Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Citizenship Amendment Act

ফুঁসছে দেশ, নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে রাজ্যে রাজ্যে বিক্ষোভ

দিল্লিতে বন্ধ ১৮ মেট্রো স্টেশন, বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবাও। উত্তরপ্রদেশে জ্বলল বাস, পুলিশের গাড়ি।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ১২:৪৩
Share: Save:

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই উত্তাল হয়ে উঠল দিল্লি, বেঙ্গালুরু, চণ্ডীগড়, মুম্বই, কর্নাটক-সহ সহ দেশের বহু শহর। প্রতিবাদে সামিল হয়ে বেঙ্গালুরুতে আটক হন ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, “সাংবাদমাধ্যমকে সংবিধান নিয়ে বলার সময় আমাকে আটক করে পুলিশ। আমার হাতে গাঁধীজির একটা ছবি ছিল।” তাঁর প্রশ্ন দেশে কি স্বৈরতন্ত্র চলছে? পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবেই প্রতিবাদ করছিলাম। কোনও অশান্তি হয়নি। কেন্দ্রের অঙ্গুলিহেলনেই পুলিশ এমন কাজ করছে।” অন্য দিকে, দিল্লিতে আটক করা হয় সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাটা, ডি রাজা এবং স্বরাজ ইন্ডিয়া-র সর্বভারতীয় সভাপতি যোগেন্দ্র যাদব। অভিনেতা কমল হাসান টুইট করে রমচন্দ্র গুহ এবং যোগেন্দ্র যাদবদের সমর্থন জানান।

রামচন্দ্র গুহের আটকের তীব্র নিন্দা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন “সিএএ এবং এনআরসি নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খোলায় দেশের এক জন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদকে আটক করা হল। এই সরকার ভয় পেয়ে গিয়েছে।” অ্যামনেস্টি ইন্ডিয়াও প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

দিল্লির লালকেল্লার সামনে সিএএ-র প্রতিবাদে বিক্ষোভ। পুলিশের হাতে আটক বহু। ছবি: এএফপি।

এ দিন সকাল থেকেই উত্তপ্ত হয়ে উঠল দিল্লির লালকেল্লা এলাকা-সহ বেশ কিছু এলাকা। ১৪৪ ধারা চলছে দিল্লির কয়েকটি জায়গায়। তার মধ্যে লালকেল্লা চত্বরও রয়েছে। কিন্তু তা উপেক্ষা করেই ভিড় জমাতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। আগে থেকেই সেখানে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন ছিল। বিক্ষোভকারীরা লালকেল্লার সামনে জমায়েত হতেই পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। বেশ কয়েক জনকে আটক করে পুলিশ। দিল্লির বেশি কিছু জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ১৮টি মেট্রো স্টেশন। বন্ধ রাখা হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবাও। অন্য দিকে, বিহারেও পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। পুলিশের সঙ্গে বেশ কয়েক জায়গায় খণ্ডযুদ্ধও হয় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে। দিল্লি, বেঙ্গালুরু, বিহারে বহু বিক্ষোভকারীকে আটক করে পুলিশ।

সিএএ-র প্রতিবাদে শামিল সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাট, বৃন্দা কারাট-সহ বাম নেতারা।

দিল্লির লালকেল্লায় প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন স্বরাজ ইন্ডিয়া-র সর্বভারতীয় সভাপতি যোগেন্দ্র যাদব। পুলিশ তাঁকেও আটক করে। দিল্লির মান্ডি হাউস চত্বরেও পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সেখানে র‌্যাফ নামানো হয়। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে দিল্লিতে এ দিন ১৮টি মেট্রো স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই মেট্রো স্টেশনগুলোর মধ্যে রয়েছে, লাল কিলা, জামা মসজিদ, চাঁদনি চক, বিশ্ববিদ্যালয়, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া, জাসোলা বিহার, শাহিন বাগ এবং মুনিরকা। রাজধানীর বেশি কয়েকটি জায়গায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে জিও, এয়ারটেল ও ভোডাফোন। দিল্লির সীমানা লাগোয়া এনএইচ ৪৮, এমজি রোড এবং ওল্ড দিল্লি-গুরুগ্রাম রোড বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। ফলে বিশাল যানজটের সৃষ্টি হয়েছে দিল্লি-গুরুগ্রাম এক্সপ্রেসওয়েতে। দিল্লি পুলিশের জনসংযোগ আধিকারিক এম এস রানধওয়া বিক্ষোবকারীদের উদ্দেশে বলেন, “নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় প্রতিবাদ করুন। পুলিশকে সহযোগিতা করুন।”

মান্ডি হাউসের সামনে এ দিন সকালে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন কংগ্রেস নেতা সন্দীপ দীক্ষিত। সেখান থেকে তাঁকে আটক করে পুলিশ। সন্দীপ বলেন, “লালকেল্লায় যেতে দেওয়া হয়নি আমাকে। তাই মান্ডি হাউসেই প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলাম।” পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তিনি। ওই মান্ডি হাউসের সামনেই প্রতিবাদ করছিলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এবং ডি রাজা। তাঁদেরও আটক করে পুলিশ।

অন্য দিকে, সিএএ-র প্রতিবাদে উত্তরপ্রদেশের সম্ভল জেলা রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় বিক্ষোভকারীদের। পুলিশের গাড়ি, বাসে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে। চণ্ডীগড়েও ছাত্ররা প্রতিবাদ মিছিল করেন। অন্য দিকে, বড়সড় গন্ডগোলের আশঙ্কায় মুম্বইয়ের ক্রান্তি ময়দানে নিরাপত্তা আঁটসাঁট করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE