Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

প্রধান বিচারপতির কথায় গুমোট কাটছে কোর্টের

সিবিআই প্রধান অলোক বর্মাকে ছুটিতে পাঠানো নিয়ে করা মামলার শুনানি চলছে সুপ্রিম কোর্টে। যে সিবিআই প্রধানকে নিয়োগ করেন প্রধানমন্ত্রী, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং লোকসভার বিরোধী দলের নেতা। এখন সেই বিরোধী দলের নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে। তাঁর হয়েই মামলা লড়ছেন সিব্বল।

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ।

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৮ ০২:১৩
Share: Save:

আপনি কে?

প্রশ্ন শুনে থতমত দুঁদে আইনজীবী কপিল সিব্বল। খোদ প্রধান বিচারপতির মুখে এমন প্রশ্ন শুনে কী বলবেন না বলবেন ঠিক করতে না পেরে বলে বসলেন, ‘‘আমি মিস্টার খড়্গে!’’

সিবিআই প্রধান অলোক বর্মাকে ছুটিতে পাঠানো নিয়ে করা মামলার শুনানি চলছে সুপ্রিম কোর্টে। যে সিবিআই প্রধানকে নিয়োগ করেন প্রধানমন্ত্রী, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং লোকসভার বিরোধী দলের নেতা। এখন সেই বিরোধী দলের নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে। তাঁর হয়েই মামলা লড়ছেন সিব্বল।

কিন্তু প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ যে আসলে রসিকতা করছিলেন, সেটি কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারলেন কংগ্রেসের আইনজীবী নেতা। সিব্বলের মুখে ‘আমি মিস্টার খড়্গে’ শুনে প্রধান বিচারপতি হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘তো আপনি বিরোধী শিবিরের সবথেকে বড় দলের নেতা? আপনার কথা তো ভুলেই গিয়েছিলাম!’’ রসিকতা বুঝে হেসে ফেললেন সকলেই।

পুরো দেড় মাসও হয়নি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন রঞ্জন গগৈ। কিন্তু তাঁর রসিকতার কাহিনি ছড়িয়ে পড়েছে আদালত চত্বরে। শুনানির ফাঁকে ফাঁকে টুকরো রসিকতা করে বহু সময়েই আদালতের গুমোট কাটিয়ে দেন তিনি।

সিব্বলের মতোই অভিজ্ঞতা হল সলিসিটর জেনারেল তুষার মেটা-র। সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশনের (সিভিসি) হয়ে সওয়াল করছেন তিনি। গত সোমবারই তুষার মেটা আদালতকে সিভিসি-র রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। সেই তার ভিত্তিতেই আজ অলোক বর্মার মতামত জানতে চেয়ে তাঁকে রিপোর্টের প্রতিলিপি দিতে নির্দেশ দেয় আদালত। তখন তুষার মেটাও রিপোর্টটি চেয়ে বসেন। যেন বোঝাতে চাইলেন, তিনি সিভিসি-র রিপোর্টটি দেখেননি। তাঁর আর্জি শুনেই প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনি কে?’’ তুষার মেটা বলেন, সিভিসির কৌঁসুলি। মুচকি হেসে প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘আপনি সিভিসি হলে আপনিই তো রিপোর্টের লেখক!’’ পরে অবশ্য রিপোর্টটি তাঁকেও মুখবন্ধ খামে দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত।

আর এক প্রবীণ আইনজীবী রাজীব ধওয়ানের মক্কেলকে আবার পরামর্শ দিলেন আন্দামানে ক’দিন ঘুরে আসার। ঘটনা হল, সিবিআই-এর ডেপুটি সুপার অজয় কুমার বস্‌সির কৌঁসুলি রাজীব ধওয়ান। বস্‌সি ক’দিন আগেই ছুটিতে পাঠানো সিবিআইয়ের স্পেশাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন। বস্‌সিকে আন্দামানে বদলি করেছেন সিবিআইয়ের নতুন ডিরেক্টর। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধেই আদালতে গিয়েছেন বস্‌সি।

আজ ধওয়ান সেটি স্মরণ করাতেই প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, ‘‘কোথায় বদলি হয়েছে?’’ কৌঁসুলি জানান, পোর্টব্লেয়ারে। প্রধান বিচারপতি হাসিমুখেই বলেন, ‘‘ওহ! যাওয়ার জন্য ভাল জায়গা। ক’দিন থাকুন সেখানে।’’ পরে অবশ্য বস্‌সি এবং খড়্গের আবেদন মঙ্গলবার বিবেচনার কথা বলেন প্রধান বিচারপতি।

চলতি সপ্তাহেই অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল অনুযোগের সুরে বলেছিলেন, মামলাকারীদের কথা না শুনে যেন তা খারিজ করা না হয়। রাফাল মামলার শুনানির দিন আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণকে দীর্ঘক্ষণ বলার সময় বাধা দেন বেণুগোপাল। প্রধান বিচারপতি তাঁকে বলেন, ‘‘আমি তো আপনার পরামর্শই মেনে চলছি। আপনিই তো সকলের কথা শুনতে বলেছিলেন।’’ মোক্ষম জবাব। অগত্যা চুপ করে যান অ্যাটর্নি জেনারেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE