তামিল কার্টুনিস্ট জি বালা
ছোট্ট শরীরটা উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছে রাস্তায়। আর দাউদাউ করে জ্বলছে তার পা থেকে মাথা। তবু কি আশ্চর্য নির্বিকার ওই তিনমূর্তি। যেন নিদ্রা গিয়েছেন! চোখ বন্ধ। অথচ নিজেদের লজ্জা ঢাকতে চেয়ে দু’হাতে নোটের বান্ডিল জড়ো করে রেখেছেন প্রাণপণে! মাঝখানের জন জেলা কালেক্টর। বাঁ দিকে পুলিশ কমিশনার, আর ডান দিকে খোদ মুখ্যমন্ত্রী।
ফেসবুকে এমনই এক কার্টুন পোস্ট করার ‘অপরাধে’ আজ গ্রেফতার হতে হল তামিল কার্টুনিস্ট জি বালাকে। দু’বছর আগে ঠিক যেমনটা বিপাকে পড়েছিলেন বাঙালি অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে তৈরি একটি ব্যঙ্গচিত্র ‘শেয়ার’ করার দায়ে হাজতবাসও করতে হয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষককে।
তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ই কে পলানীস্বামী-সহ দুই প্রশাসনিক কর্তার সম্মানহানি করার অভিযোগে আজ মামলাও দায়ের হয়েছে মধ্য চল্লিশের ফ্রিল্যান্স কার্টুনিস্ট বালার বিরুদ্ধে। যা নিয়ে আজ দিনভর উত্তাল থেকেছে সোশ্যাল মিডিয়া। রাজ্য প্রশাসনকে ‘ফ্যাসিস্ট’ তকমা দিয়ে ফুঁসছে ফেসবুকে বালার ৬৫ হাজার ফলোয়ারের একটা বড় অংশ।
আরও পড়ুন: চাকরি দিন, না হলে গদি ছাড়ুন, মোদীকে আক্রমণ রাহুলের
কিন্তু কী এমন সেই কার্টুন, যার জেরে প্রশাসন এতখানি রুষ্ট! বালা গ্রেফতার হওয়ার পরেই হ্যাশট্যাগ দিয়ে সেই ‘বিষাক্ত’ কার্টুন যেন আরও বেশি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
#নেল্লাইফ্যামিলিঅ্যাব্লেজ মনে করিয়ে দিচ্ছে সপ্তাহ দু’য়েক আগেকার সেই মর্মান্তিক ঘটনার কথাও। মহাজনের ঋণের ফাঁস থেকে মুক্তি পেতে কালেক্টর অফিসের সামনেই দুই শিশুকন্যা-সহ গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন তিরুনেলভেলি (যা নেল্লাই নামেও পরিচিত) জেলার এক দিনমজুর দম্পতি। বাঁচানো যায়নি একজনকেও। পরে জানা গিয়েছিল, স্থানীয় সুদখোর মহাজন যে ঋণ শোধ করা নিয়ে তাঁদের উপর চাপ বাড়াচ্ছে, তা জানিয়ে কালেক্টরের কাছে ছ’টি পিটিশন দিয়েছিল ওই পরিবার।
কিন্তু এ-থানা, ও-থানা ঘুরেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তাই ওই চূড়ান্ত পদক্ষেপ।
বস্তুত এর প্রতিবাদেই কলম ধরেছিলেন বালা। কার্টুনের ভাষায় ‘নগ্ন’ করতেও ছাড়েননি প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের। আজ তাই তিনি গ্রেফতার হতেই ‘অসহিষ্ণু’ পলানীস্বামী সরকারের বিরুদ্ধে জোর সমালোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে ফেসবুক-টুইটারে। বিরোধী ডিএমকে নেতা মনু সুন্দরম বলেন, ‘‘গণতন্ত্রে এ ভাবে কোনও শিল্পীর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা যায় না। এ যেন তামিলনাড়ুতে বিজেপির বয়ে প্রক্সি দিচ্ছে এডিএমকে।’’ তথ্য প্রযুক্তি আইনের পাশাপাশি, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০১ নম্বর ধারাতেও কার্টুনিস্টের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছে প্রশাসন।
কিন্তু বালা তো ওই পোস্ট করেছিলেন ২৪ অক্টোবরের রাতে। দশ দিন পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হল কেন? ফেসবুকে বালার এক ফলোয়ার বলছেন— ‘‘এ থেকেই বোঝা যায়, প্রশাসনের গায়ের চামড়া কতটা মোটা। নিজেদের অপমানিত বোধ করতেই যাদের এত দিন লেগে যায়, তারা গরিবের পুড়ে মরার কষ্ট কী বুঝবে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy