মোটরবাইকে লাগানো ছোট্ট একটা প্ল্যাকার্ড। ‘শবরীমালায় মহিলাদের প্রবেশ মহাপাপ’। এই বাইক নিয়েই শবরীমালার পাহাড়ি পথ থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন আয়াপ্পা-ভক্ত শিবদাসন। খাদের ধারে তাঁর দেহ মিলতেই বন্ধের ডাক দিয়েছিল বিজেপি। তাদের অভিযোগ, শবরীমালায় মহিলাদের প্রবেশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে পুলিশের মারে মৃত্যু হয়েছে ওই ভক্তের। কিন্তু তদন্ত এগোতেই বাতাস হারাল বিজেপির পালে!
শবরীমালা-বিতর্কে কাসারগোড় থেকে রথযাত্রা শুরুর আগে কেরলে আপাতত জোড়া অস্বস্তিতে বিজেপি। প্রথমত, দলের রাজ্য সভাপতি পি শ্রীধরন পিল্লাইয়ের ভাষণের অডিয়ো ক্লিপ প্রকাশ্যে এসেছে, যেখানে তাঁকে বলতে শোনা যাচ্ছে— এই ‘সুবর্ণ সুযোগ’ কাজে লাগাতে হবে। বিজেপির কর্মসূচি (এজেন্ডা) মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেও শবরীমালায় মহিলাদের প্রবেশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ইন্ধন দিয়ে গেরুয়া শিবিরই উত্তেজনা তৈরি করতে চাইছে, এই ‘পরিকল্পনা’ পিল্লাইয়ের কথায় ফাঁস হয়ে গিয়েছে বলে সরব হয়েছে সিপিএম এবং কংগ্রেস। আর তারই পাশাপাশি আয়াপ্পা-ভক্তের রহস্য-মৃত্যুকে পুলিশি অত্যাচারের পরিণাম বলে অভিযোগ দাঁড় করানোর মতো তথ্য-প্রমাণ মেলেনি। এ সবের জেরেই কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের হুঁশিয়ারি, ‘‘শবরীমালাকে অশান্ত করার জন্য যারা নানা রকম ছক কষছে, তাদের কোনও ভাবেই সফল হতে দেওয়া যাবে না!’’
প্রশ্ন হচ্ছে, কী হয়েছিল শিবদাসনের? পেশায় লটারি বিক্রেতা, বছরষাটেকের ওই ব্যক্তি প্রতি মালয়ালম মাসের গোড়ায় এক বার করে শবরীমালায় যেতেন। এ বার বিতর্কের সময়ে একই পথে গিয়ে আর ফেরেননি। গত সপ্তাহে তাঁর বাইক পাওয়া যায় খাদের ধারে গাছে আটকে থাকা অবস্থায়। তাঁর দেহ পড়েছিল দু’টি পাথরের মাঝে। কিছু দূরে ছিল ছেঁড়াখোঁড়া পোশাক। এক সাফাইকর্মী বাইক দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দিয়েছিলেন। দেহ উদ্ধার হতেই পাতানামতিট্টা জেলায় বন্ধ ডেকেছিল বিজেপি। কিন্তু এখন পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, নেহাত দুর্ঘটনা বা হাতির হানায় মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে শিবদাসনের। ময়না তদন্তে দেখা গিয়েছে, পড়ে গিয়ে মাথায় জোরালো আঘাত ছিল মৃতের। তাঁর পরিবারও স্বীকার করেছে, শবরীমালা যাওয়ার রাস্তায় পুলিশের লাঠি চালানোর ঘটনার পরে শিবদাসন রওনা হয়েছিলেন।
তদন্তে জানা যাচ্ছে, বিক্ষোভ সামলাতে পুলিশ লাঠি চালিয়েছিল ১৬ ও ১৭ অক্টোবর। শিবদাসন বাড়ি থেকে বেরোন ১৮ তারিখ। তাঁর নিজের মোবাইল ছিল না। এক তামিল ভক্তের ফোন থেকে পরের দিন তিনি বাড়িতে জানিয়েছিলেন, তাঁর ‘আয়াপ্পা দর্শন’ হয়ে গিয়েছে। এর পরেও না ফেরায় শিবদাসনের ছেলে নিখোঁজ ডায়েরি করেন ২৫ অক্টোবর। পুলিশের বক্তব্য, বৃষ্টির মধ্যে বাইক দুর্ঘটনায় তিনি সম্ভবত খাদে পড়ে গিয়েছিলেন। অথবা হাতির হানার শিকার হয়েছেন। মৃতদেহ ওখানেই কয়েক দিন পড়ে থাকায় জঙ্গলের জানোয়ারেরা পোশাক খুবলে নিয়েছিল। পাতানামতিট্টা জেলার পুলিশ সুপার সি নারায়ণনের বক্তব্য, ‘‘মিথ্যা প্রচার করে যারা উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধেও এ বার কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে।’’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি পিল্লাই অবশ্য বলছেন, ‘‘রহস্যজনক ঘটনা বলেই আমরা নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করেছিলাম। আর আমার ভাষণে যে ‘এজেন্ডা’র কথা বলা আছে, সেটা মানুষের পাশে দাঁড়ানো অর্থে। আইনজীবী হিসেবে শবরীমালার মন্দির কর্তৃপক্ষকে কিছু পরামর্শও দিয়েছিলাম। আমাদের সব কথারই বিকৃত ব্যাখ্যা হচ্ছে এখন!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy