তখনও বেঁচে আলিমুদ্দিন।
হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কঠোর সমালোচনা করেছিলেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী। আর তাতেই বোধহয় কিছুটা নড়েচড়ে বসল প্রশাসন। গোরক্ষার নামে খুনের ঘটনার সাম্প্রতিকতম শিকার আলিমুদ্দিন হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার করা হল ঝাড়খণ্ডের এক বিজেপি নেতাকে। ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে মূল অভিযুক্ত-সহ আট জনকে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।
গা়ড়িতে গো-মাংস রয়েছে, এই অভিযোগে গত ২৯ জুন আসগর আলি ওরফে আলিমুদ্দিনকে (৫০) পিটিয়ে মারার অভিযোগ ওঠে ঝাড়খণ্ডের রামগড় জেলার স্বঘোষিত গোরক্ষকদের বিরুদ্ধে। নয়াসরাই ব্লকের মনুয়া গ্রামের বাসিন্দা রামগড়ের চিতরপুর বাজার থেকে মাংস কিনে গ্রামে ফিরছিলেন। শহরের মধ্যেই বাজারটাঁড় নামে একটি জায়গায় তাঁর গাড়িটিকে দাঁড় করায় কয়েক জন যুবক। গাড়িতে গো-মাংস রয়েছে এই অভিযোগ তুলে আলিমুদ্দিনকে টেনে নামিয়ে লাঠি দিয়ে মারতে শুরু করে ওই যুবকেরা। তাঁর গাড়িতে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। গুরুতর জখম অবস্থায় আলিমুদ্দিনকে উদ্ধার করে প্রথমে রামগড় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে রাঁচীর রিমস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। এই ঘটনার পরই এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। পরের দিনই কয়েক জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মূল অভিযুক্ত ছোট্টু রানা রামগড় আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পুলিশ জানিয়েছে, সে দিনের ঘটনায় যে ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছিল তাতে দেখা গিয়েছে এই ছোট্টুই লাঠি দিয়ে বার বার আলিমুদ্দিনকে আঘাত করছেন।
আরও পড়ুন: গাড়িতে গো-মাংস? ঝাড়খণ্ডে পিটিয়ে খুন প্রৌঢ়কে
ছোট্টু রানা ধরা পড়লেও ঘটনায় জড়িত বিজেপি নেতাদের পুলিশ আড়াল করছে বলে অভিযোগ করছিলেন স্থানীয়রা। অবশেষে শনিবার ওই ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে মারার অভিযোগে ঝাড়খণ্ডের রামগড় থেকে নিত্যানন্দ মাহাতো নামে এক বিজেপি নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। নিত্যানন্দ রামগড় জেলা বিজেপির মিডিয়া-ইন-চার্জ। পুলিশ জানিয়েছে, ওই দিন বিজেপির আর এক নেতা পাপ্পু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে নিত্যানন্দ ও তাঁর দুই সঙ্গীকে গ্রেফতার করা হয়। যদিও গ্রেফতারির পর নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন নিত্যানন্দ। পুলিশের দাবি, ওই ভিডিওতেই দেখা গিয়েছে বিজেপি নেতা নিত্যানন্দ মাহাতো মানুষকে উস্কানি দিচ্ছেন। আলিমনুদ্দিনকে গাড়ি থেকে টেনে নামিয়ে আনতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। শীর্ষ পুলিশ আধিকারিক আর কে মালিক এই ঘটনাকে ‘পূর্ব পরিকল্পিত’ বলেই বর্ণনা করেছেন। তাঁর দাবি, হামলাকারীরা আগে থেকেই অপেক্ষা করছিল আলিমুদ্দিনের জন্য। গত শুক্রবারই এই ঘটনার তদন্তের জন্য রামগড়ের ডেপুটি পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়। এই ঘটনায় মোট ১৩ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। অভিযুক্তদের মধ্যে ৮ জনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনার পর দু’দিন কেটে গেলেও বেশ কয়েকটি সংবেদশীল এলাকায় এখনও পুলিশি টহল চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy