Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
National News

চাপ তৈরির খেলায় বেজিং, ভারত-চিন যৌথ সামরিক মহড়া বাতিলের পথে

‘চক্ষুশূল’ দলাই লামার অরুণাচল সফরের পরিকল্পনা শুনেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিল চিন। তিব্বতি ধর্মগুরুকে ভারত যদি অরুণাচল প্রদেশে যেতে দেয়, তা হলে ফল খারাপ হবে, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল বেজিং। নয়াদিল্লি অবশ্য গুরুত্ব দেয়নি। নির্ধারিত সূচি মেনেই উত্তর-পূর্বের বিস্তীর্ণ এলাকা সফর করেন নির্বাসিত তিব্বতি সরকারের কাণ্ডারী।

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৭ ১৯:১৯
Share: Save:

‘চক্ষুশূল’ দলাই লামার অরুণাচল সফরের পরিকল্পনা শুনেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিল চিন। তিব্বতি ধর্মগুরুকে ভারত যদি অরুণাচল প্রদেশে যেতে দেয়, তা হলে ফল খারাপ হবে, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল বেজিং। নয়াদিল্লি অবশ্য গুরুত্ব দেয়নি। নির্ধারিত সূচি মেনেই উত্তর-পূর্বের বিস্তীর্ণ এলাকা সফর করেন নির্বাসিত তিব্বতি সরকারের কাণ্ডারী। কিন্তু সেই সফরের পর প্রায় এক মাস কাটলেও তিক্ততা যে একটুও কমেনি, তা বুঝিয়ে দিল চিন। ভারত ও চিনের মধ্যে যে দ্বিপাক্ষিক সামরিক মহড়া হওয়ার কথা ছিল, তা সম্ভবত বাতিল হচ্ছে। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রেই এই খবর মিলেছে। মহড়ার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে যে ‘ইনিশিয়াল প্ল্যানিং কনফারেন্স’ (আইপিসি) হওয়ার কথা ছিল, চিনের কারণেই সে সম্মেলন হচ্ছে না, জানা গিয়েছে সাউথ ব্লক সূত্রে।

‘হ্যান্ড-ইন-হ্যান্ড মিলিটারি এক্সারসাইজ’— ভারত ও চিনের দ্বিপাক্ষিক সামরিক মহড়ার পোশাকি নাম এটিই। স্থলসেনা, নৌসেনা, বায়ুসেনা— তিন বাহিনীই অংশ নেয় এই দ্বিপাক্ষিক মহড়ায়। ভারত ও চিন পরস্পরের মধ্যে মূলত প্রশিক্ষণ বিনিময় করে এই মহড়ায়। ২০১৬ সালেও নির্দিষ্ট সময়েই মহড়া হয়েছিল। এ বছরও হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যে কোনও সামরিক মহড়ার আগে সংশ্লিষ্ট দেশগুলি যে যৌথ প্রস্তুতি সম্মেলন করে, সেই সম্মেলন অর্থাৎ আইপিসি ভেস্তে গেল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর, মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে আইপিসি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হচ্ছে না। চিন সম্মেলনে যোগ দিচ্ছে না বলেই তা স্থগিত হয়ে গিয়েছে বলে খবর। আইপিসি স্থগিত হয়ে যাওয়া মানে যে মহড়াও অনিশ্চিত হয়ে পড়া, সে নিয়ে কোনও শিবিরেরই সংশয় নেই।

যৌথ মহড়া থেকে কেন পিছিয়ে গেল চিন?

ভারতের সঙ্গে চিনের সাম্প্রতিক টানাপড়েন যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তার জেরেই চিনের এই সিদ্ধান্ত বলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদরা মনে করছেন। যে কোনও আন্তর্জাতিক বিবাদেই চিন যে ভাবে আগ্রাসী নীতি নিয়ে বিপরীত পক্ষকে চাপে ফেলতে চায়, এ বারও সেই নীতিই নেওয়া হয়েছে বলে ওয়াকিবহাল মহলের মত। তবে এ ক্ষেত্রে বিপরীত দিকে থাকা দেশটির নাম যে হেতু ভারত, সে হেতু প্রকাশ্য আগ্রাসন চিন দেখাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, চিন ‘নিয়ন্ত্রিত আগ্রাসন’ দেখাচ্ছে। দলাই লামার অরুণাচল সফর নিয়ে প্রকাশ্যে ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়েও যে কোনও কাজ হয়নি, তা বেজিং ভোলেনি। নয়াদিল্লিও পাল্টা সুর চড়িয়েছিল। তাই এ বার আর প্রকাশ্য হুঁশিয়ারির পথ না নিয়ে সহযোগিতা এবং যৌথ পরিকল্পনার রাস্তা থেকে সরে যাচ্ছে চিন। এই ‘নিয়ন্ত্রিত আগ্রাসন’ আসলে চাপ বাড়ানোর কৌশল, খানিকটা ‘বয়কটের’ বার্তা দেওয়ার চেষ্টা— বলছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদদের একাংশ।

অবস্থান পাশাপাশি হলেও ভারত এবং চিন কূটনৈতিক পরিসরে পরস্পরের থেকে বহু দূরে। —ফাইল চিত্র।

ভারতের সঙ্গে চিনের বিবাদ অবশ্য শুধুমাত্র দলাই লামাকে কেন্দ্র করে নয়। বিবাদের কারণ আরও অনেক। দীর্ঘ দিন ধরেই এনএসজি-তে ভারতের অন্তর্ভুক্তির তীব্র বিরোধিতা করছে চিন। মাসুদ আজহারের মতো জঙ্গির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা জারির প্রস্তাবও চিনা ভেটোয় বার বার আটকে যাচ্ছে। পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্যে দিয়ে চিন অর্থনৈতিক করিডর বানিয়েছে, ভারত যার তীব্র বিরোধিতা করেছে। অরুণাচল নিয়েও ইদানীং চিনের সুর আগের চেয়ে অনেক চড়া হয়েছে। ১৯৬২-র যুদ্ধের পর যে অরুণাচল থেকে বাহিনী প্রত্যাহার করে নিয়েছিল বেজিং, গত কয়েক বছর ধরে সেই অরুণাচলকেই চিন আবার ‘দক্ষিণ তিব্বত’ নামে ডাকতে শুরু করেছে। দলাই লামার অরুণাচল সফরের পর চিন ওই ভারতীয় রাজ্যের ছ’টি অঞ্চলের নতুন নামকরণও করেছে।

আরও পড়ুন: কলম্বোয় সাবমেরিন পাঠাতে চাইল চিন, অনুমতি দিল না শ্রীলঙ্কা

সব মিলিয়ে ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক প্রবল টানাপড়েনের মধ্যে দিয়েই যাচ্ছে। রাশিয়া, ভারত এবং চিনের মধ্যে যে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, সম্প্রতি সে বৈঠকে যোগ দেয়নি চিন। আবার আগামী রবিবার বেজিং-এ বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামের যে বিশাল শিখর সম্মেলন আয়োজিত হচ্ছে, সেখানেও ভারতের কোনও হাই-প্রোফাইল প্রতিনিধি যোগ দিচ্ছেন না। শুধু বেজিং-এর ভারতীয় দূতাবাস থেকে কোনও প্রতিনিধি সেখানে যেতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। এই রকম এক পরিস্থিতিতেই যৌথ সামরিক মহড়ার আইপিসি থেকে হঠাৎ চিন সরে দাঁড়াল। এ বছরের হ্যান্ড-ইন-হ্যান্ড মিলিটারি এক্সারসাইজও অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। ভারতীয় সেনা অবশ্য এখনই বলছে না যে যৌথ মহড়া এ বছরের মতো বাতিল। সেনার তরফে বলা হচ্ছে, আইপিসি স্থগিত হয়েছে মানে এই নয় যে এ বছর আর ভারত-চিন মহড়া হবে না। তবে ভারত-চিন সম্পর্কের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে বেজিং-এর এই অবস্থান যে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, তা নিয়ে ওয়াকিবহাল মহলের সংশয় নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE