সেই লিফট। — নিজস্ব চিত্র।
প্রায় মাঝ রাতে সপার্ষদ লিফটে আটকে পড়লেন অমিত শাহ। নানা চেষ্টার পর নিরুপায় হয়েই তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআরপিএফ জওয়ানরা শাবলের চাড় দিয়ে লিফটের দরজা ভেঙে বের করে আনলেন বিজেপি সভাপতিকে। দলের ওজনদার নেতা অমিত মানুষ হিসেবেও বেশ ভারিক্কি। আবার রাজ্যটা বিহার ও মুখ্যমন্ত্রীর নাম নীতীশ কুমার। তাই কিছু মস্করার সঙ্গে শোনা যাচ্ছে ষড়যন্ত্রের তত্ত্বও।
গত কালই পটনায় আসেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। জেড-প্লাস সুরক্ষার অধিকারী হওয়ায় পটনায় রাজ্য অতিথিশালায় তাঁর থাকার ব্যবস্থা হয়। দোতলায় ঘর দেওয়া হয়েছিল বিজেপি সভাপতিকে। আসন্ন বিহার নির্বাচনের আসন বণ্টন নিয়ে বিজেপি ও শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে সারা দিন ধরেই তিনি বৈঠক করেন। রাতে অতিথিশালাতেই ফের আলোচনায় বসেন।
বৈঠক শেষে রাত প্রায় ১১টা ৪০ মিনিট নাগাদ দোতলায় উঠছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ ভূপেন্দ্র যাদব-সব আরও তিন নেতা। সেই সময়ে কোনও লিফট অপারেটর বা অতিথিশালার কোনও কর্মী কাছাকাছি ছিলেন না।
বিজেপি রাজ্য সভাপতি মঙ্গল পাণ্ডে বলেন, ‘‘নিজের ঘরে যাওয়ার জন্য লিফটে ওঠেন অমিত শাহ। আচমকাই মাঝপথে লিফট বন্ধ হয়ে যায়।’’ মঙ্গল জানিয়েছেন, লিফটের মধ্যে মোবাইলের টাওয়ারও ছিল না। কোনও রকমে এক বার কথা বলার সুযোগ পেয়ে আটকে যাওয়ার কথা তাঁরা জানান। তার পরেই দলের বাকি নেতারা ঘটনাস্থলে পৌঁছন। এর পরে অতিথিশালার কর্মী-অফিসারদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। তবে তাঁরা কেউই সে সময়ে হাজির ছিলেন না। অমিত শাহের নিরাপত্তার জন্য থাকা সিআরপিএফ জওয়ানেরা শাবল জোগাড় করে লিফটের দরজা ভেঙে পাঁচ নেতাকে বের করেন। বিজেপি নেতাদের অভিযোগ, প্রায় ৪০ মিনিট বিজেপি সভাপতি লিফটের মধ্যে আটকে ছিলেন।
গোটা ঘটনায় নিজেদের মুখ বাঁচাতে তৎপর হয়ে ওঠে নীতীশ কুমার সরকার। রাজ্যের ক্যাবিনেট সচিব শিশির সিংহ বলেন, ‘‘লিফটের কর্মী সাড়ে দশটা পর্যন্ত ছিলেন। তারপরে বাড়ি চলে যান। আধুনিক প্রযুক্তির লিফট রয়েছে গেস্ট হাউসে। তার ওজন বহন করার ক্ষমতা ৩৪০ কেজি। তার চেয়ে বেশি ওজন হওয়ার জন্য মাঝ পথে তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। তদন্ত হবে।’’
লিফট নির্মাণকারী সংস্থার এক কর্তা বলেন, ‘‘খবর পেয়ে আমরা সকালেই লিফটের পরিস্থিতি দেখতে গিয়েছিলাম। কোনও ভুল সুইচ টিপে দেওয়ার ফলে মাঝপথে লিফট থেমে যেতে পারে। তবে কল বাটন টিপলে নির্দিষ্ট ফ্লোরে পৌঁছে যেত।’’
এক বার ঠিক এ ভাবেই দিল্লিতে লিফটে আটকে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। ঘটনাচক্রে সে বারও রক্ষাকর্তা ছিল সিআরপিএফই। তাঁদেরই দফতরের লিফটের ছাদ খুলে জওয়ানেরা উদ্ধার করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে।
বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ সি পি ঠাকুর বলেন, ‘‘লিফট আটকে যাওয়ার পিছনে ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। ঘটনার তদন্ত হওয়া উচিত।’’ জবাবে জেডিইউ নেতা অজয় আলোকের জবাব, ‘‘লিফট জানত না অমিত শাহ চড়েছেন। তাহলে মাঝ পথে থেমে যেত না।’’
টিপ্পনি কাটতে ছাড়েননি লালুপ্রসাদ। তাঁর কথায়, ‘‘এত মোটা মানুষের লিফটে ওঠা ঠিক হয়নি। বিহারের লিফট হচ্ছে ছোট-ছোট।’’
তবে পরিস্থিতি গুরুতর হতে পারত বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। এমনিতেই অমিত শাহের কিছু শারীরিক সমস্যা রয়েছে। লিফটে আটকে যাওয়ায় তাঁর অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভবনা ছিল। পটনার চিকিৎসক দিবাকর তেজস্বী বলেন, ‘‘লিফটে আটকে যাওয়ায় হৃদযন্ত্রের উপর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া অক্সিজেন যাওয়ার ব্যবস্থায় সমস্যা তৈরি হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy