লখনউগামী শতাব্দী এক্সপ্রেস নয়াদিল্লি থেকে ছেড়েছে কিছু ক্ষণ আগে। আচমকা গাজিয়াবাদে থেমে যায় ট্রেনটি। যাত্রীরা প্রথমে ভেবেছিলেন, গাঢ় কুয়াশায় থেমে গিয়েছে ট্রেন। কিন্তু দরজা দিয়ে মুখ বাড়াতেই দেখা গেল, কয়েকশো সশস্ত্র পুলিশকর্মী ট্রেনটিকে ঘিরে ফেলেছেন। কী হয়েছে, বুঝতে না-পেরে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তত ক্ষণে পুলিশকর্মীদের অনেকেই কামরায় ঢুকে যাত্রীদের বলতে শুরু করেছেন, ‘‘তাড়াতাড়ি নেমে পড়ুন। তল্লাশি চালাতে হবে।’ হুড়োহুড়ি করে নেমে পড়েন যাত্রীরা।
ঘটনাটি রবিবার সকাল ৬টার। যাত্রীরা নেমে যাওয়ার পরে শুরু হয় ‘স্নিফার ডগ’ নিয়ে তল্লাশি। যাত্রীরা তত ক্ষণে জেনে গিয়েছেন, ট্রেনে বোমা রাখা আছে বলে সকালেই মুম্বই পুলিশের কাছে একটি ‘ই-মেল’ এসেছে। তারাই ঘটনাটি জানিয়েছে দিল্লি জিআরপি, দিল্লি পুলিশ এবং আরপিএফ-কে। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালিয়েও অবশ্য কোনও বোমা পাওয়া যায়নি। সকাল ৮টা নাগাদ ট্রেনটি ফের গন্তব্যে রওনা হয়।
রেল বোর্ড সূত্রের খবর, পাঠানকোটে জঙ্গি হামলার মধ্যেই এই ‘ই-মেল’ আসায় নড়েচড়ে বসে স্বরাষ্ট্র ও রেল মন্ত্রক। নির্দেশ দেওয়া হয়, শুধু দিল্লি নয়, একই সঙ্গে তল্লাশি চালাতে হবে দেশের সব বড় স্টেশনে। জারি করা হয় বিশেষ সতর্কতা। তার পরেই গোটা দেশে প্রায় সব বড় রেল স্টেশন ও সংলগ্ন এলাকায় নামানো হয় রেল পুলিশ ও আরপিএফের বিশেষ বাহিনী। স্বরাষ্ট্র দফতরের নির্দেশ অনুযায়ী এখন কিছু দিন ধরে সব বড় স্টেশনেই বিশেষ তল্লাশি চালাবে নিরাপত্তা বাহিনী। শুধু রেল স্টেশন নয়, বিমানবন্দরেও নিরাপত্তা বাড়ানো হচ্ছে। রবিবার কলকাতা বিমানবন্দরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফের সঙ্গে এনএসজি কম্যান্ডোরাও মহড়া দেন দিনভর।
রেলের নিরাপত্তা দফতর সূত্রের খবর, এ দিনের ঘটনার পরে প্রতিটি বড় স্টেশনেই আরপিএফের সশস্ত্র জওয়ানের সংখ্যা বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা চালু রাখতে বলা হয়েছে বিশেষ কন্ট্রোল রুম ও সিসিটিভি কন্ট্রোল রুম। বড় বড় এক্সপ্রেস ট্রেনকেও মাঝপথে থামিয়ে তল্লাশি চালাতে হবে। রেলের সুরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে রাজ্যের বিশেষ গোয়েন্দা বিভাগের সমন্বয় রেখে নজরদারি চালাতে বলা হয়েছে।
কী অবস্থা হাওড়া শিয়ালদহ-সহ এ রাজ্যের বড় বড় স্টেশনের? মেট্রোর পরিস্থিতিই বা কেমন?
হাওড়া, শিয়ালদহ, কলকাতা স্টেশনেও এ দিন সকাল থেকে সুরক্ষা বাড়ানো হয়েছে বলে পূর্ব রেলের কর্তাদের দাবি। ওই রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, ‘‘বোর্ডের নির্দেশে এ দিন সকাল থেকেই হাওড়া, শিয়ালদহ ও কলকাতায় অতিরিক্ত আরপিএফ নামানো হয়েছে।’’ ছাড়ার আগে এবং মাঝপথে রাজধানী বা দুরন্তের পাশাপাশি বিশেষ ট্রেন থামিয়ে স্নিফার ডগ ও বম্ব স্কোয়াড তল্লাশি চালাচ্ছে বলে জানান মহাপাত্র।
রেলকর্তারা এমন দাবি করলেও যাত্রীদের বক্তব্য, রাজধানী বা দুরন্ত ছাড়া অন্যান্য ট্রেনে নিরাপত্তার তেমন কোনও বাড়তি বন্দোবস্ত দেখা যাচ্ছে না। উল্টে বিভিন্ন স্টেশনে যে-সব লাগেজ স্ক্যানার ছিল, তার বেশ কয়েকটি খারাপ হয়ে যাওয়ায় বেশির ভাগ মালপত্র পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। একই অবস্থা মেট্রো স্টেশনগুলিতেও। বেশির ভাগ স্টেশনেই লাগেজ স্ক্যানার খারাপ। তাই মালপত্র পরীক্ষা শিকেয় উঠেছে। দু’তিনটি স্টেশন ছাড়া প্রায় সব স্টেশনেই যাত্রীদের অবাধ গতি। তবে মেট্রোর দাবি, স্ক্যানারে না-হলেও মেটাল ডিটেক্টর এবং সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে সব যাত্রীর গতিবিধির উপরেই নজর রাখা হচ্ছে। সুরক্ষার কাজে নামানো হয়েছে প্রশিক্ষিত কুকুর-বাহিনীকেও।
ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড বা এনএসজি-কে তলব করে সুরক্ষার আঁটোসাঁটো ব্যবস্থা করা হয়েছে কলকাতা বিমানবন্দরে। এ দিন ওই বাহিনীর কম্যান্ডোরা মহড়া দেন। সিআইএসএফের বিশেষ প্রশিক্ষিত ‘কুইক রিঅ্যাকশন টিম’-ও মোতায়েন করা হয়েছে সর্বত্র। নজরদারির বাড়তি বন্দোবস্ত হয়েছে বিমানবন্দরের প্রতিটি গেটে। গুলি ছুড়তে ছুড়তে কোনও গাড়ি ঢুকে গেলে কী ভাবে তার মোকাবিলা করা যাবে, তারও মহড়া হয়েছে এ দিন। সাধারণ যাত্রীদের তল্পিতল্পা তল্লাশ করা হচ্ছে খুঁটিয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy