সমর্থন: ধর্নামঞ্চে ডিএমকে-র কানিমোঝি ও আরজেডি-র তেজস্বী যাদবের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
এ যেন জনপ্রিয় ছবির সেই সংলাপের মতো! কভি কিসি কো ইতনা ভি মত ডরাও কি ডর হি খতম হো জায়ে! কাউকে এত ভয় দেখাতে নেই, যাতে ভয় বস্তুটাই চলে যায়! লাগাতার বিরোধীদের সিবিআইয়ের জুজু দেখাতে গিয়ে ‘ভয়’ অস্ত্রটাই ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে দেখে এ বার ‘ভয়’ ধরছে বিজেপি শিবিরেই।
এর আগে বঙ্গে রথযাত্রায় মুখ পুড়েছে। কাল রাত থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিবিআই নিয়ে তোপ দাগছেন। আর সেই সুরে সুর মিলিয়ে একজোট হচ্ছেন রাহুল গাঁধী থেকে প্রায় সব বিরোধী নেতাই। এমনকি বিরোধী জোটের থেকে দূরত্ব বজায় রেখেও আজ সিবিআই প্রশ্নে সরব হয়েছে নবীন পট্টনায়কের দলও। সংসদে এ দিন সকলেই সিবিআইকে বিরোধীদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে বলে অভিযোগ আনে। নবীনের দলের সাংসদ ভর্তৃহরি মহতাবও বিরোধীদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে বলেন, সিবিআইকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাজে লাগানো হচ্ছে। সম্প্রতি একটি ভুয়ো অর্থ লগ্নি সংস্থার মামলায় বিজেডি-র দুই নেতাকেও নোটিস পাঠিয়েছে সিবিআই।
এ দিন একমাত্র কে চন্দ্রশেখর রাও মুখ খোলেননি, কিন্তু খোঁচা দিয়েছে শিবসেনা। এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট কাল রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ না করলে একজোট বিরোধীদের ‘জোশ’ আরও বাড়বে, ভোটের আগে সিবিআই নিয়েও আর ভয় থাকবে না— এই ভয়ই এখন ঘিরে ধরেছে বিজেপিকে।
আরও পড়ুন: তথ্য ফাঁসের ভয়েই কি রাজীবের জন্য ব্যাকুল মমতা? প্রশ্ন রবিশঙ্করের, তোপ রাহুলকেও
দলের অন্দরেই এখন তাই গুঞ্জন শুরু হয়েছে, সিবিআই অস্ত্র কার্যত বুমেরাং হতে বসেছে। সিবিআইকে কাজে লাগানো হয়েছিল বিরোধীদের ছত্রভঙ্গ করার উদ্দেশ্যে, যাতে তারা বিজেপির সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে বাধ্য হয়। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, প্রায় সব বিরোধী দলই সিবিআই নিয়ে ভুক্তভোগী হয়ে আরও কাছাকাছি চলে আসছে। সিবিআই কার্যত ঐক্যবন্ধনের কাজ করছে। যে কারণে মমতা পাশে পেয়েছেন রাহুল-অখিলেশ-মায়া-কানিমোঝি-কেজরী-তেজস্বীদের। বিজেপির এক নেতাই আজ নাম
প্রকাশ না করে বললেন, ‘‘বিরোধী শিবিরে যত ফাটল ধরবে, বিজেপির লাভ। কিন্তু সিবিআই নিয়ে ভয় না পেয়ে উল্টে সকলে একজোট হচ্ছে। ঠিক যেমনটি উত্তরপ্রদেশে হয়েছে মায়া-অখিলেশে!’’ এঁরা যা ঘরোয়া ভাবে বলছেন, সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী তা-ই খোলাখুলি বলেছেন, ‘‘মমতা বরাবর লড়াকু। তাঁকে নিয়ে সতর্ক থাকা দরকার।’’
পরিস্থিতি সামাল দিতে বিজেপি অতএব ত্রিমুখী কৌশল নিল দিনভর। দিল্লিতে দফায় দফায় বিজেপি নেতাদের বৈঠক হল। প্রথমত তারা বোঝানোর চেষ্টা করল, কলকাতায় সিবিআই হানা নিয়ে মোদী-শাহের কোনও হেলদোল নেই। তদন্ত শুরু হয়েছে বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগেই। দ্বিতীয়ত গোটা বিরোধী শিবিরকেই ‘দুর্নীতির জোট’ বলে পাল্টা আক্রমণ করা হল।
তৃতীয়ত নতুন করে বিরোধী শিবিরে চিড় ধরানোরও চেষ্টা করা হল। দিল্লিতে রবিশঙ্কর প্রসাদরা টেনে আনলেন রাহুল গাঁধীর পুরনো মন্তব্য, যেখানে তিনি ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থা নিয়ে মমতার
সমালোচনা করেছিলেন। রবিশঙ্করের প্রশ্ন, রাহুল এখন কেন মমতার পাশে দাঁড়াচ্ছেন? টিপ্পনী কাটলেন, ‘‘মমতা তো জোটের নেতা হতে চাইছেন। রাহুল গাঁধী, মায়াবতী কী করবেন?’’ শুধু এই নয়। খাস কলকাতায় এসে প্রকাশ জাভড়েকর উস্কে দিলেন লাল ডায়েরি ও পেনড্রাইভের গল্প। সারদা তদন্তে রাজীব কুমার একটি লাল ডায়েরি এবং একটি পেনড্রাইভ হস্তান্তর করেননি বলে সিবিআইয়ের পুরনো অভিযোগ। সেই প্রসঙ্গ তুলে জাভড়েকর বলেন, ‘‘ওই ডায়েরি এবং পেনড্রাইভ পাওয়া গেলে মমতা নিজেই কি বিপদে পড়বেন? তাই ধর্নায় বসলেন? আগে যখন ওঁর মন্ত্রী-সাংসদেরা গ্রেফতার হয়েছিলেন, তখন তো ধর্না দেননি!’’
মমতাকে টক্কর দিতেই আইপিএস অফিসার ভারতী ঘোষকে আজ দলে যোগ দেওয়ানো হল। অভিনেতা বিশ্বজিৎও বিজেপি দফতরে ঘোরাফেরা করছিলেন। তাঁকে অবশ্য আজ দলে যোগ দেওয়ানো হয়নি। বিজেপির দাবি, পরের সপ্তাহে তৃণমূলের আরও তিন সাংসদ বিজেপিতে আসবেন।
এত কিছুর পরেও রবিশঙ্করকে প্রকাশ্যে বলতে হল, সিবিআই যেন একেবারেই নাথা না নোয়ায় আর বিজেপি কর্মীরাও যেন দমে না যান। অর্থাৎ? শাসকেরও আছে ভয়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy