Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
চাপের মুখে মরিয়া শরিফ

স্বাধীনতা যোদ্ধার তকমা বুরহানকে

সন্ত্রাস প্রশ্নে যথেষ্ট কোণঠাসা। কিন্তু রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় বক্তৃতা করতে উঠে পাক প্রধানমন্ত্রী দেখাতে চাইলেন, তিনি পিছু হঠার পাত্র নন। আন্তর্জাতিক মঞ্চে কাশ্মীরের বিক্ষোভ আন্দোলন এবং ভারতের তরফে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন নওয়াজ শরিফ।

উদ্বেগ। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভার অধিবেশনে নওয়াজ শরিফ। ছবি: এপি।

উদ্বেগ। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভার অধিবেশনে নওয়াজ শরিফ। ছবি: এপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৫০
Share: Save:

সন্ত্রাস প্রশ্নে যথেষ্ট কোণঠাসা। কিন্তু রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় বক্তৃতা করতে উঠে পাক প্রধানমন্ত্রী দেখাতে চাইলেন, তিনি পিছু হঠার পাত্র নন।

আন্তর্জাতিক মঞ্চে কাশ্মীরের বিক্ষোভ আন্দোলন এবং ভারতের তরফে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন নওয়াজ শরিফ। কিন্তু মাঝে উরির ঘটনা খানিক বেসামাল করে দিয়েছে তাঁকে। ভারত তো চাপ বাড়িয়েছেই। সরব হয়েছে বিভিন্ন দেশও। সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর হিসেবে পাকিস্তানকে চিহ্নিত করে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। বুধবার রাষ্ট্রপুঞ্জে দাঁড়িয়ে ভারতকে আক্রমণের অস্ত্রেই সেই ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা চালালেন শরিফ।

এ দিন উরি নিয়ে রা কাড়েননি পাক প্রধানমন্ত্রী। অন্য দিকে সেনা সংঘর্ষে নিহত জঙ্গি বুরহান ওয়ানিকে তুলে ধরেছেন ‘সাধারণ কাশ্মীরিদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা নয়া ইনতিফাদা-র (বিদ্রোহ) প্রতীক’ হিসেবে। জবাব দিতে দেরি করেননি বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ। টুইট করেন, ‘বুরহান ওয়ানিকে মহিমান্বিত করে শরিফ সন্ত্রাসের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কটা বুঝিয়ে দিলেন।’

এ দিন রাষ্ট্রপুঞ্জে বক্তৃতার আগে পাক সেনাপ্রধান রাহিল শরিফের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন নওয়াজ। অনেকের মতে, আজ সাধারণ সভায় পাক প্রধানমন্ত্রী যা বললেন, তা সেনাপ্রধানের শেখানো বুলি ছাড়া আর কিছুই নয়। ওই পর্যবেক্ষকদের মতে, শরিফ সরকারের উপরে সেনার নিয়ন্ত্রণের সব চিহ্নই এখন প্রকট। শরিফ এ দিন বলেন, সন্ত্রাসকে রুখতে হলে তার কারণগুলো নির্মূল করতে হবে। সেই ‘কারণ’গুলোর মধ্যেই তিনি উল্লেখ করেন কাশ্মীরের স্বাধীনতার দাবির কথা। শরিফের অভিযোগ, ৭০ বছর ধরে কাশ্মীর দখল করে রেখেছে ভারত। শ্রীনগর থেকে সোপোর, স্বাধীনতার দাবিতে পথে নামছেন মানুষ। ভারত ছররা বৃষ্টি করে তার জবাব দিচ্ছে। শরিফের কথায়, ‘‘কাশ্মীর সমস্যা না মিটলে শান্তি ফিরবে না। কিন্তু আলোচনার জন্য ভারত সর্বক্ষণ পূর্বশর্ত চাপিয়ে রাখে। ভারতকে বুঝতে হবে, আলোচনা করে সে পাকিস্তানকে ধন্য করছে না।’’

ভারতের দমন-পীড়নের প্রমাণ হিসেবে একটি ডসিয়ের নিরাপত্তা পরিষদে দেবেন বলে জানান শরিফ। দাবি তোলেন, কাশ্মীরের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে রাষ্ট্রপুঞ্জ তদন্ত-দল পাঠাক এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের তত্ত্বাবধানেই নেওয়া হোক গণভোট।

অর্থাৎ কাশ্মীর প্রশ্নে পাকিস্তানের বরাবরের যা অবস্থান, সেটাই আরও এক বার তুলে ধরলেন শরিফ। যদিও তাঁর উদ্দেশ্য কতটা সিদ্ধ হল, সন্দেহ। কারণ নওয়াজ নিজে উরি নিয়ে নীরব থাকলেও নানা মহল থেকে এ নিয়ে চাপ তৈরি হচ্ছে। ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়ার মতো দেশগুলি ঘটনাটির তীব্র নিন্দা করেছে। এ দিনই সন্ধেয় পাক হাইকমিশনার আব্দুল বাসিতকে ডেকে পাঠিয়ে কড়া বার্তা দিয়েছে দিল্লিও। বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর কড়া ভাষায় তাঁকে বলেন, ২০০৪ সালেই পাক সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তাদের দেশের মাটিকে ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ছড়ানোর কাজে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। কিন্তু পঠানকোট থেকে উরির হামলা প্রমাণ করে দিয়েছে, সে দেশে জঙ্গি পরিকাঠামো এখনও সক্রিয়। এমনকী তাঁদের বৈঠকের সময়ও যে নিয়ন্ত্রণরেখার দু’টি জায়গায় সংঘর্ষ চলছে, সে কথা বাসিতকে মনে করিয়ে দেন জয়শঙ্কর। আর শরিফের বক্তৃতার পরে ‘পূর্বশর্ত’ প্রসঙ্গ তুলে বিকাশ স্বরূপের প্রশ্ন, ‘‘সন্ত্রাসে মদত বন্ধ করার দাবিই ভারতের দিক থেকে আলোচনার একমাত্র পূর্বশর্ত। সেটা কি অসঙ্গত?’’ এবং এখানেই থেমে থাকছে না দিল্লি। ২৬ তারিখ রাষ্ট্রপুঞ্জেই বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ তাঁর বক্তৃতায় সন্ত্রাসে পাক মদতের কথা তুলবেন।

বস্তুত নওয়াজ নিজেও জানতেন যে, উরির ঘটনায় তিনি ব্যাকফুটে। মার্কিন হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে এ দিন পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদে মদতদাতা রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করার দাবি উঠেছে। রাজনৈতিক ভেদাভেদ মুছে রিপাবলিকান নেতা তথা সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কিত হাউস সাব-কমিটির চেয়ারম্যান টেড পো এবং ডেমোক্র্যাট নেতা ডানা রোহরাব্যাখার ‘পাকিস্তান স্টেট স্পনসর অব টেররিজম ডেজিগনেশন অ্যাক্ট’ নামে একটি বিল আনেন। মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য পিট ওলসন-ও উরির ঘটনার নিন্দা করে বলেন, ‘‘এই নারকীয় হামলাকারীদের শাস্তি দিতে যে কোনও পদক্ষেপকে সমর্থন করব।’’ আফগানিস্তানের ভাইস প্রেসিডেন্ট সারওয়ার দানেশ-ও এ দিন রাষ্ট্রপুঞ্জে তাঁর বক্তৃতায় সন্ত্রাসে পাক মদতের কথা বলেন। তবে পাক কূটনীতিকদের দাবি, চিন তাঁদের পাশে আছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

burhan Nawaz Sharif Pakistan freedom fighter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE