Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

জমি বিল নিয়ে শেষে পিছিয়েই গেল কেন্দ্র

ক্ষমতায় এসে জমি আইন সংশোধন করে সংস্কারের সাহসিকতা দেখাতে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু তা নিয়ে ঘরে-বাইরে প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়ে শেষমেশ ষোলো আনা পিছু হটতে বাধ্য হল তাঁর সরকার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৫ ০৩:২২
Share: Save:

ক্ষমতায় এসে জমি আইন সংশোধন করে সংস্কারের সাহসিকতা দেখাতে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু তা নিয়ে ঘরে-বাইরে প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়ে শেষমেশ ষোলো আনা পিছু হটতে বাধ্য হল তাঁর সরকার। আজ যৌথ সংসদীয় কমিটিতে সংখ্যালঘু হয়ে পড়ায় নতুন জমি বিলের ছ’টি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী তুলে নিল বিজেপি। ফলে সংস্কার প্রক্রিয়াও বড় ধাক্কা খেল বলে মনে করছে দল।

দীর্ঘ টানাপড়েনের পরে শতাব্দী প্রাচীন জমি আইন সংশোধন করেছিল ইউপিএ সরকার। কিন্তু তা নিয়ে তীব্র আপত্তি ছিল শিল্পমহলের। কারণ, এই আইন অনুযায়ী শিল্প সংস্থার জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে গেলে ৮০ শতাংশ জমির মালিকের সম্মতি প্রয়োজন। সরকার-বেসরকারি যৌথ প্রকল্পের জন্যও ন্যূনতম ৭০ শতাংশের সম্মতি দরকার। শিল্পমহলের অভিযোগ, এই ভাবে জমি মালিকদের সম্মতি জোগাড় করে জমি কেনা প্রায় অসম্ভব কাজ। সরকারি আমলারাও স্বীকার করছিলেন, নতুন আইনকে সামনে রেখে জমি অধিগ্রহণ করা এখন দুঃসাধ্য ব্যাপার।

ঠিক এই প্রেক্ষাপটেই সাহস দেখাতে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ঠিক যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার একদা শিল্প সংস্থার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপে জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। বুদ্ধবাবুর মতো মোদীর সঙ্গেও জনাদেশ রয়েছে। তিনি শিল্প করিডর, পরিকাঠামো, প্রতিরক্ষা কারখানা, আবাসন, গ্রামীণ পরিকাঠামো ও সরকারি-বেসরকারি প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের ক্ষমতা সরকারের হাতে এনে রাতারাতি বার্তা দিতে চেয়েছিলেন শিল্পমহলকে। সেই সঙ্গে এ-ও পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন, এই সব ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণের জন্য কৃষকদের প্রাক-সম্মতি নেওয়া হবে না। একই সঙ্গে এ সব ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণের ফলে কত লোকের জীবিকার উপর প্রভাব পড়ল, তারও সমীক্ষা করা হবে না। এ ছাড়াও বেসরকারি যে কোনও কর্তৃপক্ষ, বিশেষ করে হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরির জন্য সরকারই জমি পাইয়ে দিতে পারবে। বর্তমান আইন অনুযায়ী পাঁচ বছরের মধ্যে কাজ শুরু করা বাধ্যতামূলক ছিল, তা-ও বদলে আইনটিকে বিনিয়োগের অনুকূল করতে চেয়েছিল মোদী সরকার।

সব মিলিয়ে এই আইনের মোট ৯টি সংশোধন আনতে চেয়ে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। গত বছর নভেম্বরে প্রথম অধ্যাদেশটি জারি হয়। তার পর থেকে তৃতীয় বারের জন্য অধ্যাদেশ এনেও তা নতুন আইনে পরিণত করতে পারেনি তারা। কংগ্রেস তো বটেই, সঙ্গে তৃণমূল, সিপিএম, সমাজবাদী পার্টি থেকে শুরু করে গোটা বিরোধী পক্ষই এর বিরোধিতা শুরু করে। একই সঙ্গে আপত্তি আসতে শুরু করে সঙ্ঘ পরিবারের অনুগামী সংগঠনগুলির কাছ থেকেও।

ঘরে-বাইরে বিরোধিতার মুখে পড়া সরকারকে বাঁচাতে পারত যৌথ সংসদীয় কমিটি। কিন্তু আজ দেখা গেল, বিজেডি এবং এনডিএ শরিক শিবসেনাও বিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। ফলে দলের ১৪ জনের সমর্থন থাকলেও কমিটিতে সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে সরকার। এই অবস্থায় এ দিন ছ’টি গুরুত্বপূর্ণ সেই সঙ্গে তারা এও জানিয়ে দেয়, সংসদে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার বৃহত্তর স্বার্থে তৃণমূল কাল থেকে লোকসভা বয়কট করবে। তৃণমূলকে অনুসরণ করে সপা, এনসিপি, জনতা পরিবারের দলগুলিও লোকসভা বয়কটের সিদ্ধান্ত জানায়। লোকসভায় কংগ্রেসের মোট সদস্য সংখ্যা ৪৪। এর মধ্যে ২৫ জনকে সাসপেন্ড করার পর সনিয়া-রাহুল সহ ১৭ জনের এখনও সভায় থাকার কথা। কিন্তু আজকের দিনটিকে গণতন্ত্রের ‘কালো দিন’ বলে মন্তব্য করে সনিয়া জানিয়ে দেন, আগামী পাঁচ দিন তাঁরাও লোকসভায় গরহাজির থাকবেন। শুধু তা-ই নয়, বাম-এনসিপি ও জেডিইউ-এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাল সকাল ১০টায় গাঁধী মূর্তির পাদদেশে অবস্থান করবে কংগ্রেস। দুপুরে বিজেপির সদর দফতরের বাইরেও বিক্ষোভ দেখাবে দল। পাশাপাশি দলীয় তরফে জানানো হয়েছে, রাজ্যসভায় কংগ্রেস সাংসদরা কাল হাজির হলেও স্পিকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সেখানে ধুন্ধুমার বাধাবেন তাঁরা। তারই ইঙ্গিত দিয়ে কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহের হুমকি, ‘‘লোকসভায় সরকার সংখ্যার দাপটে বিরোধীদের দুরমুশ করতে চাইছে। রাজ্যসভায় কী করবে?’’

তা হলে পথ কোথায় সরকারের সামনে? সূত্রের খবর, বিজেপির কিছু নেতা বিকেলেই এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, স্পিকার যাতে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেন, সে জন্য যেন প্রধানমন্ত্রী তাঁকে কাল সরকারি ভাবে অনুরোধ করেন। তাতে শাস্তির সিদ্ধান্তটি যে আদতে স্পিকারের ছিল, সেটাও বোঝানো যাবে। সে দিক থেকে নাগা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে সরকারের চুক্তির পর আজ সন্ধ্যায় মনমোহন সিংহ ও মল্লিকার্জুন খার্গের সঙ্গে মোদী যে ভাবে ফোন করে কথা বলেছেন, তা প্রাসঙ্গিক বলেই মনে করা হচ্ছে।

তবে এতেও চিঁড়ে ভিজবে কিনা সংশয় রয়েছে। এ দিন রাজ্যসভায় হট্টগোলের মাঝেই বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ একটি বিবৃতি দেন। তাঁর দাবি, ললিত মোদীকে ভিসা পাইয়ে দিতে তিনি ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেননি। কিন্তু কোনও কথাই শুনতে রাজি হয়নি কংগ্রেস। বরং কংগ্রেস সংসদীয় দলের বৈঠক থেকে সনিয়া গাঁধী বুঝিয়ে দেন, এ বার সংঘাতের পথটাই বেছে নিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে সনিয়া যে সব মন্তব্য করেছেন, তা-ও তাৎপর্যপূর্ণ। দলীয় বৈঠকে সনিয়া বলেন, ‘‘কথা দেওয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী খোলামেলা। অথচ তাঁর বিদেশমন্ত্রী ও দুই মুখ্যমন্ত্রীর দুর্নীতি নিয়ে আজব রকম ভাবে চুপ করে রয়েছেন! ‘মন কি বাত’-এর চ্যাম্পিয়ন এখন মৌনব্রতের গর্তে ঢুকে গেছে!’’ সংসদে হট্টগোল করা নিয়ে জেটলিদের সমালোচনার জবাবে বলেন, ‘‘আগে যাঁরা সংসদ অচল করে রাখতেন, এখন তাঁরা সংসদে আলোচনা ও বিতর্কের জন্য লেকচার দিচ্ছেন! সরকার ও তার শীর্ষ নেতার হাবভাব এই যে, আমাদের কথা শোন, নইলে যাও! সংসদের বাইরেও এর জবাব দেবে কংগ্রেস।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE