Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মনোবল আঁকড়ে লড়াই ক্যানসার আক্রান্ত মুস্তাফার

অসমের দরং জেলার দলগাঁওয়ের বাসিন্দা আব্দুল হাসিম ও মাদেজা বেগম কখনও স্কুলের মুখ দেখেননি। কিন্তু তিন ছেলের লেখাপড়ায় নজর ছিল। ২০১৫ সালে বড় ছেলে মুস্তাফার কিডনিতে টিউমার ও ক্যানসার ধরা পড়ে।

বাবা-মায়ের সঙ্গে মুস্তাফা। নিজস্ব চিত্র

বাবা-মায়ের সঙ্গে মুস্তাফা। নিজস্ব চিত্র

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৯ ০৩:২২
Share: Save:

রোগটা তার হাতে ছিল না। চিকিৎসার জন্য যথেষ্ট টাকাও ছিল না বাবা-মার হাতে। অতএব জীবনটা ডাক্তারদের হাতে তুলে দিয়ে, নিজের হাতে যেটুকু ছিল তাকেই আঁকড়ে ধরেছিল ১৬ বছরের মুস্তাফা জামাল। তার মনে হয়েছিল, নিজের হাতে যা রয়েছে তাকে হাতিয়ার করেই কোনও একটা লড়াই তো জেতা যেতে পারে। আর সেই ভাবনা থেকেই পড়াশোনাকে আঁকড়ে ধরা। গৃহশিক্ষকের প্রশ্নই নেই। সীমিত সামর্থ্যে, একক লড়াইয়ে মুস্তাফা অসমের ম্যাট্রিক পরীক্ষায় ৮৩ শতাংশ নম্বর পেয়েছে।

অসমের দরং জেলার দলগাঁওয়ের বাসিন্দা আব্দুল হাসিম ও মাদেজা বেগম কখনও স্কুলের মুখ দেখেননি। কিন্তু তিন ছেলের লেখাপড়ায় নজর ছিল। ২০১৫ সালে বড় ছেলে মুস্তাফার কিডনিতে টিউমার ও ক্যানসার ধরা পড়ে। দরিদ্র পরিবারটিতে নেমে আসে অন্ধকার। গত চার বছর ধরে গুয়াহাটির ক্যানসার হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে মুস্তাফার। ইতিমধ্যে জমি বেচে, ধার করে ১৫ লক্ষ টাকা ছেলের চিকিৎসায় খরচ করে ফেলেছেন পেশায় চাষী আব্দুল। ছেলেও দৃঢ়তার সঙ্গে চালিয়ে গিয়েছে লেখাপড়া। চিকিৎসার জন্য গুয়াহাটি এলেও ফিরে গিয়েই সহপাঠী ও শিক্ষকদের কাছ থেকে ক্লাসের পড়া ও নোট জোগাড় করেছে। মুস্তাফা বলে, “আমার লড়াইয়ে স্কুলের সহপাঠী, শিক্ষক ও প্রতিবেশীরা সব রকম ভাবে সাহায্য করেছেন। তাঁদের সাহায্য ও শুভেচ্ছা ছাড়া আমার ভাল ফল করা সম্ভব ছিল না।”

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

কৌপাটি জাতীয় বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নেন মেধাবী ছাত্রটির কাছ থেকে বেতন নেওয়া হবে না। তাঁকে পড়াশোনায় সাহায্য করার পাশাপাশি রোগ নিয়ে স্কুলে কোনও আলোচনাও হবে না। সে কথা মুস্তাফার সহপাঠীদেরও বুঝিয়ে বলা হয়। সহপাঠীরাও কথা রাখে। রোগের কথা সরিয়ে রেখে, তাঁকে সব রকমের সাহায্য করেছে বন্ধুরা। পরীক্ষা, ফলাফল নিয়ে আব্দুল তেমন মাথা ঘামাতেন না। ছেলে নিজের মতো ম্যাট্রিকটা দিয়ে এসেছিল, এই অনেক। কিন্তু ফল বেরনোর পরে গ্রামের
মানুষ, শিক্ষকরা বাড়ি বয়ে এসে অভিনন্দনের বন্যায় ছেলেকে ভাসিয়ে দেওয়ায় আপ্লুত বাবা একই সঙ্গে গর্বিত ও হতাশ।

বিজ্ঞান, অঙ্ক, ভূগোল ও সমাজবিদ্যায় লেটার পেয়েছে মুস্তাফা। ভবিষ্যতে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায়। নিজের জীবনে চিকিৎসার গুরুত্ব উপলব্ধি করে মুস্তাফা বড় হয়ে ডাক্তার হতে চায়। কিন্তু হতাশ আব্দুল জানান, হাতে যা ছিল সব ছেলের চিকিৎসায় খরচ হয়ে গিয়েছে। কৌপাটি স্কুলের তরফে কোনও দিন বেতন নেওয়া হয়নি। কিন্তু উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে তো সেই সুযোগ মিলবে না। ছেলেকে আর পড়ানোর সামর্থ্য তাঁর নেই। মুস্তাফার কথা জানতে পেরে আজমল ফাউন্ডেশন তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। গত কালই ফাউন্ডেশনের কলেজে প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়েছে মুস্তাফা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE