপুরায় ঢুকবে সাবমেরিন কেব্‌ল লাইন। তার পরে তা উত্তর-পূর্ব ভারতে ছড়িয়ে যাবে। বাংলাদেশের মন্ত্রিপরিষদের সচিব জানিয়েছেন, ভারতকে এই সুবিধা দিয়ে তাঁদের বছরে এক কোটি ২০ লক্ষ ডলার আয় হবে, যা দিয়ে ‘সাবমেরিন কেব্‌ল’ সংস্থার এক চতুর্থাংশ কর্মীর বেতন মেটানো যাবে।

ত্রিপুরা-সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা বর্তমানে খুবই দুর্বল। বিএসএনএলের কলকাতা কেন্দ্রের ওপরই এ বিষয়ে তাদের নির্ভর করতে হয়। কলকাতা থেকে আসা কেব্‌ল দীর্ঘ পাহাড়ি এলাকা দিয়ে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে ঢোকে। কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়ায় ধস নেমে প্রায়ই এই কেব্‌ল কাটা পড়ে পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা যেমন দুর্ভোগে পড়েন, তেমনই পুলিশের তথ্যব্যাঙ্ক ও পাসপোর্ট পরিষেবাও বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশের তথ্যব্যাঙ্কে যাবতীয় দুষ্কৃতীদের রেকর্ড থাকে। তথ্যব্যাঙ্ক অচল হয়ে পড়ায় তদন্তের কাজে সময় লেগে যায়। বাকি দেশের তথ্যব্যাঙ্কের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়াটা দেশের নিরাপত্তার পক্ষেও বিপজ্জনক। একই কারণে দেশের এই অঞ্চলে পাসপোর্ট পরিষেবাও অনেক বেশি সময়সাপেক্ষ। ত্রিপুরা পুলিশের ডিজি কে ভি নাগরাজ সম্প্রতি পুলিশ দিবসের অনুষ্ঠানে আক্ষেপ করে বলেছেন— দুর্বল ইন্টারনেটের কারণে তাঁরা সিসিটিএনএস (ক্রাইম অ্যান্ড ক্রিমিন্যাল ট্র্যাকিং নেটওয়ার্ক সিস্টেমস) চালু করতে পারছেন না।

ত্রিপুরায় বর্তমানে ইন্টারনেট পরিষেবা শিলংয়ের সঙ্গে আগরতলার মাইক্রোওয়েভ ব্যাবস্থায় পরিচালিত হয়, যা খুবই দুর্বল। সব চেয়ে খারাপ অবস্থা ব্যাঙ্ক পরিষেবার। লিঙ্ক না-থাকায় এটিএমগুলি অনেক সময়ই বন্ধ থাকে। ব্যাঙ্কের অন লাইন ব্যবস্থা চালু হলেও দুর্বল ইন্টারনেট সংযোগের কারণে তা কার্যকরহয় না। পাসবই এন্ট্রি করতে হয় হাতে লিখে। ফলে নাকাল হন সাধারণ গ্রাহকরা।

বাংলাদেশের মন্ত্রিসভা অনুমোদন করার পরে ও দেশের ‘সাবমেরিন কেব্‌ল কোম্পানি’র সঙ্গে বিএসএনএল-এর চুক্তি স্বাক্ষর হবে। বাংলাদেশের টেলি যোগাযোগ মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, কক্সবাজার থেকে আখাউড়া পর্যন্ত নতুন ইন্টারনেট কেব্‌ল-এর মাধ্যমে ২০০ জিবিপিএস (গিগাবাইট পার সেকেন্ড) সংযোগ আসবে, যার মাত্র ৩০ জিবিপিএস তারা ব্যবহার করবে। ভারতকে বিক্রি করা হবে ১০ জিবিপিএস। তিন বছরের জন্য এই চুক্তি হচ্ছে। প্রয়োজনে পরে আরও ৩০ জিবিপিএস নেট-সংযোগ ভারত কিনতে পারবে। আগরতলা হবে উত্তর-পূর্ব ভারতে বাংলাদেশ থেকে আসা ইন্টারনেট কেব্‌লের প্রবেশপথ। আপাতত আগরতলা টেলিফোন এক্সচেঞ্জ থেকে আখাউড়া সীমান্ত পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার অপটিক্যাল কেব্‌ল লাইন পাতা হচ্ছে, যা বাংলাদেশ থেকে আসা কেব্‌ল লাইনের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। আগরতলা টেলিফোন এক্সচেঞ্জের কারিগরি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে অসম বা মেঘালয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও ত্রিপুরার ইন্টারনেট সংযোগে কোনও প্রভাব পড়বে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE