নরেন্দ্র মোদীর নোট বাতিলের গেরোয় থমকে গেল রাজধানীতে আরএসএসের অট্টালিকা নির্মাণ।
সদ্য কালই সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত ঘটা করে দিল্লিতে আরএসএসের সদর দফতর ‘কেশব-কুঞ্জ’কে ভেঙেচুড়ে নতুন করে বানানোর প্রথম ইঁটটি গাঁথেন। আড়াই একরের এই জমিতে আরএসএসের দফতরটি রয়েছে গত প্রায় পাঁচ দশক ধরে। এখন সেই জমিতেই হচ্ছে এক বিরাট অট্টালিকা। হাফপ্যান্ট ছেড়ে ফুলপ্যান্ট পড়ে আরএসএস এখন যেভাবে আধুনিক হচ্ছে, সঙ্ঘের নতুন ভবনটিও হচ্ছে অত্যাধুনিক। কিন্তু নতুন ভাবে ঢেলে সাজানোর এই প্রক্রিয়ায় শুরুতেই ধাক্কা খেল সঙ্ঘ। তা-ও নরেন্দ্র মোদীর নোট বাতিলের দৌলতে।
ঝা-চকচকে এই ভবনটি ঢেলে সাজাতে মোট খরচ হবে প্রায় ৭০ কোটি টাকা। আর মোহন ভাগবতই ঘোষণা করেছেন, যেহেতু এটি সঙ্ঘেরই দফতর হচ্ছে, তাই সাধারণ মানুষের থেকে কোনও অর্থ সংগ্রহ করা হবে না। ভবন নির্মাণের গোটা অর্থই নেওয়া হবে সঙ্ঘের কর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের থেকে। কিন্তু এমন সময় এই ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হল, যখন কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার পুরনো সব ৫০০ ও হাজার টাকার নোট বাতিল করে দিয়েছে। ফলে আর পুরনো নোটে অনুদান নিতে পারছে না সঙ্ঘ।
দিল্লির আরএসএসের এক নেতা বলেন, ‘‘আমরা স্থির করেছি, আমরা পুরনো কোনও নোট নেব না। বাজারে যখন পর্যাপ্ত নতুন নোট আসবে, তখনই অনুদান নেওয়া শুরু হবে। তার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েকটি মাস।’’ অথচ এই ভবনটি তিন বছরের মধ্যে তৈরি করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। যদি নতুন অনুদানের জন্য আরও ২-৩ মাস অপেক্ষা করতে হয়, তাহলে ভবন তৈরির মেয়াদও আরও পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নতুন এই ভবনটি তৈরি করার জন্য অনেক বছর ধরেই চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু ইউপিএ জমানায় দিল্লির শীলা দীক্ষিতের সময় বারবার ধাক্কা খেতে হয়। কেন্দ্রে মোদী সরকার আসার পরেই যাবতীয় ছাড়পত্র পাওয়ার কাজটি সহজ হয়।
আরএসএস অবশ্য বলছে, অনেক দিন ধরেই অর্থ সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। আপাতত সেই দিয়েই কাজ এগোনো হবে। প্রশ্ন হল, সেই টাকা কোথায় গেল? দিল্লির আরএসএস নেতা রাজীব টুলির বক্তব্য, ‘‘সেই সব টাকাই ব্যাঙ্কে জমা দেওয়া হয়ে গিয়েছে।’’ যা শুনে কংগ্রেসের আনন্দ শর্মা প্রশ্ন তুলছেন, ‘‘আমরা আগে থেকেই বলছিলাম, বিজেপি ও তার বন্ধুরা আগেভাগেই নিজেদের টাকার বন্দোবস্ত করে নিয়েছে। এখন বাকিদের বিপাকে ফেলতে নোটা বাতিল করা হয়েছে, যার ফল ভুগছে সাধারণ মানুষ।’’ কিন্তু আরএসএস এ ধরনের যাবতীয় অভিযোগ খণ্ডন করছে। তাদের দাবি, নিয়মিতই সব অর্থ ব্যাঙ্কে জমা দেওয়া হয়। সরকার কখন কী সিদ্ধান্ত নেবে, তা নিয়ে সঙ্ঘ কখনও মাথা ঘামায় না।
অথচ গতকালের অনুষ্ঠানে যে ভাবে লালকৃষ্ণ আডবাণী থেকে রাজনাথ সিংহ, পীযূষ গয়াল থেকে বিজয় গোয়েলের মতো মোদী সরকারের এক ঝাঁক মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন, তাতে স্পষ্ট বিজেপির উপর আরএসএসের কতটা দখল আছে। এমনকী আরএসএসের মহিলা শাখার অনুষ্ঠানেও মোদীর মন্ত্রীদের স্ত্রীরা ছুটে গিয়েছেন। সঙ্ঘের বক্তব্য, নতুন ভবনের ভাবনা নতুন নয়। এর জন্য পাঞ্চজন্য, অর্গানাইজার-এর মতো দলের মুখপত্রের অফিসকে আগেই অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বহু বছরে এই ভবনটি মেরামতের প্রয়োজন ছিল।
কিন্তু সাত তলা এই প্রস্তাবিত আধুনিক ভবনকে ঘিরে আরও বিতর্ক আছে। এখানে দুটি তলায় একেবারে আধুনিক মল গড়া হচ্ছে। তাতে বিভিন্ন সংস্থার পসরার বিপণনও হবে। যদিও সঙ্ঘের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আসলে স্বদেশি সামগ্রী বিক্রেতাদের এখানে ঠাঁই হবে। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, মোদী সরকার আসার পর আর কারও ‘অচ্ছে দিন’ আসুক না আসুক, বিজেপি আর সঙ্ঘের একমাত্র ‘সুদিন’ এসেছে।
আরও পড়ুন: ‘নোট বাতিল করায় অনেক রাজনৈতিক দল ভীষণ ভয়ে’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy