Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

নেই ফারুক, কাশ্মীর নিয়েই সরব মমতা

নিজের রাজ্যে অতিথি বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে কাশ্মীর প্রসঙ্গ তোলার সুযোগ অবশ্য করে দিলেন ডিএমকে সভাপতি এম কে স্ট্যালিন

তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এম করুণানিধির মূর্তির আবরণ উন্মোচন অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং এম কে স্ট্যালিন। বুধবার চেন্নাইয়ে। ছবি: পিটিআই।

তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এম করুণানিধির মূর্তির আবরণ উন্মোচন অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং এম কে স্ট্যালিন। বুধবার চেন্নাইয়ে। ছবি: পিটিআই।

সন্দীপন চক্রবর্তী
চেন্নাই শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৯ ০০:৫৯
Share: Save:

কন্যাকুমারীর রাজ্যে দাঁড়িয়ে কাশ্মীরের প্রসঙ্গে সরব হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এ বার বিজেপির নাম না করেই।

নিজের রাজ্যে অতিথি বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে কাশ্মীর প্রসঙ্গ তোলার সুযোগ অবশ্য করে দিলেন ডিএমকে সভাপতি এম কে স্ট্যালিন। তাঁর পিতা এম করুণানিধির মূর্তি বুধবার উম্মোচিত হল ডিএমকে-র মুখপত্র ‘মুরাসলি’র দফতরে। করুণানিধির প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে ওই মূর্তি প্রতিষ্ঠার পরে রয়াপেট্টায় যে সভার আয়োজন করা হয়েছিল, সেখানে বিশেষ বক্তা হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলেন জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লা। কিন্তু স্ট্যালিন মমতাকে জানান, দু’দিন ধরে তাঁরা ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগই করতে পারেননি। এই সূত্র ধরেই এ দিন নাম না করে কেন্দ্রীয় সরকারকে এক হাত নিলেন তৃণমূল নেত্রী।

রয়াপেট্টার ওয়াইএমসিএ মাঠে সুসজ্জিত মঞ্চে ফারুকের জন্য চেয়ারও রাখা ছিল। মমতা সে দিকেই ইঙ্গিত করে বলেন, ‘‘ফারুকজি’র এখানে থাকা উচিত ছিল। প্রবীণ মানুষ, কথা বলতে ভাল লাগে। আমি একটা ভিডিয়ো দেখেছি কাল, জানি না সত্যি কি না। ফারুক কেঁদে ফেলছেন। বলছেন, মেয়ের বাড়িও তাঁকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।’’ এর পরেই মমতার সংযোজন, ‘‘ওমর আবদুল্লা ও মেহবুবা মুফতি— দু’জন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। আমরা জানিই না, তাঁরা কোথায় কেমন ভাবে আছেন! এটা গণতন্ত্রে হতে পারে! এ সব স্বৈরতন্ত্রের লক্ষণ!’’

কেন্দ্রীয় সরকারের কাশ্মীর বিল পাশ নিয়ে পদ্ধতিগত আপত্তি তুলে ২৪ ঘণ্টা আগেই সরব হয়েছিলেন মমতা। চেন্নাইয়েও তাঁর বক্তব্য, ‘‘একটা রাজনৈতিক দল কোনও সিদ্ধান্ত নিতেই পারে। কিন্তু তামিলনাড়ু বা বাংলা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিলে সেখানকার মানুষকে তো জানাতে হবে। এক একটা রাজ্য নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে, তারা কেউ কিছু জানবে না— এটা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো নয়।’’

পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা প্রত্যাহার করে জম্মু ও কাশ্মীরকে পুদুচেরির মতো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করেছে কেন্দ্র। পুদুচেরির মুখ্যমন্ত্রী, কংগ্রেসের ভি নারায়ণস্বামী এ দিনের সভায় বলেন, ‘‘আমাদের বিধানসভা আছে। কিন্তু উপ-রাজ্যপালকে দিয়ে কেন্দ্র ছড়ি ঘোরানোর চেষ্টা করছে।’’ স্ট্যালিনের অভিযোগ, ‘‘ফারুক, ওমরদের সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। কাশ্মীরে যা হয়েছে, একেবারে সমর্থনযোগ্য নয়।’’

শহরের অন্য দিকে ‘মুরাসলি’র দফতরে করুণানিধির মূর্তি উদ্বোধনের অনুষ্ঠান সেরে, মেরিনা বিচে করুণানিধি স্মারকে শ্রদ্ধা নিবেদন করে রয়াপেট্টার সভায় এসেছিলেন মমতা। সঙ্গে তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক ও প্রাক্তন সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী। লোকসভা ভোটের আগের মতো বড় মঞ্চ না হলেও নির্বাচন-উত্তর ছত্রভঙ্গ বিরোধী শিবিরে কাশ্মীরকে হাতিয়ার করে মমতা যে ভাবে প্রতিবাদের সুর বাঁধার চেষ্টা করেছেন, তাকে স্বাগত জানিয়েছেন বাকি নেতারাও। ডিএমকে-র চেয়ারম্যান, বর্ষীয়ান বীরমণি তৃণমূল নেত্রীকে ‘আয়রন লেডি’ বলে আখ্যা দিয়েই মন্তব্য করেছেন, ‘‘স্রোতের বিরুদ্ধে লড়াই করেই জয়ী হতে হয়। স্ট্যালিন তা-ই করছেন, মমতাও লড়াইয়ের নেত্রী।’’

বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে এক পংক্তিতে না বসলেও মূর্তি প্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠানে মমতা, নারায়ণস্বামীর মতোই উপস্থিত ছিলেন দলের রাজ্য সম্পাদক কে বালকৃষ্ণন-সহ তামিলনাড়ু সিপিএমের নেতারা। কারণ, তাঁরা ডিএমকে-র জোটসঙ্গী। কাশ্মীর-সূত্রে কন্যাকুমারীর রাজ্য থেকে নতুন সমীকরণেরও সূচনা হবে কি না, তার উত্তর অবশ্য জানে ভবিষ্যৎই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE