—ফাইল চিত্র।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়, সারদা-রোজ ভ্যালির মতো চিট ফান্ড কেলেঙ্কারির তদন্তের প্রয়োজনেই যে রাজীব কুমারকে হেফাজতে নেওয়া দরকার, তা নিয়ে সিবিআইয়ের কাছে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা চাইল সুপ্রিম কোর্ট। সিবিআই-কে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নির্দেশ, ‘‘আমাদের সন্তুষ্ট করুন যে রাজীব কুমারকে গ্রেফতার করার আর্জি যুক্তিযুক্ত, তার পিছনে রাজনৈতিক কারণ নেই।’’
কী ভাবে সন্তুষ্ট করবে সিবিআই? প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের নির্দেশ, সিবিআই-কে দেখাতে হবে, তথ্যপ্রমাণ লোপাট ও নষ্ট করার সঙ্গে রাজীবের ‘সরাসরি যোগ’ রয়েছে। এ ব্যাপারে ‘সামান্যতম’ প্রমাণ থাকলেই রাজীবকে গ্রেফতারের অনুমতি দিতে কোনও বাধা নেই বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। তাঁর মন্তব্য, ‘‘এটা এমন কোনও বড় বিষয় নয়।’’
প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, কোনও তদন্তকারী অফিসার কি সিবিআইয়ের কাছে বিবৃতি দিয়েছেন যে তাঁরা রাজীবের নির্দেশেই তথ্যপ্রমাণ লোপাট বা নষ্ট করেছেন? সিবিআইয়ের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা দাবি করেন, তদন্তকারী অফিসাররা জানিয়েছেন, তাঁরা বিধাননগর পুলিশের তদানীন্তন ডিসি (ডিডি) অর্ণব ঘোষের থেকে নির্দেশ পেতেন। তাঁকে নির্দেশ দিতেন রাজীব। অর্ণবকে জেরা করা হয়েছে কি না, জানতে চান প্রধান বিচারপতি। মেহতা জানান, অর্ণব হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়ে জেরা এড়িয়ে গিয়েছিলেন। অন্য তদন্তকারী অফিসারদের বয়ান রয়েছে। বুধবার তা পেশ করা হবে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কোর্টের বক্তব্য, সিবিআইয়ের হাতে তথ্যপ্রমাণ তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রেও যে রাজীবের ভূমিকা ছিল, তা দেখাতে হবে। কারণ তদন্তকারী অফিসার ভুল দাবি করতে পারেন। আর রাজ্যের অন্যতম আইনজীবী বিশ্বজিত দেবের মন্তব্য, ‘‘সিবিআই এখনও পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টকে বিন্দুমাত্র সন্তুষ্ট করতে পারেনি।’’
সিবিআইয়ের প্রধান অভিযোগ ছিল, তারা সারদা-কাণ্ডের তদন্তভার নেওয়ার পরেও রাজ্যের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) অভিযুক্তদের সম্পূর্ণ ‘কল ডিটেল রেকর্ড’ তাদের হাতে তুলে দেয়নি। সুদীপ্ত সেন-দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের গ্রেফতারের আগে একটা বড় সময়ের কল ডিটেল রেকর্ড দেওয়া হয়নি। সুদীপ্ত ও দেবযানীর কাছ থেকে আটক হওয়া চারটি মোবাইল ও একটি ল্যাপটপ ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়নি। তা ফেরত দিয়ে দেওয়া হয়।
মেহতার অভিযোগ, দেবযানী সিবিআই-কে জানিয়েছিলেন, মিডল্যান্ড পার্কে সারদার দফতরে নগদ লেনদেনের হিসেব রাখা থাকত। ‘বিরাট, বিরাট ব্যক্তি’-দের কাকে কত টাকা দেওয়া হয়েছে, তার ডায়েরিও রাখা থাকত। ‘পঞ্জি স্কিম’-এ এই সব প্রভাবশালীদের কালো টাকা লগ্নি করা হত। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা জড়িত ছিলেন। সেই ডায়েরি ও নথি সিট আটক করেছিল কি না, এবং আটক করলে কেন তা সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি, তার উত্তর মেলেনি। মেহতার অভিযোগ, এ নিয়ে শিলংয়ে রাজীবকে প্রশ্ন করা হলে তিনি অধস্তনদের উপর দায় ঠেলে দেন।
মেহতা আজ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন। কলকাতার পুলিশ কমিশনারের বাড়িতে সিবিআই অফিসারদের হেনস্থার ছবি দেখিয়ে তাঁর প্রশ্ন, রাজীব কুমারের বাড়িতে কী এমন ছিল যে সিবিআই অফিসারদের উপর হামলা চালানো হল? কী কারণে মুখ্যমন্ত্রীকে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের নিয়ে ধর্নায় বসতে হল?
এই অভিযোগ তুলতে গিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে সিবিআই-কে। প্রধান বিচারপতি জানতে চান, সিবিআইয়ের কাছে কি তল্লাশির পরোয়ানা ছিল? মেহতা জানান, ছিল না। তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়েছিলেন। প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘‘যদি সিবিআইয়ের সন্দেহই হয় যে ওই বাড়িতে কিছু আছে, তা হলে তল্লাশির পরোয়ানা নেয়নি কেন?’’
মেহতা বলেন, সুদীপ্ত সেনের মালিকানাধীন তারা টিভি বন্ধ হয়ে যাওয়ার মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে কর্মীদের বেতন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সিট প্রধান হিসেবে রাজীব কুমার এ বিষয়েও কোনও তদন্ত করেননি।
সুপ্রিম কোর্টই রাজীবকে শিলংয়ে সিবিআইয়ের মুখোমুখি হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু তাঁকে গ্রেফতার করা যাবে না বলে রক্ষাকবচের ব্যবস্থাও করে দিয়েছিল। মেহতার অভিযোগ, রাজীব সেই রক্ষাকবচের অপব্যবহার করেছেন। উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন, উত্তর দেননি অথবা উদ্ধত উত্তর দিয়েছেন। রাজীব আগেই সুপ্রিম কোর্টে দাবি তুলেছেন, তাঁর জেরার ভিডিয়ো রেকর্ডিং আদালতে পেশ করা হোক। প্রধান বিচারপতির বক্তব্য, আদালতকে বুঝতে হবে কী ভাবে রাজীব কুমার অসহযোগিতা করেছেন। কী ভাবে তিনি রক্ষকবচের অপব্যবহার করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy