হিমাচলে বিজেপি-র হোর্ডিং-এ গুড়িয়ার নাম। —নিজস্ব চিত্র।
পুরনো চাল। আর সেই চাল যাতে ভাতে বাড়ে সেই লক্ষ্যেই হিমাচলে বিজেপি-র সেই পুরনো ক্যাচ লাইন— অব কি বার, ভাজপা সরকার। তবে, সঙ্গে কংগ্রেসকে ঠুকতে তাতে জুড়ে গিয়েছে গুড়িয়ার নাম।
এমনিতে শান্তশিষ্ট স্বভাবের নিরিখে উপরের দিকেই নাম রয়েছে হিমাচল প্রদেশের। কিন্তু, গত জুলাইতে শিমলা থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরের কোটখাইতে গুড়িয়া (নাম পরিবর্তিত) নামে এক কিশোরীকে ধর্ষণের পর খুন করা হয়। তিন দিন পর স্কুলফেরত ওই কিশোরীর ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। এর পরেই রাজ্য রাজনীতিতে ধুন্ধুমার বেধে যায়। পরিস্থিতি সামলাতে মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংহ সিবিআই তদন্তের জন্য দরবার করেন হাইকোর্টের কাছে। তদন্ত চলছে। রাজ্যের বেশ কয়েক জন পুলিশকর্তা-কর্মী জেলে। বিজেপি এই নির্বাচনে সেই গুড়িয়া-কাণ্ডকেই হাতিয়ার করে প্রচার করেছে— ‘অব কি বার, গুড়িয়া মাঙ্গে সুরক্ষা কা অধিকার।’
শিমলা থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে হামিরপুর। সেখান থেকেই নির্বাচনে লড়ছেন বিজেপি-র মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী প্রেমকুমার ধুমল। ভোটের আগের দিন বিকালেও তাঁর মুখে গুড়িয়া-কথা। তিনি বললেন, ‘‘দেখুন, দেবভূমির ইতিহাসে এমন ভয়ানক ঘটনা ঘটেনি। এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে যে ভাবে খুন করা হয়েছিল— তার পরেও বলবেন রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা রয়েছে?’’ তিনি জিতলে আগে নারী সুরক্ষার উপর জোর দেবেন বলেই দাবি করলেন ধুমল।
কংগ্রেস যদিও গুড়িয়া-প্রভাব অস্বীকার করছে। বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংহ নির্বাচনের আগের দিন বললেন, ‘‘গুড়িয়ার ঘটনা অত্যন্ত ভয়ানক। তবে, দোষীদের ধরতে রাজ্য সরকার বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট করেনি। বিশেষ তদন্তকারী দলের হাত থেকে দায়িত্ব সিবিআইয়ের হাতে সঁপে দেওয়া হয়েছে। মানুষ গোটাটাই দেখেছে। কাজেই প্রভাবের কোনও জায়গা নেই।’’
আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নিজেকে দশে আট দেব: আনন্দবাজারকে বীরভদ্র
আরও পড়ুন: ভোট উত্তাপের চাদরে গা মুড়েছে কনকনে হিমাচল
ভোটের ১২ ঘণ্টা আগে দেখা গেল, হিমাচল প্রদেশের মানুষ কিন্তু প্রায় আড়াআড়ি ভাগ হয়ে গিয়েছে। এক দল মোদী সরকারের নোটবন্দি থেকে জিএসটি— সব কিছুর নেতিবাচক দিক নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত। অন্য দল বীরভদ্রের রাজধর্মকে কাঠগড়ায় তুলে আগামী কাল ভোট দিতে যাবে। পাল্লা কোন দিকে ভারী? শিমলার চক্কর বাসস্টপে দাঁড়িয়ে হিনা শর্মা বললেন, ‘‘দেখুন, রাজ্যে উন্নয়ন বলতে যা হয়েছে, তাতে সাধারণ মানুষ খুশি নয়। বেকারি এক ফোঁটাও কমেনি। জলের সমস্যা আজও রয়েছে। তা হলে ভোট কাকে দেব বলুন তো!’’ পাশাপাশি তাঁর প্রশ্ন, ‘‘গুড়িয়ার পর আমরা আর নিজেদের তেমন একটা সুরক্ষিত ভাবতে পারছি না যে!’’
আবার ঠিক উল্টো সুর শোনা গেল বিবেক রানার মুখে। হাইকোর্টের সামনে তাঁর সঙ্গে যখন দেখা হল, তখন শিমলায় সূর্য পাটে বসতে যাচ্ছে। বললেন, ‘‘রাজাসাব গোটা রাজ্যে উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দিয়েছেন। কাজের জন্য আজকাল আর তেমন ভাবে বাইরে যেতে হয় না। বিজেপি তো সাধারণ মানুষের বিপক্ষে। না হলে নোটবন্দি করে!’’ আর গুড়িয়া? বিবেকের কথায়, ‘‘ওটা একটা ভয়ানক ঘটনা। তবে, এমনটা তো বার বার হয় না। আর ওই ঘটনায় কংগ্রেস কী করতে পারত! যা করার রাজাসাব করেছেন।’’
নিতিন বামটা যেমন মনে করছেন, হিমাচলের মানুষ শিক্ষিত। তাঁরা সব খবর রাখেন। বোঝেন। কাজেই নিজেদের ভালটা বুঝতে তাঁরা সঠিক পদক্ষেপই করবেন। তাঁর কথায় ‘‘মানুষ সচেতন বলেই তো পাঁচ বছর অন্তর এখানে সরকারের মুখবদল হয়।’’ এ বারও কি বদল হবে? কংগ্রেস থেকে বিজেপি-র হাতে চলে যাবে রাজ্যের শাসন? এ বার হেসেই ফেললেন নিতিন। বললেন, ‘‘১৮ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করে যান। আমরা কী ভাবছি, সেটা তো সে দিনই দেখা যাবে।’’
হিমাচল কী ভাবছে? আসলে কোনও একটা ভাবনা আর এ বার ভাবছে না দেবভূমি। অনেকগুলো ভাবনা একত্রিত করেই বৃহস্পতিবার ইভিএমের বোতামে আঙুল ছোঁয়াবে হিমাচল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy