Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মেয়ের স্মৃতিতে টাকা রাখবেন বিলকিস

১৭ বছর ধরে স্রেফ প্রাণ বাঁচাতে বাসা পাল্টাতে থেকেছেন, লড়াই ছাড়েননি গুজরাতের ওই মেয়ে। আগামী দিনে ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে এই রায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে তাঁর আশা। 

 সাংবাদিকদের মুখোমুখি বিলকিস বানো। বুধবার দিল্লিতে। নিজস্ব চিত্র

সাংবাদিকদের মুখোমুখি বিলকিস বানো। বুধবার দিল্লিতে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৯ ০২:১৫
Share: Save:

চোখের সামনে খুন হওয়া সাড়ে তিন বছরের যে মেয়েকে কখনও কবর দিতে পারেননি, তার স্মৃতিতেই ক্ষতিপূরণের কিছু টাকা সরিয়ে রাখতে চান বিলকিস বানো। যাতে তাকে মুঠি করে আইনের দরজায় কড়া নাড়তে পারেন। যাতে নিজের বড় মেয়েকে ওই টাকায় পড়িয়ে আইনজীবী হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন।

২০০২ সালের ৩ মার্চ গুজরাতে গণধর্ষণের শিকার হন বিলকিস। চোখের সামনে খুন হতে দেখেন পরিবারের ১৪ জন সদস্যকে। যার মধ্যে ছিল তাঁর সাড়ে তিন বছরের মেয়ে সালেহাও। ধর্ষিতা এবং খুন হন ওই পরিবারের আরও কয়েক জন মহিলা সদস্য। এর পর থেকে টানা ১৭ বছর আইনি লড়াইয়ের পরে অবশেষে বিলকিসকে ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য গুজরাত সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বলেছে, থাকার জন্য বাড়ি আর জীবন চালাতে সরকারি চাকরির বন্দোবস্ত করতে। এত বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ এ দেশে আগে দেওয়া হয়নি বলেই বিলকিসের আইনজীবী শোভা গুপ্তর দাবি।

শীর্ষ আদালতের এই ‘ঐতিহাসিক’ নির্দেশের পরে বুধবার দিল্লিতে প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন বিলকিস। বললেন, দীর্ঘ লড়াইয়ের পরে তাঁর যন্ত্রণা যে শীর্ষ আদালত বুঝেছে, তার জন্য তিনি কৃতজ্ঞ। এ বার নতুন করে জীবন শুরু করতে চান।

পরনে নীল সালোয়ার-কামিজ। মাথা ঢাকা। পাশে স্বামী ইয়াকুব রসুল আর দেড় দশকেরও বেশি তাঁর হয়ে মামলা লড়া শোভা। কোলে ছোট মেয়ে আকশা। ইংরেজি তো দূর, স্বচ্ছন্দ নন হিন্দিতেও। গুজরাতিতে বলা তাঁর বক্তব্য তর্জমা করছিলেন পাশে বসা সঙ্গীরা। কথা বলতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই ধরে যাচ্ছে গলা। তারই মধ্যে বিলকিস জানালেন, ২০০২ সালের ওই উন্মত্ত হিংসার সময়ে তাঁর চোখের সামনে সাড়ে তিন বছরের সালেহার মাথা থেঁতলে দেওয়া হয় পাথরে। পরে দেহ খুঁজে না পাওয়ায় তাকে মাটিও দিতে পারেননি তাঁরা। এখন ৫০ লক্ষের মধ্যে কিছু টাকা তুলে রাখতে চান সেই সালেহার নামেই। যাতে সাম্প্রদায়িক হিংসা আর ধর্ষণের শিকার হওয়া মহিলা এবং সন্তানদের সেটা কাজে আসে।

গণধর্ষণের সময়ে তিনি ৫ মাসের গর্ভবতী ছিলেন। বড় মেয়ে, ১৭ বছরের আসরত চায় উকিল হতে। বিলকিসের প্রার্থনা, যে শীর্ষ আদালত তাঁকে ন্যায় দিয়েছে, সেখানে দাঁড়িয়েই যেন এক দিন সওয়াল করতে পারে আসরত। দীর্ঘ লড়াইয়ে পাশে থাকার জন্য স্বামী, শোভাকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য উল্লেখ করেছেন সিবিআইয়ের কথা। ২০০৩ সাল থেকে বিলকিসের জন্য লাগাতার লড়াই করে যাওয়া শোভা বলছিলেন, ‘‘যুদ্ধ শুধু ধর্ষণকারী কিংবা দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ছিল না, চ্যালেঞ্জ ছিল প্রশাসনের বিরুদ্ধেও। সেই গুজরাত সরকার, যারা আক্রান্তের পাশে দাঁড়ানো তো দূর, বরং ক্রমাগত আড়াল করার চেষ্টা করেছে দুষ্কৃতীদের।’’ তাঁর অভিযোগ, শুরুতে বিলকিসের অভিযোগে আমলই দিতে চায়নি পুলিশ। বারবার চেষ্টা হয়েছে এফআইআরের বয়ান বদলের। পাল্টানোর চেষ্টা হয়েছিল ঘটনাস্থলের নামও। আদালতেও ক্রমাগত তারিখ পিছনোর কৌশল নিয়ে গিয়েছেন সরকারি উকিল। কিন্তু সমস্ত বাধা ঠেলে জয় ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য বিলকিসের মনের জোরকে কুর্নিশ করেছেন তিনি। জানিয়েছেন, কী ভাবে ১৭ বছর ধরে স্রেফ প্রাণ বাঁচাতে বাসা পাল্টাতে থেকেছেন, লড়াই ছাড়েননি গুজরাতের ওই মেয়ে। আগামী দিনে ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে এই রায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে তাঁর আশা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE