কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাগুলিকে মোদী সরকার বিরোধীদের পিছনে লাগাচ্ছে— এই অভিযোগ বারেবারেই উঠেছে। এ বার মোদী সরকারের শেষ বছরে সেই কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির অভ্যন্তরীণ বিরোধই প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, বিবাদের কেন্দ্রে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত অফিসারেরা।
সিবিআইয়ের ডিরেক্টর অলোক বর্মার সঙ্গে বিরোধ বেঁধেছে স্পেশ্যাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানার। অর্থ মন্ত্রকের অধীনস্থ এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরের তদন্তকারী অফিসার রাজেশ্বর সিংহ প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলছেন অর্থসচিব হাসমুখ আঢ়িয়ার ভূমিকা নিয়ে। আবার আয়কর দফতরের চেয়ারম্যান সুশীল চন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ, নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে তিনি আয়কর বোর্ডের সদস্যদের শূন্যপদ পূরণ করতে চাইছেন না। আস্থানা গুজরাত ক্যাডারের আইপিএস। গুজরাতি আমলা হাসমুখও মোদীর নিজের লোক হিসেবে পরিচিত। আর সুশীলের পদের মেয়াদ ফুরোনো সত্ত্বেও তা বাড়িয়ে চলেছে মোদী সরকার।
একের পর এক তদন্তকারী সংস্থার ভিতরের বিরোধ প্রকাশ্যে আসায় প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছে সরকার। নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় এসে সরকারের ভিতরের কাজিয়া বন্ধ করার কথা বলেছিলেন। পাঁচ বছরের মাথায় দেখা যাচ্ছে, বাস্তব ছবিটা একেবারেই উল্টো।
সিবিআইয়ের ডিরেক্টর অলোক বর্মার সঙ্গে স্পেশ্যাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানার বিবাদ নিয়ে বহু দিন ধরেই চর্চা চলছিল। বস্তুত সিবিআইয়ে আস্থানার নিয়োগ নিয়েই আপত্তি করেছিলেন বর্মা। কারণ আস্থানার বিরুদ্ধেই সিবিআইকে তদন্তে নামতে হয়েছিল।
সিবিআই এ বার কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, ডিরেক্টরের অনুপস্থিতিতে তাঁর হয়ে ভিজিল্যান্স কমিশনারের বৈঠকে যোগ দেওয়ার কোনও অধিকার আস্থানার নেই। কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনারের নেতৃত্বাধীন কমিটি সিবিআইয়ে নিয়োগের ছাড়পত্র দেয়। সিবিআই চিঠিতে জানিয়েছে, আস্থানা-সহ কয়েক জন অফিসারের নিয়োগের আগে তাঁদের নাম সন্দেহভাজন বা অভিযুক্ত হিসেবে ছিল সিবিআইয়ের খাতায়। আস্থানা নিজেই আতসকাঁচের তলায় থাকায় অন্য কাউকে নিয়োগের বিষয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করা অনৈতিক।
এর আগে এই কমিটিতেই নোট পাঠিয়ে আস্থানার স্পেশ্যাল ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগে আপত্তি তুলেছিলেন বর্মা। তার পরেও আস্থানার নিয়োগ আটকায়নি। এখানেই কংগ্রেসের প্রশ্ন— যদি সিবিআইয়ের সুপারিশ অনুযায়ী সিবিআইয়ে নিয়োগ না হয়, তা হলে কি প্রধানমন্ত্রীর দফতর, বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার থেকে সুপারিশ আসছে? কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক বিরোধীদের নিশানা করতেই কি বাছাই করা অফিসারদের নিয়োগ করা হচ্ছে? ভিজিল্যান্স কমিশনই বা কেন তাদের নিয়োগ করছে?’’ সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরির যুক্তি, ‘‘কে ওই সব নাম সুপারিশ করছে, তা বোঝা কঠিন নয়। দায় প্রধানমন্ত্রীর ঘাড়েই গিয়ে পড়ে।’’
সিবিআই প্রধানমন্ত্রীর দফতরেরই অধীন। চাপের মুখে, সিবিআইয়ের অন্দরের বিবাদ থেকে আজ দূরত্ব বজায় রাখার কৌশল নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী দফতরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ বলেন, ‘‘আমরা সিবিআইয়ের প্রশাসনিক প্রধান। তাদের প্রশাসনিক ও নীতিগত বিষয়টুকু নিয়েই পিএমও মাথা ঘামায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy