Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্রথা ভেঙে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে বিজেপি-রাজ

সূত্রের বক্তব্য, সরকারের এই পদক্ষেপ আদৌ বেআইনি নয়। কারণ সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান কে হবেন, তা নিয়ে কোনও লিখিত সংসদীয় আইন নেই।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:২৬
Share: Save:

কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক এবং বিদেশ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি চেয়ারম্যান পদ থেকে কংগ্রেসকে সরানো হল। একমাত্র কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সংসদীয় কমিটি ছাড়া বাকি সব গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের চেয়ারম্যান পদে এ বার থাকছেন বিজেপি সাংসদেরা। একই ভাবে তৃণমূলের হাতে থাকা রেল ও পরিবহণ এবং পর্যটন কমিটির চেয়ারম্যান পদ দখল করল বিজেপি। নতুন ব্যবস্থায় তৃণমূল পেয়েছে তুলনামূলক ভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ এবং একটি মাত্র মন্ত্রক (খাদ্য ও গণবণ্টন) কমিটির চেয়ারম্যান পদ।

সূত্রের বক্তব্য, সরকারের এই পদক্ষেপ আদৌ বেআইনি নয়। কারণ সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান কে হবেন, তা নিয়ে কোনও লিখিত সংসদীয় আইন নেই। কিন্তু সংসদীয় প্রথা অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর সঙ্গে অন্য দলগুলির আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি স্থির করা হয়। এটাও সংসদীয় প্রথার মধ্যে পড়ে যে, বিরোধীদেরই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের চেয়ারম্যান পদ দেওয়া হবে। কারণ তা হলে গণতান্ত্রিক কাঠামোয় সরকারের দায়বদ্ধতা সুনিশ্চিত করা সম্ভব হয়। কিন্তু এ বারে সরকার নিজেই বেশির ভাগ কমিটির চেয়ারম্যানের পদ নিয়ে নিয়েছে বলে সরব বিরোধীরা। বিদেশ মন্ত্রকের সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন শশী তারুর। তাঁর কথায়, ‘‘এমন ঘটনা সংসদীয় ইতিহাসে এই প্রথম হল। এ বারে যা দাঁড়াচ্ছে, বিজেপির চেয়ারম্যান মন্ত্রকের কাজকর্ম নিয়ে নিজেদের সরকারকেই প্রশ্ন করবেন!’’

পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রকের কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন এয়ার ইন্ডিয়ার বেসরকারিকরণ নিয়ে সরব হয়েছিলেন। তাঁকে সরতে হয়েছে। সেখানে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম প্রস্তাব করেছে তৃণমূল নেতৃত্ব। পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত বিজেপি সাংসদদের প্রত্যেককেই কোনও না কোনও সংসদীয় কমিটিতে রাখা হয়েছে। রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষকে রাখা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মতো গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে। দিলীপ পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি চালু করা নিয়ে সরব হয়েছেন। সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে অর্জুন সিংহকে। তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রকের কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন তৃণমূলের মহুয়া মিত্র এবং বিজেপির লকেট চট্টোপাধ্যায়।

স্থায়ী কমিটি কথা

• চালু হয়েছে ১৯৯৩ সাল থেকে
• সদস্য সংখ্যা ৪১ (৩১ জন লোকসভা, ১০ জন রাজ্যসভার সদস্য)
• কাজ— সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের নতুন বিল এবং মন্ত্রকের কাজকর্ম খতিয়ে দেখা, সরকারকে পরামর্শ দেওয়া, প্রয়োজনে মানুষের মতামত নেওয়া। মন্ত্রকের বাজেট বরাদ্দ, খরচ খতিয়ে দেখা
• লোকসভা এবং রাজ্যসভায় যে দলের যেমন শক্তি,
সেই অনুপাতে বিভিন্ন কমিটিতে দলগুলির প্রতিনিধিত্ব স্থির হবে— এটুকু বলা থাকলেও, চেয়ারম্যান নিয়োগ
নিয়ে কোনও নির্দিষ্ট আইন নেই। সংসদীয় প্রথা অনুসারে আলোচনা, ঐকমত্য এবং বোঝাপড়ার ভিত্তিতেই চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন
• সরকারের দায়বদ্ধতা সুনিশ্চিত করার জন্য প্রথা অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যানের পদ বিরোধীদের দেওয়া হয়

কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন কংগ্রেসের বীরাপ্পা মইলি। নতুন চেয়ারম্যান হয়েছেন বিজেপির জয়ন্ত সিন্হা। বিদেশ মন্ত্রকে শশী তারুরের জায়গায় এসেছেন বিজেপির পি পি চৌধরি। রাহুল গাঁধী ছিলেন বিদেশ মন্ত্রকের কমিটির সদস্য। তাঁকে আনা হয়েছে প্রতিরক্ষায়। সব মিলিয়ে ২৪টি সংসদীয় কমিটির মধ্যে ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ কমিটির চেয়ারম্যান পদ বিজেপি রেখেছে নিজেদের দখলে। কংগ্রেসের চারটি থেকে কমে হয়েছে তিন। পি চিদম্বরম ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান। এই পদটি নিজের কাছে রাখলেও এ বারে চিদম্বরমকে সরিয়ে আনন্দ শর্মার নাম পাঠিয়েছে কংগ্রেস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Cabinet Committee TMC Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE