কলেজে জাতীয় পতাকা উত্তোলনে সময় ঘটনার সূত্রপাত। ছবি: সংগৃহীত।
সংবিধানে কোথাও এমন নির্দেশ নেই। এমনকী, দেশের প্রধানমন্ত্রীও জুতো পরে জাতীয় পতাকা তোলেন। সেনা কর্তারাও বাদ যান না। তা হলে তিনি কী ভাবে অন্যায় ‘কাজ’ করলেন? এই প্রশ্নটাই ছুড়েছিলেন মহম্মদ ইয়াকিন। কিন্তু, লাভ হয়নি। জুতো পরে কলেজে জাতীয় পতাকা তোলার ‘অভিযোগে’ ছাড় পেলেন না তেলঙ্গানার নিজামাবাদের জুনিয়র সরকারি কলেজের ওই অধ্যক্ষ।
আরও পড়ুন
উত্তপ্ত ভারত-চিন সীমান্ত, লাদাখে
পাথর ছুড়ে সংঘর্ষ দুই বাহিনীর মধ্যে
সংবাধীনতা দিবসের দিন তাঁকে কলেজের ভিতরে হেনস্থা তো করা হলই, জোর করে বলানো হল ‘জয় শ্রী রাম’ এবং ‘ভারত মাতা কি জয়’। এখানেই শেষ নয়, ওই অধ্যক্ষকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকিও দিল হেনস্থাকারীরা। গোটা ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে বিজেপি-র ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের বিরুদ্ধে। ঘটনার কথা জানিয়ে পুলিশে লিখিত ভাবে অভিযোগ করেন ইয়াকিন। মঙ্গলবারের এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে।
দেখুন সেই হেনস্থার ভিডিও
আরও পড়ুন
হিজবুলকে ‘সন্ত্রাসবাদী সংগঠন’ বলে ঘোষণা আমেরিকার
ঘটনার সূত্রপাত স্বাধীনতা দিবসের সকালে। ওই দিন তেলঙ্গানার নিজামাবাদের জুনিয়র সরকারি কলেজে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করছিলেন প্রিন্সিপাল মহম্মদ ইয়াকিন। সেই সময় ভিড়ের ভিতর থেকে কেউ এক জন আওয়াজ তোলেন, ‘‘জুতোটা খুলে পতাকা তুলুন।’’ এর পরে আরও কয়েক জন বেশ জোরেই প্রিন্সিপালকে জুতো খুলে পতাকা তোলার কথা বলেন। তত ক্ষণে ইয়াকিনের পতাকা তোলা হয়ে গিয়েছে। শুরু হয়েছে জাতীয় সঙ্গীত। এর মধ্যেই হঠাত্ ভিড়ের ভিতর থেকে বেরিয়ে কয়েক জন তাঁকে আক্রমণ করেন। কেন জুতো খুলে পতাকা তোলা হয়নি সেই অভিযোগে ওই প্রিন্সিপালকে ধাক্কাধাক্কির সঙ্গে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ থেকে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ, দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
থেকে সেনাবাহিনীর জওয়ানরা— জাতীয় পতাকা তোলার সময় সকলের পায়েই কিন্তু জুতো! ছবি: সংগৃহীত।
জাতীয় সঙ্গীতের মাঝেই তাঁকে টেনেহিঁচড়ে সরিয়ে আনা হয়। ইয়াকিনের অভিযোগ, তাঁকে জোর করা হয় ‘ভারত মাতা কি জয়’ বলার জন্য। সেখানেই থামেনি হেনস্থাকারীরা। মুসলমান ওই শিক্ষককে বলতে বলা হয়, ‘জয় শ্রী রাম’। গোটাটার জন্যই তাঁকে জবরদস্তি করা হয়। তিনি তা বলতে রাজি না হওয়ায়, হেনস্থাকারীরা ইয়াকিনকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। ইয়াকিনের দাবি, তিনি হেনস্থাকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। ভারতীয় আইনে এমন কথা বলা নেই যে, জুতো খুলেই পতাকা উত্তোলন করতে হবে। এমনকী, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও জুতো পরে পতাকা উত্তোলন করেন লালকেল্লায়। শুধু তাই নয়, হেনস্থাকারীদের ইয়াকিন সেনা অফিসারদের উদাহরণও দিয়েছিলেন বলে দাবি করেন। কিন্তু, কোনও কথাতেই চিঁড়ে ভেজেনি।
জুতো খুলেই কি পতাকা তুলতে হবে? কী বলছে ভারতীয় আইন বিশ্বজিত্ দেব অ্যাডভোকেট জেনারেল, মিজোরাম জাতীয় পতাকা প্রসঙ্গে ভারতীয় আইনে অনেক কথাই বলা হয়েছে। পতাকা কেমন হবে এবং পতাকা নিয়ে কী কী করা যাবে না, সে বিষয়েও নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু জুতো পরে পতাকা উত্তোলন করা যাবে কি না, সে সম্পর্কে স্পষ্ট ভাবে কোনও নির্দেশিকা নেই। ভারতের রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা কোনও রাজ্যের রাজ্যপাল— কাউকেই কখনও জুতো খুলে পতাকা উত্তোলন করতে দেখেছি, এমনটা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। সবিস্তার পড়তে ক্লিক করুন...
জুতো খুলেই কি পতাকা তুলতে হবে? কী বলছে ভারতীয় আইন বিশ্বজিত্ দেব অ্যাডভোকেট জেনারেল, মিজোরাম জাতীয় পতাকা প্রসঙ্গে ভারতীয় আইনে অনেক কথাই বলা হয়েছে। পতাকা কেমন হবে এবং পতাকা নিয়ে কী কী করা যাবে না, সে বিষয়েও নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু জুতো পরে পতাকা উত্তোলন করা যাবে কি না, সে সম্পর্কে স্পষ্ট ভাবে কোনও নির্দেশিকা নেই। ভারতের রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা কোনও রাজ্যের রাজ্যপাল— কাউকেই কখনও জুতো খুলে পতাকা উত্তোলন করতে দেখেছি, এমনটা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। সবিস্তার পড়তে ক্লিক করুন...
হেনস্থাকারীদের মধ্যে এক জন ভিডিও তুলছিলেন। সেই ভিডিওতেই দেখা গিয়েছে, ইয়াকিনকে হেনস্থা করা হচ্ছে। এমনকী, তাঁকে যে বিভিন্ন স্লোগান দিতে বাধ্য করা হয়েছে, সেটাও দেখা গিয়েছে। ‘পাকিস্তান চলে যাও’ বলেও শোনা যায়। এর পর রাজ্য পুলিশে লিখিত ভাবে অভিযোগ দায়ের করেন ইয়াকিন। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে ১৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে কলেজ লাগোয়া কয়েক জন বাসিন্দা এবং অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)-এর কয়েক জন সদস্য রয়েছে। হায়দরাবাদের সাংসদ তথা এআইএমআইএম-এর প্রধান আসাদুদ্দিন কোয়াইসির অভিযোগ, গোটা ঘটনার পিছনে বিজেপি এবং এবিভিপি-র হাত রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy