কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তৈরি বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) তিন বছর আগে নতুন করে শিখ দাঙ্গা মামলাগুলি খোলার প্রক্রিয়া শুরু করে। মঙ্গলবার তারই একটিতে নিম্ন আদালত এক আসামিকে ফাঁসির সাজা শোনাল। ১৯৮৪ সালে ইন্দিরা গাঁধী হত্যা-পরবর্তী দাঙ্গা মামলায় এই প্রথম কাউকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হল। সব রাজনৈতিক দলই, এমনকি কংগ্রেসও রায়কে স্বাগত জানিয়েছে।
দুই ব্যক্তিকে হত্যার দায়ে যশপাল সিংহ এবং নরেশ শেরাওয়াতকে ১৪ নভেম্বরই দোষী সাব্যস্ত করেআদালত। সে দিন আদালত চত্বরে আসামিদের উপরে হামলার অভিযোগ ওঠে এক বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে। এ দিন তাই নিরাপত্তার ঝুঁকি এড়াতে তিহাড় জেলে আদালত বসে। অতিরিক্ত দায়রা বিচারক অজয় পান্ডে সেখানেই যশপালের ফাঁসি আর নরেশের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনান।
এই রায় নিয়ে প্রত্যাশিত ভাবেই রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। অনেকেই বলছেন, কংগ্রেস যখনই গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, বিজেপি শিখ দাঙ্গার উদাহরণ টেনে এসেছে। এর আগে মনমোহন সিংহ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে ওই কলঙ্কিত অধ্যায়ের জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন। আজ কংগ্রেস রায়কে স্বাগত জানানোর পরে কেউ কেউ বলছেন, বিজেপি এই রায়কে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে হাতিয়ার করতে চাইলে এখন মুশকিলে পড়বে। প্রশ্ন উঠবে, মোদী কেন গুজরাত দাঙ্গার জন্য ক্ষমা না চেয়ে গাড়িতে কুকুর চাপা পড়ার উদাহরণ দিয়েছিলেন!
মোদী ক্ষমতায় আসার পরে ২০১৫ সালে স্বরাষ্ট মন্ত্রক নতুন করে সিট গঠন করে শিখ দাঙ্গার ৬০টি মামলা পুনর্তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়। দিল্লি এবং পঞ্জাবের সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সাক্ষ্য আহ্বান করা হয়। ইতিমধ্যে ৫২টি মামলা ‘হদিসবিহীন’ বলে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। বাকি ৮টির ফের তদন্ত হয়েছে। ৫টির চার্জশিট জমা পড়ে গিয়েছে। ৩টি তদন্তাধীন, তার মধ্যে কংগ্রেস নেতা সজ্জন কুমারের বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে।
আজ যে ঘটনার শাস্তি শোনাল আদালত, তা ১৯৮৪ সালের পয়লা নভেম্বরের। হরদেব সিংহ, কুলদীপ সিংহ, অবতার সিংহ এবং সঙ্গত সিংহ দিল্লির মাহিপালপুর এলাকার একটি বাড়ির দোতলায় আশ্রয় নেন। জনতা চড়াও হয়ে তাঁদের বেধড়ক মারধর করে বারান্দা থেকে নীচে ছুড়ে ফেলে। ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। হাসপাতালে মারা যান অবতার এবং হরদেব।
হরদেবের ভাই সন্তোখ সিংহ বিচারপতি রঙ্গনাথ মিশ্র কমিশনের কাছে এ নিয়ে হলফনামা দিয়েছিলেন। য় পুলিশও ১৯৮৫ সালে জয়পাল সিংহ নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছিল। কিন্তু তিনি বেকসুর বলে খালাস পান। পরে সন্তোখের হলফনামার ভিত্তিতে বিচারপতি জে ডি জৈন এবং বিচারপতি ডি কে আগরওয়াল কমিটির সুপারিশে নতুন করে একটি মামলা রুজু হয় বসন্তকুঞ্জ থানায়। সেটা ১৯৯৩ সালের ঘটনা। কিন্তু পুলিশ সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাব রয়েছে বলে দাবি করে মামলাটি বন্ধ করার অনুমতি চায় আদালতে। আদালত তা মেনেও নেয়।
এ বারে অন্যতম আক্রান্ত সঙ্গত সিংহ, অবতারের ভাই রতন সিংহ সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ দিন সাজা শোনার পরে সন্তোষ প্রকাশ করেছে বিজেপি এবং আপ। অকালি দলও খুশি। তবে নরেশেরও ফাঁসি চেয়ে আপিল করবে তারা। কংগ্রেসের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘কংগ্রেসের অবস্থান বরাবরই পরিষ্কার। আইনি প্রক্রিয়াকে তার মতো চলতে দিতে হবে। সেটা যে এ ক্ষেত্রে হচ্ছে, সেটাই ভাল।’’ পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দার সিংহও টুইটে লিখেছেন, ‘‘এত দিনের ওই নৃশংস অপরাধের সুবিচার হল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy