Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

‘ঘরোয়া’ বৈঠকের শেষে শান্তির সাফল্য মোদী ও শি-র

উহান সম্মেলন করার প্রস্তাব এবং প্রাথমিক পরিকল্পনা মোদীর হলেও তাতে সাগ্রহে হাত বাড়ালেন শি। না হলে এই ধরনের মেগা আয়োজন সম্ভব হত না বলেই মনে করা হচ্ছে।

কাছাকাছি: চিনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরের এক বাগানে নরেন্দ্র মোদী এবং শি চিনফিং। শনিবার। ছবি: এপি।

কাছাকাছি: চিনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরের এক বাগানে নরেন্দ্র মোদী এবং শি চিনফিং। শনিবার। ছবি: এপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৮ ০৪:১৮
Share: Save:

ঘরোয়া রাজনীতিতে নানা চাপ রয়েছে মোদী সরকারের উপর। তার সঙ্গে ঘাড়ের কাছে প্রতিবেশী ড্রাগনের গরম নিঃশ্বাস ত্রাস আরও বাড়িয়ে তুলেছিল। লোকসভা নির্বাচনের আগে সব মিলিয়ে চিনকে প্রশমিত করাটা অগ্রাধিকার হয়ে দাঁড়িয়েছিল বিজেপি সরকারের। আজ মধ্য চিনের উহানে দু’দিনের ‘ঘরোয়া’ বৈঠকের শেষে সে কাজে অনেকটাই সফল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

ঘরোয়া সংলাপে চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের সঙ্গে ইতিবাচক তরঙ্গ তৈরি করা সম্ভব হয়েছে বলেই দাবি করছে দিল্লি। ডোকলামে টানা ৭২ দিন যুদ্ধংদেহি অবস্থান নেওয়ার পর পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল সাউথ ব্লক। আজ কিন্তু সীমান্তে শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখা থেকে শুরু করে আফগানিস্তানে চিনের সঙ্গে যৌথ অর্থনৈতিক প্রকল্প গড়ার প্রতিশ্রুতিও শি-এর কাছ থেকে আদায় করে নেওয়া সম্ভব হয়েছে। কৃষিপণ্য এবং ওষুধ রফতানি বাড়িয়ে ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ঘাটতি কমানোর জন্য শি-কে অনুরোধ করেছেন মোদী। স্থির হয়েছে, দু’দেশের মধ্যে এই গোত্রের ঘরোয়া বৈঠক ঘন ঘন করা হবে আস্থা বাড়ানোর লক্ষ্যে।

কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, আলোচনার এই মডেলটি প্রথাগত দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠকের থেকে একেবারেই পৃথক। শীর্ষ বৈঠক করার জন্য যে সামগ্রিক প্রস্তুতি প্রয়োজন, এ ক্ষেত্রে তা জরুরি নয়। খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে সম্পর্কের অক্সিজেনটুকু বহাল রাখাটাই এর উদ্দেশ্য। শীর্ষ বৈঠকের প্রোটোকল মাফিক লিখিত যৌথ প্রতিশ্রুতির দায়ও এখানে থাকে না।

ভারত-চিন সম্পর্ক যে ভাবে তলানিতে চলে গিয়েছিল, তাতে এ রকম একটি বিধিনিষেধের শৃঙ্খলমুক্ত মঞ্চ প্রয়োজন ছিল মোদীর, যেখানে তিনি শি-এর কাছে থেকে প্রার্থিত শান্তি-সনদটি আদায় করে নিতে পারেন। ডোকলামের জের টেনে চাপ আরও বাড়াতে পারত বেজিং। তবে কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, উহান সম্মেলন করার প্রস্তাব এবং প্রাথমিক পরিকল্পনা মোদীর হলেও তাতে সাগ্রহে হাত বাড়ালেন শি। না হলে এই ধরনের মেগা আয়োজন সম্ভব হত না বলেই মনে করা হচ্ছে।

গত দু’দিনে দফায় দফায় মোদীর সঙ্গে কথা বলেছেন শি। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, এর প্রধান কারণ দু’টি। প্রথমত, পশ্চিমের দেশগুলি যখন বাণিজ্যের প্রশ্নে রক্ষণশীল মনোভাব নিচ্ছে এবং গোটা বিশ্ব জুড়েই চলছে অনিশ্চয়তা, তখন ভারতের বাজার চিনের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমেরিকার সঙ্গে চিন যখন বাণিজ্য-যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে, তখন ভারতের বাজারে বাড়তি বিধিনিষেধ তৈরি হওয়াটা অভিপ্রেত নয় তাদের। দ্বিতীয়ত, এশিয়া তথা গোটা বিশ্বের কূটনৈতিক নেতৃত্ব দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা ক্রমশ বাড়ছে চিনের। এশিয়ায় ভারতের মতো গুরুত্বপূর্ণ দেশকে কৌশলগত ভাবে নিজের প্রভাব-বলয়ের মধ্যেই রাখতে চাইছে বেজিং।

আজ সকালে উহানে সাংবাদিক সম্মেলন করে বিদেশসচিব বিজয় গোখলে জানিয়েছেন, ‘‘একে অন্যের স্পর্শকাতরতা, উদ্বেগ এবং আকাঙ্ক্ষার কথা মাথায় রেখে, মতপার্থক্যগুলি শান্তিপূর্ণ ভাবে মেটাতে দুই রাষ্ট্রনেতাই একমত হয়েছেন।’’ বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানানো হচ্ছে যে ডোকলামের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, তা নিশ্চিত করা নিয়েও কথা হয়েছে দু’পক্ষের। গোখলের কথায়, ‘‘দুই নেতা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যে যার সেনাকে কৌশলগত নির্দেশ দেবেন যাতে ভারত-চিন সীমান্তে পারস্পরিক যোগাযোগ বাড়ানো হয়। ওই এলাকায় যেন আস্থাবর্ধক আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE