Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

অটল-আবেগে মাতলে বিপদ, বন্যাত্রাণে মনোযোগ বিজেপি-র

দলীয় সূত্র বলছে, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তীসগঢ়-সহ বেশ ক’টি রাজ্যে ভোট রয়েছে সামনে। অটলের মূত্যুর পরে দল প্রথমে ভেবেছিল, তাঁর মতো এক জন নেতাকে নিয়ে প্রচার চালালে ভোটে ফায়দা মিলবে।

বাজপেয়ীর শেষযাত্রায় নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।

বাজপেয়ীর শেষযাত্রায় নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৮ ০৪:১০
Share: Save:

অটলবিহারী বাজপেয়ীর মৃত্যুতে সাত দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার। বিজেপি প্রথমে ভেবেছিল, এই সূত্রে প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে প্রচারকে তুঙ্গে নিয়ে যাবে। ভোটবাক্সে সহানুভূতি কুড়িয়ে নেওয়া যাবে তাতে। কিন্তু দু’দিনের মাথায় বিজেপি নেতৃত্বের উপলব্ধি, এতে লাভের চেয়ে ক্ষতিই হচ্ছে বেশি। তাই পিছু হটে বাজপেয়ীর মৃত্যু নিয়ে প্রচারের বাড়াবাড়ি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। কৌশল পাল্টে এখন কেরলে বন্যাত্রাণে মনোযোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও গোটা বিজেপি শিবির।

দলীয় সূত্র বলছে, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তীসগঢ়-সহ বেশ ক’টি রাজ্যে ভোট রয়েছে সামনে। অটলের মূত্যুর পরে দল প্রথমে ভেবেছিল, তাঁর মতো এক জন নেতাকে নিয়ে প্রচার চালালে ভোটে ফায়দা মিলবে। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হয়ে বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আডবাণীর মতো প্রবীণ নেতাদের অপাঙ্‌ক্তেয় করে দিয়েছেন বলে যে অভিযোগ রয়েছে, তা-ও কিছুটা প্রশমিত হবে। কিন্তু বাজপেয়ীকে ঘিরে দু’দিনের প্রচারের পরে বিজেপি নেতারা বুঝতে পারছেন, ফল হচ্ছে উল্টো। কী রকম?

এক, এতে বাজপেয়ীর সহিষ্ণুতা, অনেকের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ও ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তির প্রসঙ্গ টেনেই প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করার নয়া সুযোগ পেয়ে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে চন্দ্রবাবু নায়ডুর মতো ঘোষিত মোদী বিরোধীরা।

দুই, ফি দিন টাকার দাম কমছে। উধাও চাকরি। এই অবস্থায় অটলের আর্থিক সংস্কারকে মাপকাঠি করে মোদীকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে বাড়তি উৎসাহ পাচ্ছেন বিরোধীরা।

তিন, অটলের রাজনৈতিক দর্শনে প্রভাব ছিল জওহরলাল নেহরুর। মোদী ক্ষমতায় এসে সঙ্ঘের বিকল্প ভারতীয় চিন্তাধারা প্রয়োগ করার চেষ্টা করছেন। যা ভারতের চিরাচরিত ধারণার সঙ্গে খাপ খায় না বলে আগে থেকেই সরব ছিলেন বিরোধীরা। এখন বাজপেয়ীকে দল বড় করে তুলে ধরায় কংগ্রেস বলছে, ক্ষমতায় এসে ইস্তক মোদী ঔদ্ধত্য দেখিয়ে যাচ্ছেন। এখন কোণঠাসা হয়ে পড়েই অটলের শরণ নিয়েছেন তিনি। ভাবটা এমন যেন, তিনিই বাজপেয়ীর প্রকৃত উত্তরসূরি!

চার, বাজপেয়ী কট্টরবাদী ছিলেন না। রাম মন্দির বানানোর প্রশ্নে দলের কর্মসমিতির বৈঠকে প্রকাশ্যে আপত্তি জানিয়েছিলেন। তাঁর এই উদারপন্থী ভাবধারার জন্য অনেক শরিক নিয়েও সরকার চালাতে বিশেষ সমস্যায় পড়তে হয়নি তাঁকে। মোদী তাঁর মতো নন, সেটাও তুলে ধরছে বিরোধীরা।

পাঁচ, আপত্তি উঠেছে খোদ সঙ্ঘ পরিবার থেকেও। উদারপন্থী অটল কখনওই তাদের কাছের লোক ছিলেন না। গত কাল অটলের অন্ত্যেষ্টিতে সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবত উপস্থিত থাকলেও, বাজপেয়ীকে ঘিরে এই মাতামাতি আদৌ পছন্দ করছে না সঙ্ঘ। বার্তা দেওয়া হয়েছে, অটল নিয়ে বাড়াবাড়ির প্রয়োজন নেই।

তাই আপাতত বন্যায় মন দিতে চান মোদী, অমিত শাহেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Propaganda Atal Bihari Vajpayee BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE