Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Bharatiya Janata Party

কেন বিজেপির সঙ্গে? সাফাই দিলেন নীতীশ, জয় আস্থা ভোটে

আস্থা ভোটে মসৃণ জয় নীতীশ কুমারের। গোপন ব্যালটে ভোট হলে নীতীশ হারতেন, বলছে আরজেডি।

প্রত্যাশিত সংখ্যার চেয়ে ১টি ভোট কম পেলেন। কিন্তু আস্থা ভোটে শেষ হাসি নীতীশই হাসলেন। —ফাইল চিত্র।

প্রত্যাশিত সংখ্যার চেয়ে ১টি ভোট কম পেলেন। কিন্তু আস্থা ভোটে শেষ হাসি নীতীশই হাসলেন। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৭ ১০:৫৬
Share: Save:

সব আক্রমণের জবাব সময় মতোই দেওয়া হবে। বললেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। রাতারাতি মহাজোট থেকে বিজেপি শিবিরে চলে গিয়ে নতুন করে সরকার গড়ায় আরজেডি এবং কংগ্রেসের তীব্র নিন্দার মুখে পড়েছেন নীতীশ। বিরোধী দলনেতা তেজস্বীপ্রসাদ যাদব নীতীশ কুমারকে শুক্রবার বিধানসভায় ‘বিশ্বাসঘাতক’ আখ্যা দিয়েছেন। ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ কোথায় গেল? সে প্রশ্নও তুলেছেন। ভোটাভুটির আগে সংক্ষিপ্ত ভাষণে নীতীশের মন্তব্য, ‘‘ধর্মনিরপেক্ষতা হল আদর্শের বিষয়, ধর্মনিরপেক্ষতার ইস্যুকে দুর্নীতি ঢাকার কাজে ব্যবহার করা যায় না।’’ নীতীশের সংক্ষিপ্ত ভাষণ শেষেই এ দিন ভোটাভুটি হয় বিহার বিধানসভায়। ১৩১-১০৮ ভোটে জয়ী হন নীতীশ।

আস্থা ভোটের জন্য অধিবেশনের কাজ শুরু হওয়ার আগে থেকেই এ দিন আরজেডি ও কংগ্রেস বিধায়করা বিহার বিধানসভার বাইরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। অধিবেশন শুরু হতেই সেই আক্রমণ আরও তীব্র হয়। নিজের ভাষণে নীতীশের তীব্র সমালোচনা শুরু করেন তেজস্বীপ্রসাদ। পরে নীতীশও তেজস্বীর সমালোচনার জবাব দেন। তিনি বলেন, ‘‘অন্য কারও কাছ থেকে আমাকে ধর্মনিরপেক্ষতা শিখতে হবে না। আমি জানি, পরিস্থিতিটা কী রকম।’’ ২০১৫-র বিধানসভা নির্বাচনে বিহারের রায় মহাজোটের পক্ষে ছিল, বিজেপির পক্ষে নয়, বলছিল আরজেডি। নীতীশ বিজেপির হাত ধরে জনাদেশের অপমান করেছেন, তোপ দাগেন তেজস্বীরা। সে কথার জবাবে নীতীশ বলেছেন, ‘‘ভোটের রায় জনগণের সেবার জন্য ছিল, রাজভোগ আর মেওয়া খাওয়ার জন্য নয়।’’ তিনি বিহারের মানুষের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, একটি মাত্র পরিবারের স্বার্থ রক্ষার জন্য নয়— লালুর পরিবারের প্রতি এ দিন এমন কটাক্ষও শোনা গিয়েছে নীতীশ কুমারের মুখে।

• তেজস্বী প্রসাদের আক্রমণের জবাব দিলেন নীতীশ কুমার। বললেন, ‘‘ধর্মনিরপেক্ষতার নামে লুঠতরাজ এবং দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয়।’’

• ভোটাভুটির আগেই তেজস্বী আক্রমণ করেছিলেন নীতীশকে। নিজের ভাষণে নীতীশকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলেন লালু-পুত্র।

• নীতীশ তার জবাব দিলেন। কিন্তু খুব বেশি তর্কে গেলেন না। রাজনৈতিক দল মানুষের রায় পায় মানুষের হয়ে কাজ করার জন্য, দুর্নীতি করার জন্য নয়। মন্তব্য নীতীশের।

• আস্থা ভোটে জয়ের পর আরজেডি এবং কংগ্রেসকে কটাক্ষ বিজেপি নেতা তথা বিহারের নতুন উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদীর। ‘‘আরজেডি এবং কংগ্রেসকে ধন্যবাদ। যদি তেজস্বী পদত্যাগ করতেন, তা হলে আজ আমি এই জায়গায় (উপমুখ্যমন্ত্রী পদে) থাকতাম না।’’ মন্তব্য সুশীলের।

• বুধবার পর্যন্ত বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী পদে ছিলেন তেজস্বী যাদব। সেই পদে এখন সুশীল মোদী।

আস্থা ভোটের আগে বেশি গোলমাল চাননি নীতীশ, তাই সংক্ষিপ্ত ভাষণ। দেখে নিন, কী বলছেন আমাদের প্রতিবেদকরা:

• বিহার বিধানসভায় আস্থা ভোটে জয় নীতীশ কুমারের।

• টিকে গেল বিজেপি-জেডি(ইউ) সরকার।

• ১৩১-১০৮ ভোটে জয় নীতীশ কুমারের।

• ১৩২ জন বিধায়কের সমর্থন তাঁর সঙ্গে রয়েছে বলে রাজ্যপালকে জানিয়েছিলেন নীতীশ। কিন্তু পেলেন ১৩১টি ভোট।

• আরজেডি-র ৮০ এবং কংগ্রেসের ২৭ জন মিলে মোট ১০৭টি ভোট পড়ার কথা ছিল নীতীশের বিপক্ষে। কিন্তু বিপক্ষে পড়ল ১০৮টি ভোট।

• বিবেক ভোটের ডাক দিয়েছিলেন তেজস্বী যাদব। নীতীশ কুমার অনৈতিক কাজ করেছেন বলে যে জেডি(ইউ) বিধায়করা মনে করেন, তাঁদেরকে আস্থা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার ডাক দিয়েছিলেন তিনি।

• কিন্তু গোপন ব্যালটে ভোট হয়নি। ধ্বনি ভোটও নেওয়া হয়নি। আস্থা প্রস্তাবের পক্ষে কারা এবং বিপক্ষে কারা, রেজিস্ট্রারে সই করে তা জানাতে বলা হয় বিধায়কদের।

• এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘লবি ডিভিশন’ প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার বদলে গোপন ব্যালটে ভোটাভুটি হলে নীতীশ আস্থা ভোটে হারতেন বলে আরজেডি দাবি করছে।

দেখে নিন, বিহার বিধানসভা থেকে আমাদের প্রতিবেদক কী জানাচ্ছেন:

• বিধানসভায় যখন আস্থা ভোটের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তখন লালুপ্রসাদ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।

• নীতীশ কুমার মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরে তাঁকে ফের যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠি, তা বেআইনি বলে লালুর দাবি। নীতীশের নিয়োগকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি।

• আদালত আরজেডি-র আবেদন গ্রহণ করেছে। তবে আস্থা ভোটে স্থগিতাদেশ দেয়নি। সোমবারের আগে এই মামলার শুনানি সম্ভব নয় বলে আদালতের তরফে জানানো হয়েছে।

• অনেক আরজেডি বিধায়কই আমার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। তাঁরা আমাদের দলে যোগ দিতে চান। সামাজিক ভাবে দুর্বল মানুষেরা আজ খুশি। তাঁরা জানেন, কত হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে তেজস্বীর। তিনি শুধু নিজের কখাই ভাবেন, গরিবদের নয়। রাজ্যের যুব সম্প্রদায় জানতে চায় কী ভাবে এত হাজার কোটি সম্পত্তির মালিক হলেন তিনি?— বিজেপি নেতা নন্দ কিশোর।

• বিধানসভায় বলছেন বিহার বিজেপি নেতা নন্দ কিশোর।

• তেজস্বী বলেন, এটা গণতন্ত্রের হত্যা। বিহারবাসীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হয়েছে।

• এটা সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।— তেজস্বী

• নীতীশ কুমারকে এখনও কাকা হিসাবে মনে করি। কিন্তু তিনি বিশ্বাসঘাতকতার কাজ করেছেন। তিনি আমাকে ইস্তফা দিতে বললে, আমি ভেবে দেখতাম।— তেজস্বী

• সুশীল মোদীর বিরুদ্ধেও মামলা চলছে। কী ভাবে তিনি উপমুখ্যমন্ত্রীর পদে শপথ নিলেন? শপথের সময় তড়িঘড়ি করে পরিবর্তন করা হল কেন? নীতীশের ইস্তফা দেওয়ার পরই সঙ্গে সঙ্গে কী ভাবে নরেন্দ্র মোদী টুইট করলেন? প্রশ্ন তেজস্বীর।

• এটা কী এক ব্যক্তির ইচ্ছাতেই? এর কারণ কী বিজেপি? আরজেডি? মাঁঝি জি না নীতীশ জি? বলেন তেজস্বী।

• এত নাটক কেন? গণতন্ত্রে জনতা মালিক। জনতা তো মহাজোটকেই চেয়েছিল।-তেজস্বী

• আমি জানতে চাই চার বছরে চার বার সরকার বদলে গিয়েছে। কেন এমন হল? তার জবাব চাই।— তেজস্বী।

• নীতীশ কুমার মহাত্মা গাঁধীর হত্যাকারীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। তিনি নিজেকে ‘হে রাম’ থেকে ‘জয় শ্রী রাম’-এ বদলেছেন।— তেজস্বী

• বিধানসভায় বলছেন তেজস্বী যাদব।

• আস্থা ভোট ঘিরে উত্তাল বিহার বিধানসভা।

• শুরু হল আস্থা ভোটের পর্ব।

আরও পড়ুন: দই-চিঁড়ে পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে নীতীশ, খোঁচা লালুর

• ‘পরিকল্পিত ভাবে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন নীতীশ।যখনই একা লড়েছেন দলেরআসল মূর্তি বেরিয়ে এসেছে। সে জন্য হয় বিজেপি, না হয় আরজেডি-র হাত ধরতে হয়েছে। আমাকে দাবার বোড়ে হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে।’— তেজস্বী যাদব।

• আস্থা ভোটের আগে বিহারের দায়িত্বে থাকা কংগ্রেস নেতা সিপি জোশী বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকে করছেন।

• ‘এটা স্পষ্ট যে ১৩২ জন বিধায়ক নিয়ে আমরাই আস্থা ভোট জিতব।’— বিহার বিজেপি নেতা মঙ্গল পাণ্ডে।

• বিধানসভায় পৌঁছলেন নীতীশ কুমার।

• বিধানসভার বাইরে আরজেডি বিধায়কদেরবিক্ষোভ।

• বিধানসভায় পৌঁছলেন বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদী।

• আজ আস্থা ভোটকে ঘিরে বিহার বিধানসভার বাইরে কড়া নিরাপত্তা।

আর কিছু ক্ষণের মধ্যেই নীতীশের গদি রক্ষার পরীক্ষা। পারবেন কি নীতীশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করে নিজের গদি টিকিয়ে রাখতে? জল্পনা চলছে নানা মহলে।

গত বুধবারই নাটকীয় ভাবে মহাজোট ছেড়ে বেরিয়ে আসেন নীতীশ। মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন। রাতারাতি বিহারের রাজনীতিতে একটা আমূল পরিবর্তন দেখা যায়। দোষ ও পাল্টা দোষের খেলার মধ্যেই নীতীশকে সমর্থন জানাতে এগিয়ে আসে বিজেপি। আপাতত বিজেপির হাত ধরেই নিজের সরকার গঠনের লক্ষ্যে অটল নীতীশ। সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে গেলে ১২২ আসনের দরকার। সরকার গঠনের জন্য বুধবার রাতেই রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন নীতীশ। অন্য দিকে, লালু প্রসাদের আরজেডি-ও কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে নীতীশকে আটকাতে। রাজ্যপালকে লেখা চিঠিতে নীতীশ জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে তাঁর হাতে ১৩২ জন বিধায়ক রয়েছেন। যার মধ্যে জেডিইউ-এর ৭১ এবং বিজেপির ৫৩ জন বিধায়ক রয়েছেন। এবং বিজেপির শরিক দলগুলিকেও পাশে পেয়েছেন নীতীশ। সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের মাহেন্দ্রক্ষণ হাজির। আর সেই সঙ্গে রয়েছে চমকও। জল্পনা চলছে ক্রস ভোট নিয়েও। এখানেও ক্রস ভোট একটা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারে। আর সেই সঙ্গেই ফের একটা নাটকের অপক্ষোয় জাতীয় রাজনীতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE