সরকারের ইনিংস শেষ হয়ে আসছে। বছরে ২ কোটি চাকরির লক্ষ্যে পৌঁছনোর ওভার প্রতি ‘আস্কিং রেট’ বাড়ছে।
পিচ ভাঙছে। বল ঘুরছে। উল্টো দিক থেকে ধেয়ে আসছে রাহুল গাঁধী নামক বোলারের গুগলি-প্রশ্ন, ‘‘বছরে ২ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি কোথায় গেল?’’ টালমাটাল ইনিংসকে আরও বেকায়দায় ফেলে দিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকড়ীর ‘চাকরিই তো নেই’ মন্তব্যে তো রান-আউট হওয়ার জোগাড়।
ম্যাচ বাঁচাতে নরেন্দ্র মোদী সরকার এ বার হন্যে হয়ে যে কোনও ভাবে হিসেব মেলাতে মাঠে নেমে পড়ল। আপাতত দু’ভাবে চাকরি বা কাজের পরিসংখ্যান খুঁজবে কেন্দ্র।
একদিকে, অসংগঠিত ক্ষেত্রের আওতায় খুব ছোট কারখানা, যেখানে ৯ জন বা তারও কম সংখ্যক কর্মী কাজ করেন, তার মোট কর্মী সংখ্যার হিসেব কষা হবে। পাশাপাশি, গৃহবধূরা বাড়িতে যে সময় ঘরকন্নার কাজ করছেন, তারও আর্থিক মূল্য মাপার কাজ শুরু হবে।
রাহুল গাঁধী আজও চাকরি নিয়ে মোদীকে নিশানা করেছেন। কংগ্রেসের সংসদীয় দলের বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘দেশের যুবরা রোজগারের সুযোগের অভাবে অস্থির হয়ে পড়ছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিজেই বলছেন, চাকরি নেই। মোদীর ২ কোটি চাকরি তৈরির ব্যর্থতা নিয়ে হাসাহাসি করাই যেত। কিন্তু এটা তো দেশের তরুণদের জন্য একটা ট্র্যাজেডি।’’
মোদী অনেক দিন ধরেই বোঝানোর চেষ্টা করছেন, চাকরি হচ্ছে ঠিকই, আসলে হিসেবটা ঠিক মতো কষা হচ্ছে না। সে সব চাকরির হিসেবও তিনি দেখাচ্ছেন নানা জনসভায়। কখনও বলছেন, পকোড়া ভাজাও কাজ। কখনও বলেছেন, অটো-ট্যাক্সি চালানোও চাকরি। মোদীর দেখানো সেই পথে হেঁটেই এ বার অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের সংখ্যার হিসেব কষা হবে।
এর রূপরেখা ঠিক করতে আগামী ১৬ অগস্ট কলকাতায় কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মী-শ্রমিক পরিসংখ্যান সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির বৈঠক বসছে। কমিটির চেয়ারম্যান তথা পরিসংখ্যানবিদ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এখন যে সব সমীক্ষা হচ্ছে, তার খামতি নিয়েও আলোচনা হবে।’’
এত দিন শ্রম মন্ত্রকের লেবার ব্যুরো ত্রৈমাসিক সমীক্ষা প্রকাশ করত। তাকে হাতিয়ার করেই বিরোধীরা তির ছুঁড়তেন। প্রশ্নের মুখে সেই সমীক্ষা প্রকাশই বন্ধ করে দিয়েছে মোদী সরকার। সরকারের যুক্তি, ওই সমীক্ষায় মাত্র আটটি প্রধান ক্ষেত্রে কত চাকরি হয়েছে, তার হিসেব করা হত। ফলে গোটা ছবি ধরা পড়ত না। বিশেষত অসংগঠিত ক্ষেত্রে কত জন কাজ করছেন, তা জানা যেত না। সেই কারণেই এ বার অসংগঠিত ক্ষেত্রে নজর।
অসংগঠিত ক্ষেত্রের এই সমীক্ষাতেও গোটা দেশের ছবি ধরা যাবে বলে মনে করছেন না পরিসংখ্যানবিদরা। ২,৫০০ গ্রাম ও ২,৫০০ শহরের কারখানা ও পরিষেবা ক্ষেত্রে কত জন কাজ করছে, তার অঙ্ক কষা হবে। কারণ গোটা দেশে সমীক্ষা চালানোর মতো লোক নেই। তাতেও ২০১৯ পেরিয়ে যাবে। গৃহবধূরা কতটা সময় বাড়িতে কাজ করছেন, তার আর্থিক মূল্য কত, সেই হিসেব শেষ হতে ২০২০-ও পেরিয়ে যেতে পারে।
মোদী সরকার অবশ্য এখন প্রভিডেন্ট ফান্ডের গ্রাহকদের সংখ্যা দিয়ে কত চাকরি হয়েছে, তা প্রমাণের চেষ্টা করছে। সিএমআইই (সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি) ২০১৭-’১৮-য় নতুন চাকরি বিশেষ হয়নি বলে দাবি করলেও প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরজিত ভাল্লার দাবি, ‘‘১.২৮ কোটি চাকরি হয়েছে।’’ যা শুনে কংগ্রেসের আনন্দ শর্মার কটাক্ষ, ‘‘যে হিসেবেই দেখান, মানুষ আর বিশ্বাস করবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy