রাহুল গাঁধীর উপর গোয়েন্দাগিরির অভিযোগের জবাব দিতে রাজীব-হত্যার প্রসঙ্গ টেনে এনে নতুন বিতর্ক তৈরি করল সরকার।
রাহুল গাঁধী এখনও অজ্ঞাতবাসে। তার মধ্যেই তাঁর বাড়িতে পুলিশ গিয়ে চুলের রং, বন্ধু-বান্ধবের ঠিকুজি থেকে জুতোর মাপ চেয়ে বসায় খেপে গিয়েছে কংগ্রেস। সংসদের উভয় কক্ষই আজ এ নিয়ে উত্তাল হয়। শুধু কংগ্রেস নয়, অন্য বিরোধী দলও সরকারকে চেপে ধরে। শুধু বিরোধী দলের ফোনে আড়ি পাতা নয়, খোদ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের উপরেও যে ভাবে গোয়েন্দাগিরি করা হয়, সে নিয়ে সরব হয় বিরোধীরা। সরকারের হয়ে হাল ধরার চেষ্টা করেন অরুণ জেটলি। অতীতের নানা তথ্য পেশ করে তিনি বলেন, বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতাদের বিবরণী নেওয়ার কাজ অনেক দিন ধরেই করে আসছে পুলিশ। নরেন্দ্র মোদী, অটলবিহারী বাজপেয়ী, অমিত শাহ থেকে সনিয়া গাঁধী কেউই বাদ যাননি এই তালিকা থেকে।
কিন্তু বিরোধীদের শান্ত করা তো দূরের কথা, আরও বিতর্ক তৈরি হয়, যখন রাহুলের জুতোর মাপ নেওয়ার ব্যাখ্যা হিসেবে জেটলি প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধী-হত্যার প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তিনি বলেন, বিস্ফোরণে রাজীবের দেহ এতটাই ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গিয়েছিল যে, শুধু জুতো দিয়েই তা চেনা গিয়েছিল। জেটলির দাবি, অনেক সময় রাজনৈতিক নেতারা অন্য রাজ্যে সফর করেন। সেখানে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে পুলিশকে যাতে সেই নেতার বিষয়ে যাবতীয় তথ্য দেওয়া যায়, সেই জন্যই এই প্রক্রিয়া। আজ নয়, এই প্রক্রিয়া স্বাধীনতার পর থেকেই চলছে। সুষমা স্বরাজ কী রংয়ের টিপ পরেন, অটলবিহারীর গোঁফ আছে কি না, অতীতে এমন তথ্যও লিপিবদ্ধ করেছে পুলিশ। সনিয়া গাঁধীর কাছ থেকেও ১৯৯৮, ২০০৪ ও ২০১২ সালে এই ধরনের তথ্য নেওয়া হয়েছে।
জেটলির এই কথায় আরও খেপে যান কংগ্রেস নেতারা। তাঁরা দাবি করেন, জেটলি ভুল তথ্য দিয়ে সংসদকে বিভ্রান্ত করছেন। কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, “সনিয়া বা রাহুল বা তাঁদের সচিবরা কখনও এ রকম ফর্ম ভর্তি করেননি।” অভিষেকের মতে, বিরোধী তো বটেই, নিজের দলের নেতাদের পিছনেও চর লাগিয়ে দেওয়া মোদীর পুরনো অভ্যাস। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনও তিনি এই সব করতেন। এখন প্রধানমন্ত্রী হয়েও সেটাই করছেন। তাই শুধু বিরোধীরাই নন, খোদ বিজেপি বা বিজেপির বন্ধু দলের নেতারাও সর্বদা অস্বস্তিতে থাকেন।
কংগ্রেসের আরও অভিযোগ, রাহুল গাঁধীর বাসভবনে পুলিশ কবে গিয়েছিল তা নিয়েও বিভ্রান্ত করছে সরকার। আসল ঘটনা হল, ১২ নম্বর তুঘলক লেনের বাড়িতে পুলিশ গত ১৫ দিনে তিন বার গিয়েছিল। প্রথম বার ২ মার্চ সামসের সিংহ নামে পুলিশের এক অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টর রাহুলের বাড়িতে ঢুকে ঘুর-ঘুর করছিলেন। কিন্তু তাঁর কাছে কোনও ফর্ম ছিল না। একে-তাকে তিনি নানা প্রশ্ন শুরু করায় সন্দেহ জাগে। পরের বার ১২ মার্চ তুঘলক রোড থানার দু’জন কনস্টেবল যান রাহুলের বাড়িতে। তার পর ১৪ মার্চ রাহুলের বাড়ি যান পুলিশের দুই কর্তা।
অভিষেকের কথায়, “পুলিশ যদি কোনও সাংসদ বা রাজনৈতিক নেতার কাছে ফর্ম ভর্তি করাতে যায়, তা হলে আগাম সময় চেয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু রাহুলের কাছে কখনওই সময় চাওয়া হয়নি। যে ভাবে বাড়িতে পুলিশ গিয়ে প্রশ্ন করছে তা-ও সন্দেহজনক। এ সব থেকেই স্পষ্ট, সরকারি ফর্ম ভর্তি করতে নয়, রাহুলের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতেই গিয়েছিল পুলিশ।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy