Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

হিমন্তের পরশমণি, মেঘালয় বিজেপির

বিপত্তারণ হিমন্ত যখন যে দলের হয়ে ব্যাট ধরেছেন, জয় ‘ম্যানেজ’ করেছে সেই দলই। কংগ্রেসে থাকাকালীন ২০১০ সালের রাজ্যসভার ভোটে বিজেপি ও এআইইউডিএফের ঘর ভাঙিয়ে কংগ্রেসের দুই প্রার্থীকেই জিতিয়ে আনেন হিমন্ত।

হিমন্তবিশ্ব শর্মা।

হিমন্তবিশ্ব শর্মা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৮ ০৩:৩৮
Share: Save:

ত্রিপুরায় বাম দূর্গ ধসানোর ১২ ঘণ্টার মধ্যে কংগ্রেসের হাত থেকে মেঘালয় কেড়ে নিলেন নেডা জোটের মুখ্য আহ্বায়ক, অসমের অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। চার জন কেন্দ্রীয় নেতাকে শিলং পাঠিয়েও রাজ্য ধরে রাখতে পারল না কংগ্রেস। উত্তর-পূর্বে শুধুমাত্র মিজোরামে তাদের অস্তিত্ব টিকে রইল।

বিপত্তারণ হিমন্ত যখন যে দলের হয়ে ব্যাট ধরেছেন, জয় ‘ম্যানেজ’ করেছে সেই দলই। কংগ্রেসে থাকাকালীন ২০১০ সালের রাজ্যসভার ভোটে বিজেপি ও এআইইউডিএফের ঘর ভাঙিয়ে কংগ্রেসের দুই প্রার্থীকেই জিতিয়ে আনেন হিমন্ত। সম্প্রতি সেই ঘোড়া কেনাবেচার কথা স্বীকারও করেছেন তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ।

এর পর কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া হিমন্ত নিজের সঙ্গে কংগ্রেসের ১০ বিধায়ককেও নিয়ে যান। ২০১৬ সালে মোদী ঝড়ের পাশাপাশি হিমন্ত-ঝড়েও ভূপতিত হয় রাজ্যে দেড় দশক শাসন চালানো কংগ্রেস। শপথগ্রহণের দিনেই কংগ্রেস মুক্ত উত্তর-পূর্ব গড়ার লক্ষ্যে হিমন্তকে মাথায় রেখে ‘নর্থ ইস্ট ডেমোক্রাটিক অ্যালায়েন্স’ বা ‘নেডা’ জোট তৈরি করেন বিজেপির জাতীয় সভাপতি অমিত শাহ।

গত বছর মণিপুরে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হয়েছিল ১৫ বছর ধরে রাজ্য শাসন করা কংগ্রেস। কিন্তু ফের ‘হিমন্ত ম্যাজিক’। কংগ্রেসের ঘর ভেঙে, তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ককে টেনে এনপিপি-বিজেপি জোট সরকার গড়েন হিমন্ত। এ বছর হিমন্ত বেছেছিলেন ত্রিপুরার ভার। ত্রিপুরার দুর্ভেদ্য বাম দূর্গে বিজেপির জয়ের সম্ভাবনা কেউ দেখেনি। কিন্তু প্রথমে উপজাতি ভোট টানার জন্য উপজাতি দলের সঙ্গে জোট গড়েন হিমন্ত। তার পর তিনি ও সুনীল দেওধরের মতো নেতারা টানা রাজ্যের সব প্রান্তে প্রচার চালিয়ে যান। তৃণমূল স্তর থেকে শক্তি বাড়াতে থাকে বিজেপি। বাম নেতারা যখন বুঝতে শুরু করলেন পায়ের নীচে মাটি সরছে, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। ত্রিপুরার মতো রাজ্যে শুধু টাকা ছড়িয়ে ভোটে জেতা যে সম্ভব না, মানছেন বাম নেতারাও।

ত্রিপুরা হাতে আসার পরেই মেঘালয় দখলের ভার দিয়ে হিমন্তকে শিলং পাঠান অমিত শাহ। সেখানেও অভাবনীয় সাফল্য। ততটাই প্রকট কংগ্রেসের ব্যর্থতা। সভাপতি ‘ছুটি’তে। কমলনাথ, আহমেদ পটেল-সহ চার তাবড় নেতা আগে থেকে শিলংয়ে হাজির থেকেও অন্য দলগুলির মিত্রতা টানতে অক্ষম। নাগাল্যান্ডেও গত তিন বারের ভোটে কংগ্রেস ২৩, ৮ ও শূন্য আসন পেল। কিন্তু ঘুম ভাঙেনি কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতাদের। গত পাঁচ বছরে নাগাল্যান্ডে মোটেই মন দেননি তাঁরা। হতাশ কংগ্রেস হিমন্তের বিরুদ্ধে ঘোড়া কেনাবেচার অভিযোগ তুলছে। অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেন, “যে দল টাকা খরচ করবে তারাই সরকার গড়বে। আমাদের টাকা ছিল না তাই সরকার গড়তে পারিনি। হিমন্ত বরাবরের দুর্নীতিগ্রস্ত।”

কিন্তু হিমন্ত অভিযোগ উড়িয়ে আজ বলেন, “ঘোড়া কেনাবেচা করলে কংগ্রেস করবে। ওদের চার জন বাঘা নেতা ঘাঁটি গেড়েছিলেন মেঘালয়ে। আমি ওঁদের সামনে ইঁদুর। অবশ্য আমি ভূমিপুত্র। রাজ্যপাল কংগ্রেসকে চা খেতে ডাকুন আপত্তি নেই। কিন্তু সরকার আমরাই গড়ছি। ওই নেতারা কাল সকালেই দিল্লি ফিরে যান। জনাদেশ মেনে বিরোধী আসনে বসার প্রস্তুতি নিক কংগ্রেস।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE