একসঙ্গে: বিহারে নমামি গঙ্গে এবং জাতীয় সড়ক প্রকল্পের শিল্যানাস অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদী ও নীতীশ কুমার।শনিবার মোকামায়। ছবি: পিটিআই।
নিশানা ২০১৯। আর সেই লক্ষ্যেই আজ বিহার সফরে এসে নীতীশ কুমারকে সঙ্গে নিয়ে জোট-ঐক্যের ছবিটি তুলে ধরতে চাইলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
আজ সকালে বিমানবন্দরে গিয়ে তাঁকে স্বাগত জানান মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ। এর পরে দু’জনে একত্রেই কাটালেন কয়েক ঘণ্টা। পটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবার্ষিকী অনুষ্ঠান থেকে মোকামার জনসভা, সর্বত্রই দুজনে পাশাপাশি। এমনকী, সরকারি ঘোষিত কর্মসূচির বাইরে গিয়ে, নীতীশের অনুরোধে মোদী সোজা চলে গেলেন পটনার নতুন সংগ্রহশালায়। মিনিট কুড়ি ধরে ঘুরে দেখলেন। সঙ্গে গাইড, নীতীশ নিজেই। দুই নেতার নতুন সম্পর্কের এই রসায়ন সাধারণের সামনে মেলে ধরে জোট-বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী। ভূয়সী প্রশংসা করলেন নীতীশের নেতৃত্বের।মোদীর কথায়, ”নীতীশজির যোগ্য নেতৃত্বই বিহারকে উন্নত রাজ্যের পথে নিয়ে যাবে।”
আরও পড়ুন: নীতীশের অনুরোধ এড়ালেন প্রধানমন্ত্রী
বিহারে মহাজোট ভেঙে বেরিয়ে এসে বিজেপির সঙ্গে নীতীশের এটা সেকেন্ড ইনিংস। জেডিইউ-বিজেপি জোট সরকার গড়ার পরে এটাই মোদীর প্রথম পূর্ণাঙ্গ বিহার সফর। ‘বন্ধু’ নীতীশকে পাশে নিয়ে আজই তাঁর প্রথম জনসভাও।
প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এক বিজেপি নেতার দাবি, নীতীশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল। বিজেপির সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। মোদী সমস্ত পুরনো ঘটনা ভুলে গিয়ে নতুন করে সম্পর্ক তৈরি করতে দলকে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী এক বছরের মধ্যে লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যাবে। তাই দু’তরফের সম্পর্কের উষ্ণতা খুব জরুরি। যাতে সাধারণের কাছে ঠিক বার্তাটি যায়।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার দৌড়টা কোনও ভাবে কঠিন হয়ে পড়ুক, মোদী তা কোনও মতেই চান না। বিহারের ৪০টি লোকসভা আসনের মধ্যে ২২টি আসন বিজেপির দখলে। বাকি ৯টি রয়েছে শরিকদের হাতে। এই সংখ্যা অটুট রাখা তো বটেই, যতটা সম্ভব বাড়িয়ে নেওয়াই মোদীর লক্ষ্য। ইতিমধ্যেই আসন বণ্টনের সূত্র নিয়ে বিজেপি এবং জেডিইউয়ের মধ্যে আলোচনাও শুরু হয়ে গিয়েছে।
তবে রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের মতে, কোনও দলের সঙ্গে আসন সমঝোতা চুড়ান্ত করার আগে মোদী, অমিত শাহরা আসলে জল মাপতে চাইছেন। নীতীশ সঙ্গে আসায় বিহারের অন্য যে ছোট দলগুলি আগে থেকেই বিজেপির সঙ্গে, এমনকী কেন্দ্রে সরকারেও রয়েছে, তারা মোটেই খুশি হতে পারেনি। রাষ্ট্রীয় লোক সমতা পার্টির নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উপেন্দ্র কুশওয়াহা, হিন্দুস্থান আওয়াম মোর্চার জিতনরাম মাঁঝি রীতিমতো ক্ষুব্ধ। বিদ্রোহ ঘোষণা না করলেও নিজেদের ক্ষোভ গোপন করেননি তাঁরা। মুখে কিছু না বললেও লোকজনশক্তি পার্টির নেতা তথা কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ানের নীরবতাও অর্থবহ।
শুধু এনডিএ-র ছোট শরিকদের মধ্যে নয়, অসন্তোষ রয়েছে বিজেপির অন্দরেও। পটনার সাংসদ শত্রুঘ্ন সিন্হা, বেগুসরাইয়ের সাংসদ ভোলা সিংহরা বিজেপি নেতৃত্বের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। শত্রুঘ্ন তো প্রায় নিয়ম করেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তোপ দেগে চলেছেন। সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে আপাত রাশ থাকলেও তুষের আগুন যে ধিকিধিকি জ্বলছে, সে বিষয়েও ওয়াকিবহাল বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি নিত্যানন্দ রায় অবশ্য রাজনৈতিক ভাবে মোদী-নীতীশের সম্পর্ক নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তাঁর মতে, ‘‘প্রায় ৩০ বছর পরে রাজ্যে এবং কেন্দ্রে একই দলের সরকার রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই রাজ্যে উন্নয়নের কাজে গতি এসেছে। এর ফল সাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়াটাই প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর লক্ষ্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy