Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বুরারির ঘটনায় মানসিক রোগের ইঙ্গিত

দশ বছর আগে মৃত বাবার থেকে না কি এমনই স্বপ্নাদেশ পান বুরারির ভাটিয়া পরিবারের ছোট ভাই ললিত। বাবার মতো গলা করে কথা বলতেও শুরু করেছিলেন।

শোকার্ত পরিজনেরা। ছবি: পিটিআই।

শোকার্ত পরিজনেরা। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৮ ০৩:১৮
Share: Save:

‘‘বাবা বলেছেন, শেষ মুহূর্তে ধাক্কা লাগবে। মাটি ও আকাশ কেঁপে উঠবে। চিন্তা করবে না। আমি তোমাদের বাঁচিয়ে দেব। তোমরা মরবে না। জলের রং বদলালেই তোমরা আবার নেমে আসবে।’’

দশ বছর আগে মৃত বাবার থেকে না কি এমনই স্বপ্নাদেশ পান বুরারির ভাটিয়া পরিবারের ছোট ভাই ললিত। বাবার মতো গলা করে কথা বলতেও শুরু করেছিলেন। স্বপ্নে পাওয়া সেই নির্দেশ ডায়েরিতে লিখে রাখতেন ৪৫ বছরের ললিত। তিনি সেই নির্দেশ মেনেই পরিবারের বাকি সকলকে আত্মহত্যার পথে টেনে নিয়ে যান বলে পুলিশের সন্দেহ। ১১ জনের মৃত্যু হলেও শেষ পর্যন্ত তাঁরা বেঁচে যাবেন, পরিবারের এই বিশ্বাসই ছিল।

দিল্লি পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের অফিসারদের ধারণা, বুরারির ভাটিয়া পরিবার এক বিরল মানসিক রোগে ভুগছিলেন। যার নাম ‘ফোলি আ দু’ বা ‘শেয়ার্ড সাইকোসিস ডিসঅর্ডার’। কারও সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মানসিক যোগ থাকলে কোনও কোনও ব্যক্তির মধ্যে এই সমস্যা দেখা দেয়। যেখানে অসুস্থ ব্যক্তি মনে করেন, তাঁর সঙ্গে অন্য জন কথা বলছেন। সে ব্যক্তি মৃত হলেও ওই ব্যক্তির মনে এমন অলীক ধারণা হয়। পরিবারের বাকিদের মধ্যেও এই বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়তে পারে।

ললিত ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ক্ষেত্রেও এমনটা হয়েছিল বলে পুলিশের ধারণা। ললিতের বাবা ভোপাল ২০০৮ সালে মারা যান। এরপর প্লাইউডের ব্যবসায়ী ললিতের মাথায় প্লাইউড পড়ে গিয়ে তিনি বাকশক্তি হারান। সম্প্রতি তা ফিরে পেয়েছিলেন এবং বাবার মতোই কথা বলতেন। পরিবারের বাকিদের তিনি জানিয়েছিলেন, বাবা তাঁর স্বপ্নে আসেন। অন্য সময়েও কথা বলেন। কী ভাবে ব্যবসা চালাতে হবে, সেই বুদ্ধিও দিয়ে যান।

পুলিশের ধারণা, এ সবের সঙ্গেই গুপ্ত সাধনা শুরু করেন তিনি। কোনও তান্ত্রিকও ললিতকে বুদ্ধি দিয়ে থাকতে পারে। সেই কারণেই জানেগড়ি বাবা নামে এক তান্ত্রিকের খোঁজ চলছে। ললিতের ডায়েরিতে একাধিক বার ‘বট গাছের তপস্যা’ ও ‘বটের ঝুড়ির পুজো’র কথা লেখা রয়েছে। যার সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝোলার সাদৃশ্য রয়েছে। শনিবার রাতে আত্মহত্যার সময়ে মূলত ললিত ও তাঁর স্ত্রী টিনাই সকলের হাত-পা, মুখ বেঁধে দেন বলে মনে করছেন অফিসারেরা।

মনোবিদদের যুক্তি, এই ধরনের মানসিক অবস্থায় মানুষ অলীক কথা শোনে। সামাজিক ও ধর্মীয় বিশ্বাসও এখানে কাজ করে। কিন্তু জিনগত সমস্যা হলে পরিবারের বাকিদের মধ্যেও ওই লক্ষণ দেখা দিতে পারে। দিল্লি পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম ব্রাঞ্চ) অলোক কুমার বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে আত্মহত্যা মনে হলেও সব দিক নিয়েই তদন্ত হচ্ছে।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, ১১ জনের মধ্যে কয়েক জনের পেটে ময়নাতদন্তে তরল রাসায়নিক মিলেছে। তারও পরীক্ষা চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE