শক্ত হাতে ক্যানসারকে রুখে দেওয়ার বার্তা এ বার ছড়িয়ে প়ড়ছে রেলপথেও। আর তাতে সামিল হয়েছেন এ রাজ্যের এক দল চিকিৎসক। মধ্যপ্রদেশের সাতনায় জীবনরেখা এক্সপ্রেসে ক্যানসারের যে শল্য চিকিৎসা শুরু হয়েছে, অচিরেই এ রাজ্যের প্রত্যন্ত জেলাগুলিতেও তা ছড়িয়ে দিতে চান তাঁরা।
এত দিন ‘হাসপাতাল-ট্রেনে’ চেপে প্রত্যন্ত এলাকায় চোখ, নাক, গলার অস্ত্রোপচার করতেন চিকিৎসকেরা। এ বার সেই ট্রেনেই মুখ, গলার এবং স্তনের ক্যানসারের অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। শুধু অস্ত্রোপচারই নয়, গ্রামে-গঞ্জে চলবে তামাক-বিরোধী প্রচারও। ইতিমধ্যেই মধ্যপ্রদেশের সাতনা জেলার একটি গ্রামে ৫২ বছরের এক প্রৌঢ়ের অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। আপাতত তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। ওই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত এ রাজ্যের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এখনও এ রাজ্যের প্রত্যন্ত গ্রামে ক্যানসারের চিকিৎসা তো দূরের কথা, রোগ নির্ণয় পর্যন্ত সঠিক ভাবে হয় না। সেখানকার মানুষের কাছে চিকিৎসার সুযোগ পৌঁছে দেওয়াটাই তাঁদের লক্ষ্য।
প্রত্যন্ত গ্রামে স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রসার এবং চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দিতে প্রায় দু’দশক আগে রেল ও স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যৌথ সহযোগিতায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এই প্রকল্প শুরু করেছিল। সেই প্রকল্পেই পাঁচ কামরার জীবনরেখা এক্সপ্রেস চালু করা হয়। চলতি কথায় তারই নাম হয়েছে ‘হাসপাতাল-ট্রেন’। চোখ, নাক ও গলার অস্ত্রোপচারের জন্য তার ভিতরে অপারেশন থিয়েটার (ওটি) এবং অন্যান্য পরিকাঠামো ছিল। এ বার ক্যানসার অস্ত্রোপচারের জন্য অতিরিক্ত দু’টি কামরা যোগ করা হয়েছে। উন্নত সরঞ্জাম দিয়ে সাজানো হয়েছে ওটি-ও।
হাসপাতাল ট্রেনের পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত এ রাজ্যের ক্যানসার চিকিৎসক সৌরভ দত্ত এবং অপূর্ব গর্গ বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে মানুষকে চিকিৎসার জন্য ঘটিবাটি বিক্রি করে দৌড়তে হবে না। চিকিৎসাই পৌঁছবে মানুষের নাগালে।’’
ক্যানসার-বিশেষজ্ঞদের মতে, রোগটি নিয়ে শহরাঞ্চলে যতটা সচেতনতা রয়েছে, গ্রামে তা অনেক কম। যেমন, তামাকের ব্যবহারেই প্রতি বছর মুখ ও গলার ক্যানসার বাড়ছে। সেটা বহু মানুষই জানেন না। মহিলারা জানেন না কী ভাবে স্তনের ক্যানসারের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়। এই প্রকল্পে তাই চিকিৎসার পাশাপাশি সচেতনতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জেলার চিকিৎসকদের সঙ্গেও ক্যানসার নির্ণয় নিয়ে আলোচনায় বসবেন জীবনরেখা এক্সপ্রেসের বিশেষজ্ঞরা। এই প্রকল্পে যুক্ত মুম্বইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের চিকিৎসক পঙ্কজ চতুর্বেদী বলছেন, ‘‘শুধু শহরে বসে সচেতনতা বাড়ালে যে এর প্রকোপ কমানো যাবে না, তা অনেক দিন ধরেই টের পাচ্ছি। তাই গ্রামে পরিষেবা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।’’
চিকিৎসকেরা জানান, অস্ত্রোপচারের আগের দিন রোগীকে পর্যবেক্ষণের জন্য ট্রেনে রাখার পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়াও অস্ত্রোপচারের পরবর্তী চিকিৎসারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। অস্ত্রোপচারের পরের তিন ঘণ্টা রোগীকে ট্রেনেই রাখা হবে। তার পরে স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানো হবে। এক-একটি স্টেশনে ২-৩ সপ্তাহ করে দাঁড়াবে ট্রেনটি। সেই সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় পর্যবেক্ষণ করবেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, ক্যানসারের অস্ত্রোপচারের পর ডাক্তারি পর্যবেক্ষণ জরুরি। রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে শহরের হাসপাতালেও নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy