Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

স্বপ্নের ডানায় ভর দিয়ে উড়ান শুরু শিবাঙ্গীর

সেনা সূত্রের খবর, শিবাঙ্গী ওড়াবেন ডরনিয়ে পরিদর্শন বিমান। জলপথে নজরদারির জন্য এই বিমানগুলি ব্যবহার করা হয়। কোনও জাহাজ থেকে এই বিমানগুলি ওড়ে না।

স্বপ্নপূরণ: প্রথম মহিলা পাইলট হিসেবে নৌসেনায় যোগ দিলেন বিহারের তরুণী শিবাঙ্গী স্বরূপ।

স্বপ্নপূরণ: প্রথম মহিলা পাইলট হিসেবে নৌসেনায় যোগ দিলেন বিহারের তরুণী শিবাঙ্গী স্বরূপ।

সংবাদ সংস্থা
কোচি শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:০১
Share: Save:

চব্বিশের এক তরুণীর হাত ধরে আজ ইতিহাস রচনা হল নৌসেনায়। এই প্রথম মহিলা পাইলট হিসেবে নৌসেনায় যোগ দিলেন সাব লেফটেন্যান্ট শিবাঙ্গী স্বরূপ।

সেনা সূত্রের খবর, শিবাঙ্গী ওড়াবেন ডরনিয়ে পরিদর্শন বিমান। জলপথে নজরদারির জন্য এই বিমানগুলি ব্যবহার করা হয়। কোনও জাহাজ থেকে এই বিমানগুলি ওড়ে না। সরকারি উপকূল থেকে এগুলি ওঠা-নামা করে। শিবাঙ্গী বলেছেন, ‘‘উদ্ধারকাজের জন্যও এই বিমানগুলি কখনও কখনও ব্যবহার করা হয়। ফলে আহতদের উদ্ধারের মতো কাজও থাকবে আমাদের অভিযানের মধ্যে।’’ প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রেস রিলেশন অফিসার কমান্ডার শ্রীধর ওয়ারিয়ের জানিয়েছেন, শিবাঙ্গী যে ধরনের বিমান চালাবেন, সেগুলি সমুদ্রের উপর দিয়ে উড়বে এবং কোনও সন্দেহজনক বা উদ্বেজনক কার্যকলাপ দেখলে তা সেনাকে জানাবে। ‘‘আমার উপর অনেক বড় দায়িত্ব। আমায় সফল হতেই হবে,’’ বলেছেন শিবাঙ্গী।

বিহারের মুজাফ্ফরপুরে বড় হওয়া মেয়েটির ছোট থেকেই ওড়ার স্বপ্ন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি তখন মেরেকেটে দশ। দাদুর বাড়ি বেড়াতে গিয়ে দেখেছিলাম, এক মন্ত্রী এসেছেন স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে দেখা করতে। দাদুর হাত ধরে আমিও তাঁকে দেখতে যাই। কিন্তু নজর পড়ে সেই লোকটির উপরে, যিনি হেলিকপ্টার উড়িয়ে মন্ত্রীকে নিয়ে এসেছিলেন। তখনই ভেবেছিলাম, ইস্! আমি কি কোনও দিন এ রকম কিছু করতে পারব!’’

আরও পড়ুন: সাত থেকে সতেরো, খুন-ধর্ষণ, দেশ জুড়ে চলছেই

বাবা জ্ঞান স্বরূপ নিজেও নৌ অফিসার। শিবাঙ্গীর অনুপ্রেরণা বাবা-ই। জয়পুরের মালব্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট থেকে বায়োটেকনোলজি নিয়ে পড়ছেন তখন। কলেজে আসেন এক জন সেনা অফিসার। শিবাঙ্গী বলেছেন, ‘‘উনি নৌবাহিনীর কাজকর্ম নিয়ে, সেখানকার জীবন নিয়ে আমাদের বুঝিয়েছিলেন। সে সবই আমায় গভীর ভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল।’’ এর পরেই কলেজ ছেড়ে কুন্নুরে‌র ভারতীয় নৌসেনা অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণের জন্য যোগ দেন ওই তরুণী।

এই প্রশিক্ষণ পর্ব মোটেই সহজ ছিল না। তবে স্কোয়াড্রনের কাছ থেকে প্রবল সহযোগিতা তাঁর চলার পথ অনেকটাই সহজ করে বলে জানিয়েছেন শিবাঙ্গী। তিনি বলেন, ‘‘কখনও মনে হয়নি এখানে আমিই একমাত্র মেয়ে। এটা শুধুমাত্র আমার স্কোয়াড্রন ও প্রশিক্ষকদের জন্য সম্ভব হয়েছে।’’

১৯৯২-এর আগে শুধুমাত্র চিকিৎসা ক্ষেত্রে পরিষেবার জন্য সেনাবাহিনীতে মেয়েদের নেওয়া হত। ভারতীয় সেনায় শিবাঙ্গীই প্রথম মহিলা পাইলট নন। চলতি বছর মে মাসে যুদ্ধবিমানের পাইলট হিসেবে যোগ দেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ভাবনা কান্ত। ২১ ডিসেম্বরের মধ্যে নৌসেনার পাইলট হিসেবে যোগ দেবেন আরও দুই মহিলা। আপাতত তাঁরা পরিবহণ ও পরিদর্শন বিমান চালাবেন। এই ধরনের বিমান সেনা, অস্ত্রশস্ত্র ও অন্যান্য সামরিক সামগ্রী পরিবহণের কাজে ব্যবহৃত হয়। শ্রীধর বলেছেন, ‘‘মেয়েরা জাহাজ থেকে বিমান ওড়াতে পারবেন, এমন ব্যবস্থা এখনও আমাদের নেই। এর জন্য আমাদের যুদ্ধ জাহাজগুলির নকশায় বদল আনতে হবে, যা সময়সাপেক্ষ।’’

শিবাঙ্গী জানিয়েছে, অনেক প্রশংসা পেয়েছেন। এ বার এসেছে করে দেখানোর সময়। তাঁর কথায়, ‘‘যখনই কেউ প্রথম বার কিছু করেন, তার উপর অনেক চাপ থাকে, প্রত্যাশা থাকে। আমার ক্ষেত্রেও তাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Shivangi Swaroop Bihar Indian Navy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE