Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সুপ্রিম কোর্টে হাজির হয়ে তোপের মুখে মুখ্যসচিব

দেখা যায়, মুখ্যসচিব যে উত্তর দিচ্ছেন, তাতে প্রধান বিচারপতি সন্তুষ্ট হচ্ছেন না। প্রধান বিচারপতির জেরার মুখে মুখ্যসচিব কখনও বলেছেন, ‘‘এখনই এত তথ্য নেই।’’ তাতেও কটাক্ষ শুনতে হয়েছে, ‘‘মুখ্যসচিব উত্তর দিতে না পারলে কী করণীয়।’’

শ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব মলয় কুমার দে।

শ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব মলয় কুমার দে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:০৯
Share: Save:

‘‘রাজ্যের শীর্ষ আমলাকে ডেকে পাঠিয়েছি। যদি রাজ্যের মুখ্যসচিব উত্তর দিতে না পারেন, তা হলে বলে দিন, আমাদের কী করণীয়?’’

প্রশ্নকর্তা প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। প্রশ্নবাণের মুখে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব মলয় কুমার দে।

দেখা যায়, মুখ্যসচিব যে উত্তর দিচ্ছেন, তাতে প্রধান বিচারপতি সন্তুষ্ট হচ্ছেন না। প্রধান বিচারপতির জেরার মুখে মুখ্যসচিব কখনও বলেছেন, ‘‘এখনই এত তথ্য নেই।’’ তাতেও কটাক্ষ শুনতে হয়েছে, ‘‘মুখ্যসচিব উত্তর দিতে না পারলে কী করণীয়।’’

চাপে পড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের মুখ্যসচিব দু’একবার ‘মাই লর্ড’ বলতে গিয়ে ‘ম্যাডাম’ বলে ফেলেন। সঙ্গে সঙ্গে ভুল শুধরে বললেন ‘সরি’। আইনজীবীদের মধ্যে মৃদু গুঞ্জন— ‘ফ্রয়েডিয়ান স্লিপ’!

পশ্চিমবঙ্গে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আদালত ভবন ও বিচারকদের বাসভবন তৈরিতে ‘ঢিলেমি’ দেখে মুখ্যসচিব ও অর্থসচিবকে তলব করেছিল শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। মুখ্যসচিব মলয় কুমার দে, অর্থসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী, বিচার সচিব সন্দীপ রায়চৌধুরী সুপ্রিম কোর্টে হাজির হলেও, রাজ্যের হলফনামা নিয়েও শীর্ষ আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করে। হলফনামা দেখে প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, ‘চতুরতার সঙ্গে হলফনামা তৈরি করা হয়েছে’।

রাজ্য সরকার হলফনামায় অভিযোগ তুলেছে, হাইকোর্টের তরফে ঠিক সময়ে প্রস্তাব আসেনি। এতে তোপের মুখে পড়েন কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আনন্দ কুমার মুখোপাধ্যায়ও। প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, নিম্ন আদালতের জন্য কতগুলি আদালত ভবন প্রয়োজন, তা ঠিক সময়ে কেন রাজ্য সরকারকে জানানো হয়নি। তিনি মন্তব্য করেন, ‘‘আপনি নিজেই গভীর নিদ্রায় থাকলে কী ভাবে রাজ্যেকে দোষ দেবেন?’’

রাজ্য হলফনামায় জানিয়েছে, রাজ্যে ৭৫টি আদালত ভবন ও ৩৯টি বাসভবন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু এর পরেও জেলায় নিম্ন আদালতের জন্য রাজ্যে ৪২২টি আদালতের ঘর দরকার। ৬৩০টি বাসভবন প্রয়োজন। রাজ্য জানিয়েছে, ২৩টি প্রকল্পে সরকারি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। একটির কাজ প্রায় শেষ। বাকিগুলি ২০২১-এর মধ্যে ধাপে ধাপে শেষ হবে। শুনে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘এতো হিমশৈলের চূড়া! দরকার ৪২২টি, তৈরি হচ্ছে ৭৫টি। তার মধ্যেও ২৩টির সবে ছাড়পত্র মিলেছে!’’

প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, যে ২৩টি প্রকল্প তৈরি হচ্ছে, তার মধ্যে কতগুলি ঘর রয়েছে? মুখ্যসচিব উত্তর দিতে পারেননি। বাকি ৪২২টি ভবন তৈরি নিয়ে রাজ্যের কী পরিকল্পনা, তা-ও বলতে পারেননি। কোন প্রকল্পের কাজ কতটা এগিয়েছে, তারও জবাব দিতে পারেননি।প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘‘আদালতের ঘর, বিচারকদের বাসভবন তৈরি করা কি রাজ্যের সাংবিধানিক দায়িত্ব নয়?’’

মলয়বাবু বলেন, ‘‘রাজ্য পুরোপুরি দায়বদ্ধ।’’ প্রধান বিচারপতি তাঁকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘আপনি আর কিছু বলতে পারেন কি? আপনি কি বলতে পারেন রাজ্য একেবারেই দায়বদ্ধ নয়?’’ দৃশ্যতই অসন্তুষ্ট প্রধান বিচারপতি মুখ্যসচিব, অর্থসচিব ও রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দেন, এক ঘণ্টার মধ্যে আলোচনা করে জবাব তৈরি করে আনুন।

পরে রাজ্য জবাব জমা দিলে প্রধান বিচারপতি জানিয়ে দেন, রাজ্যের জবাব খতিয়ে দেখা হবে। বৃহস্পতিবার ফের শুনানি হবে। মুখ্যসচিব ও অর্থসচিব অবশ্য ছাড়া পাননি। রাজ্যের আইনজীবী সুহান মুখোপাধ্যায় জানতে চেয়েছিলেন, বৃহস্পতিবারের শুনানির সময়ও আমলাদের থাকার প্রয়োজন রয়েছে কি না। প্রধান বিচারপতি জবাব দেন, ‘‘কী করে বলব, ওঁদের দরকার পড়বে কি না।’’ ফলে সচিবদের কলকাতা ফেরা হয়নি।

দিল্লিতে যখন রাজ্যের আমলারা প্রশ্নবাণে বিদ্ধ, তখন কলকাতায় রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের এ বিষয়ে কিছুই জানা নেই। প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘‘আজ তো শুনানি হয়নি। আপনাদের কাছেই শুনছি। আমি তো জানি, আগামিকাল শুনানি।’’

যা বললেন প্রধান বিচারপতি
• যদি রাজ্যের মুখ্যসচিব উত্তর দিতে না পারেন, তা হলে বলে দিন, আমাদের কী করণীয়?
• চতুরতার সঙ্গে হলফনামা তৈরি হয়েছে। অনেক প্রশ্নের জবাব নেই।
• আদালতের ঘর ও বিচারকদের বাসভবন তৈরি করা কি রাজ্যের সাংবিধানিক দায়িত্ব নয়?
• রাজ্য দায়বদ্ধ বলা ছাড়া আর কিছু বলতে পারেন কি? আপনি কি বলতে পারেন, রাজ্য একেবারেই দায়বদ্ধ নয়?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chief Secretary Ranjan Gogoi Supreme Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE