Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

কথাই চাইছে কেন্দ্র, তাই চিন সফরে ডোভালের সঙ্গী জয়শঙ্করও

চিনে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিজয় কেশব গোখলে চিনা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে যৌথ এক বিবৃতির খসড়া তৈরি করেছেন। ইতিমধ্যে দু’পক্ষে কূটনৈতিক দৌত্য শুরুও হয়ে গিয়েছে। এই বিবৃতিতে এক দিকে ভারত বলবে, ভুটানের ডোকা লা-তে সম্প্রতি পাঠানো অতিরিক্ত সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে ভুটানের স্থিতাবস্থা রক্ষার প্রস্তাব মেনে চিনও অতিরিক্ত সেনা প্রত্যাহার করে নেবে।

নাথুলা সীমান্তে। ছবি: এএফপি।

নাথুলা সীমান্তে। ছবি: এএফপি।

জয়ন্ত ঘোষাল
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৭ ০৪:৪৫
Share: Save:

চাপের মুখে চিন নিয়ে আগ্রাসী রণকৌশল থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে শেষ পর্যন্ত আলোচনার পথেই হাঁটতে চলেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। চলতি সঙ্কট নিরসনে আগামী সপ্তাহে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালকে সঙ্গে নিয়ে বেজিং যাচ্ছেন বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর।

চিনে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিজয় কেশব গোখলে চিনা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে যৌথ এক বিবৃতির খসড়া তৈরি করেছেন। ইতিমধ্যে দু’পক্ষে কূটনৈতিক দৌত্য শুরুও হয়ে গিয়েছে। এই বিবৃতিতে এক দিকে ভারত বলবে, ভুটানের ডোকা লা-তে সম্প্রতি পাঠানো অতিরিক্ত সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে ভুটানের স্থিতাবস্থা রক্ষার প্রস্তাব মেনে চিনও অতিরিক্ত সেনা প্রত্যাহার করে নেবে। আবার আলোচনার মাধ্যমে বিতর্কের নিরসন ঘটানোর ব্যাপারে দায়বদ্ধতা প্রকাশ করে দু’দেশই তাদের নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগকে গুরুত্ব দেবে। ভারত অবশ্য এই প্রস্তাবে চিনের কাছ থেকে একই সঙ্গে আশ্বাস চাইবে যে, ডোকা লা-য় সড়ক নির্মাণ করবে না তারা। ডোভাল তো চাপ বাড়াতে এই প্রস্তাবও রাখতে চান, যাতে বলা হবে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে সিল্ক রুটের নামে সড়ক বানানোর কাজ শুরু করবে না চিন।

আরও পড়ুন: চিনের ভূমিকায় বাড়ছে সমস্যা, দাবি মেহবুবার

তবে বিদেশ মন্ত্রকের একটি অভিমত হল, এ বারের সফরে বিতর্ক নিরসনকে ভুটান-কেন্দ্রিক রাখাই ভাল। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের প্রসঙ্গ আনলে চিন আবার অরুণাচলকে টেনে আনতে পারে। সে ক্ষেত্রে আলোচনা ভেস্তে যেতে পারে। বরং এ যাত্রা আলোচনা সফল হলে আকসাই চিন, অরুণাচলপ্রদেশের একাংশ ও অন্য বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা শুরু করা যেতে পারে।

বিদেশ মন্ত্রক বলছে, গত কাল ও আজ সর্বদলীয় বৈঠক খুবই ইতিবাচক আবহে হয়েছে। যদিও কূটনীতিকদের মতে এর আসল কারণ হল, চাপের মুখে চিন নিয়ে তাঁর আগ্রাসী ‘একলা চলো রে’ নীতি সম্পূর্ণ বদলে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন মোদী। তাই দু’দিন ধরে সর্বদলীয় বৈঠকে ঐকমত্য রচনায় সচেষ্ট তিনি। যাতে সোমবার থেকে শুরু হতে চলা সংসদ অধিবেশনে চিন নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনাকে কিছুটা লঘু করে দিতে পারে কেন্দ্র। বলতে পারে, গণতান্ত্রিক কারণেই চিনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সেপ্টেম্বরে ‘ব্রিকস’ বৈঠকে যোগ দিতে চিনে যাওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। উত্তেজনার পারদ এতটাই চড়েছিল যে, ট্র্যাক-টু চ্যানেলের মাধ্যমে বৈঠক বাতিলের হুমকি পর্যন্ত দিয়েছিল চিন। দ্বিপাক্ষিক সংঘাতের জন্য একটি বহুপাক্ষিক বৈঠক বাতিল হওয়া ভারতের পক্ষে ভাল হতো না। অন্যান্য প্রতিবেশী রাষ্ট্র, এমনকী ভুটানেও চিনের প্রভাব ক্রমবর্ধমান। এই পরিস্থিতিতে তাই বিদেশসচিবের চিন সফরে বিরোধীরাও মনে করছেন, রাজীব-বাজপেয়ীর কূটনীতির রাস্তাতেই হয়তো ফিরে আসছেন নরেন্দ্র মোদী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE