একশো দিনের মধ্যে কালো টাকা দেশে ফেরানোর সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছে অনেক দিনই। আদালতে সরকারের তরফে ৬২৮টি বিদেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের কথা বলা হলেও সে ব্যাপারে খুব বেশি এগোনো যায়নি। সদ্যসমাপ্ত দিল্লি নির্বাচনের প্রচারে এ নিয়ে বিরোধীদের বিদ্রুপও হজম করতে হয়েছে নরেন্দ্র মোদীর দলকে। তার মধ্যেই সুইস ব্যাঙ্কে ১১৯৫ জন ভারতীয়ের অ্যাকাউন্টে ২৫,৪২০ কোটি টাকা গচ্ছিত রয়েছে বলে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পরে ফের জাতীয় রাজনীতিতে কালো টাকা নিয়ে হইচই শুরু হয়ে গেল।
একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংগঠন ও ফ্রান্সের সংবাদপত্রের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে এ দেশের এক ইংরেজি সংবাদপত্র সোমবার একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। জুরিখের এইচএসবিসি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট মালিকদের সেই তালিকায় নাম রয়েছে ১,১৯৫ জন ভারতীয়ের। যেখানে গচ্ছিত মোট টাকার পরিমাণ ২৫,৪২০ কোটি! এর আগে ফ্রান্স সরকারের কাছ থেকে এইচএসবিসি ব্যাঙ্কে থাকা ৬২৮ জন ভারতীয়ের অ্যাকাউন্টের একটি তালিকা দিল্লির হাতে এসেছিল। নতুন তালিকায় ভারতীয়ের সংখ্যা পুরনো তালিকার প্রায় দ্বিগুণ!
বিষয়টি নিয়ে আলোড়ন শুরু হওয়ায় এ দিন মোদী সরকার বোঝানোর চেষ্টা করেছে, কালো টাকা ফেরাতে তারা বদ্ধপরিকর। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, “গত ছয়-সাত মাস ধরেই কালো টাকা ফেরত আনার সব রকম চেষ্টা চলছে। আগে সরকারের কাছে ৬২৮টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তালিকা ছিল। এর মধ্যে ৩৫০টি অ্যাকাউন্টের তথ্য খতিয়ে দেখে জরিমানা ধার্য করা হয়েছে। বাকিগুলির তথ্য খতিয়ে দেখার কাজ ৩১ মার্চের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। ইতিমধ্যেই ৬০টি ক্ষেত্রে মামলা শুরু হয়েছে। যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা শুরু হয়েছে, তাঁদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। যে সব নতুন তথ্য উঠে এসেছে, সেগুলিও যাচাই করে দেখা হবে।” মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর কালো টাকার তদন্তে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম বি শাহ-র নেতৃত্বে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করেছিল। আজ সিট-প্রধানও জানিয়েছেন, “যে সব নতুন নাম এসেছে, সেগুলিও তদন্তের আওতায় চলে আসবে। তদন্তের গণ্ডি আরও বড় হবে। তবে সিট আগে তথ্যের সত্যতা যাচাই করে দেখবে। তার পরে আইনমাফিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিছু কিছু নাম আগেও ছিল। নতুন কিছু নামও উঠে এসেছে।”
এ দিন জেটলি জানান, গত মাসে দাভোসে তাঁর সঙ্গে সুইৎজারল্যান্ডের অর্থমন্ত্রীর বৈঠক হয়েছে। সুইৎজারল্যান্ড আগে ওই ৬২৮ জনের অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে তথ্য দিতে চাইত না। কারণ তালিকাটি চুরি করা হয়েছিল। কিন্তু তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁরা অনেকেই অ্যাকাউন্টের কথা স্বীকার করায় সেটিকে প্রমাণ হিসেবে ধরে সুইস সরকার অতিরিক্ত তথ্য দিতে রাজি হয়েছে। জেটলির ব্যাখ্যা, “নতুন যে সব নাম সামনে এসেছে, সেগুলি শুধুই এইচএসবিসি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট মালিকদের নামের তালিকা। সব সুইস ব্যাঙ্কের তথ্য এখানে নেই।”
প্রকাশিত নয়া তালিকায় শিল্পপতি মুকেশ অম্বানী, অনিল অম্বানী, নরেশ কুমার গয়াল থেকে শুরু করে ইউপিএ-সরকারের মন্ত্রী পরনীত কৌর, প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ অনু টন্ডন, বাল ঠাকরের পুত্রবধূ স্মিতা ঠাকরে, শিল্পপতি হর্ষ নেওটিয়া-সহ অনেকেরই নাম রয়েছে। তবে বিদেশি ব্যাঙ্কে সকলেরই যে কালো টাকা রয়েছে, তা নয়। এ কথা মেনে নিয়েছে তালিকা প্রকাশকারীরাও। অর্থ মন্ত্রকেরও বক্তব্য, সব অ্যাকাউন্টই বেআইনি বা সেই সব অ্যাকাউন্টে শুধুই কালো টাকা রয়েছে, এমন নয়। তালিকায় অনেক অনাবাসী ভারতীয়র নামও রয়েছে। ব্যবসার কারণেই তাঁরা বিদেশের ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। অনেকে বিদেশে ব্যবসায়িক লেনদেনের জন্য অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। সেই তথ্য তাঁরা আয়কর দফতরকেও দিয়েছেন। তালিকাভুক্ত একাধিক জনের দাবি, তাঁরা নিয়ম মেনে আয়কর মিটিয়েই বিদেশের ওই ব্যাঙ্কে টাকা রেখেছেন। হর্ষ সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, ওই অ্যাকাউন্ট তাঁর প্রয়াত পিতা খুলেছিলেন। এ ব্যাপারে কোনও দায় যদি তাঁর উপরে বর্তায়, তবে তিনি তা মিটিয়ে দিতে প্রস্তুত। আয়কর দফতরকে এ কথা জানিয়েও দিয়েছেন হর্ষ। আরও অনেকেই এই কথা বলেছেন।
স্বাভাবিক ভাবেই বিষয়টি নিয়ে এ দিন হইচই শুরু হয়ে যায়। তাঁদের দলের প্রাক্তন মন্ত্রী-সাংসদদের নাম উঠে এলেও কংগ্রেস নেতারা আজ বিজেপিকে বিঁধতেই বেশি ব্যস্ত ছিলেন! দলের নেতা মণীশ তিওয়ারির কথায়, “মোদী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কালো টাকা ফেরত এলে দেশের সব নাগরিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে জমা পড়বে। সেই টাকা কোথায় গেল?” সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে বিরোধী নেতারাও একই প্রশ্ন তুলেছিলেন। দিল্লি ভোটের প্রচারেও এ নিয়ে বিজেপিকে তীব্র বিদ্রুপ করেন অরবিন্দ কেজরীবাল-সহ বিরোধী নেতারা। যার ভিত্তিতে আসরে নেমে খোদ বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ জানান, প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা জমা দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি মোদী দিয়েছিলেন, তা নেহাতই কথার কথা! এর পরে বিরোধীদের সুর আরও চড়া হয়। নয়া তালিকা সামনে আসার পরে বাজেট অধিবেশনেও এ নিয়ে একজোট হয়ে সরকারকে চেপে ধরার পরিকল্পনা করছে বিরোধীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy