চিন্তিত। মুম্বইয়ে অনুরাগ কাশ্যপ। ছবি: পিটিআই।
ভোটের অঙ্কই কি ‘উড়তা পঞ্জাব’ নিয়ে অতি সতর্কতার জন্ম দিল, প্রশ্নটা বিভিন্ন শিবিরে ঘুরপাক খাচ্ছে।
এবং সেটা অকারণ নয়। পঞ্জাবে অকালি দল নিজেই জল্পনাটা উস্কে দিয়েছে। আর ন’মাস বাদেই পঞ্জাবে বিধানসভা ভোট। শাসক অকালি দলের অভিযোগ, ভোটের আগে তাদের বিপাকে ফেলতেই নাকি গোটা পঞ্জাবকে মাদক কারবারের সঙ্গে একাত্ম করে দেখানো হয়েছে অভিষেক চৌবে পরিচালিত ছবিটিতে। এটা রাজনৈতিক চক্রান্ত ছাড়া কিছু নয় বলেই অকালি নেতাদের দাবি।
অকালি দল কেন্দ্রে বিজেপির জোটসঙ্গী। অতএব দুয়ে দুয়ে চার করতে পিছপা হচ্ছে না বিরোধী দলগুলোও। ছবিটিকে রুখে দিয়ে সরকার বাস্তবকে অস্বীকার করছে বলে রাহুল গাঁধী, অরবিন্দ কেজরীবালদের টুইট ইতিমধ্যেই ঝড় তুলেছে। কংগ্রেস এবং আপ, উভয়েরই দাবি, শরিককে তুষ্ট রাখতেই বিজেপির তরফে সেন্সর বোর্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ‘উড়তা পঞ্জাব’ নিয়ে কড়া হতে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই কেন্দ্র এ কথা মানতে চায়নি। তথ্য-সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী রাজ্যবর্ধন রাঠৌরের বক্তব্য, সেন্সর বোর্ড তার কাজ নিজের মতো করে। সরকার তাতে নাক গলায় না। তথ্য-সংস্কৃতি মন্ত্রী অরুণ জেটলি অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন।
কিন্তু ঘটনা হল, বোর্ড প্রধান পহলাজ নিহালনির গলাতেই যে দলীয় রাজনীতির সুর! তিনি তো ছবির প্রযোজক অনুরাগ কাশ্যপকে তোপ দেগে বলে বসেছেন, এ ছবির পিছনে টাকা ঢেলেছে অরবিন্দ কেজরীবালের আপ! অনুরাগ কথাটা নির্জলা মিথ্যে বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। বলিউডের অন্য প্রযোজক-পরিচালকেরা দাবি করেছেন, অনুরাগের কাছে নিহালনিকে ক্ষমা চাইতে হবে।
নিহালনির সঙ্গে প্রথম থেকেই বলিউ়ডের সংঘাত বাধছে, এ কথা সত্য। বারবারই তাঁর নীতি-পুলিশি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রশ্ন উঠছে, তাঁর মোদী-ভক্তি নিয়েও। তবে এটাও ঘটনা, এ দেশে সেন্সর বোর্ডে বরাবরই শাসক দলের ঘনিষ্ঠরা দলে ভারী থেকেছেন। এবং নানা ছুতোয় নানা লবি প্রায়শই তাদের
ভাবমূর্তিতে কালি লাগছে বলে বিভিন্ন ছবি নিয়ে খড়গহস্ত হয়ে থাকে। তার কিছু কিছু সেন্সরের প্রশ্রয়ও পায়। যেমন সঞ্জয় লীলা বনসালি ছবির নাম ‘রামলীলা’ দিয়ে রামের অসম্মান করেছেন বলে দাবি উঠেছিল।
সেটা ইউপিএ আমলেরই কথা। সে বার বনসালিকে ‘রামলীলা’-র আগে ‘গোলিয়োঁ কা রাসলীলা’ শব্দবন্ধ জুড়ে নিতে হয়েছিল।
আবার, এ সব বাদ দিয়েও যৌনতা এবং রাজনৈতিক স্পর্শকাতরতার প্রশ্নে সব জমানাতেই কমবেশি ছবির উপরে কাঁচি চলেছে। সত্যজিৎ রায়ের ‘সিকিম’ দীর্ঘদিন নিষিদ্ধ ছিল। জরুরি অবস্থায় নিষিদ্ধ হয়েছিল ‘আঁধি’।
বর্তমানে বিজেপি সরকারও সেন্সর বোর্ডকে নিজেদের রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ। পঞ্জাবে ভোটের প্রাক্কালে সেই বিতর্ক আরও জোরদার হচ্ছে। বিজেপি শিবিরও ‘উড়তা পঞ্জাব’-এর মধ্যে রাজনৈতিক অভিসন্ধি নিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে। কোনও কোনও মহলে চাউর করা হচ্ছে, বিহারে লালু জমানার শেষ দিকে ‘গঙ্গাজল’ ছবিটিও ‘জঙ্গল রাজ’কে বেআব্রু করার লক্ষ্যে ব্যবহার করা হয়েছিল। প্রকাশ ঝা-এর সঙ্গে লালুপ্রসাদের তৎকালীন প্রতিদ্বন্দ্বী নীতীশ কুমারের ঘনিষ্ঠতা নিয়েও তখন প্রশ্ন ওঠে।
এ বারে টানা বিতর্কের মুখে সেন্সর বোর্ডের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে সম্প্রতি পরিচালক শ্যাম বেনেগালের নেতৃত্বে একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। কমিটি তার রিপোর্ট জমা দিয়েছে। তাতে ছবি পারতপক্ষে কাটছাঁট না-করার পক্ষেই সওয়াল করা হয়েছে। তার বদলে কোন ছবির দর্শক কারা সেটা চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। তার পরেও ‘উড়তা পঞ্জাব’-এর উপরে সেন্সর-কাঁচির জেরে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে হতাশা ঘন হয়েছে। শ্যাম বেনেগালকেও ছবিটি দেখানো হচ্ছে। তবে ছবিটি দেখার আগে তিনি কিছু বলতে চাননি।
আরও পডুন
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy