Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অসমীয়ার সংজ্ঞা ১৯৫১ সাল ধরেই, চান বিদ্বজ্জনরা

সালের নাগরিক পঞ্জীর ভিত্তিতেই অসমীয়ার সংজ্ঞা নির্ধারণ করার পক্ষে মত দিলেন অসমের অধিকাংশ বিদ্বজ্জন। তবে, অসমীয়ার সংজ্ঞা নির্ধারণে ১৯৫১ সালের নাগরিক পঞ্জী মানবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে বিজেপি ও আমসু। বরাকের বিধায়করাও এ নিয়ে বিধানসভার স্পিকার ও মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের কাছে আপত্তি জানিয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৫ ০৫:২৫
Share: Save:

সালের নাগরিক পঞ্জীর ভিত্তিতেই অসমীয়ার সংজ্ঞা নির্ধারণ করার পক্ষে মত দিলেন অসমের অধিকাংশ বিদ্বজ্জন। তবে, অসমীয়ার সংজ্ঞা নির্ধারণে ১৯৫১ সালের নাগরিক পঞ্জী মানবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে বিজেপি ও আমসু। বরাকের বিধায়করাও এ নিয়ে বিধানসভার স্পিকার ও মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের কাছে আপত্তি জানিয়েছেন।

‘অসমীয়া’র নির্দিষ্ট কোনও সংজ্ঞা না থাকায় অসম চুক্তির ৬ নম্বর দফা রূপায়ণের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই দফায় অসমীয়াদের ভাষিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক স্বার্থ ও ঐতিহ্যের সাংবিধানিক, আইনি ও প্রশাসনিক সুরক্ষা প্রদানের কথা উল্লেখ রয়েছে। এ ব্যাপারে বিধানসভার স্পিকার বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করছেন। আসু-সহ ২৬টি সংগঠন নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে ইতিমধ্যে স্পিকারকে জানিয়েছে, ১৯৫১ সালের নাগরিক পঞ্জীতে যাঁদের নাম রয়েছে তাঁরা ও তাঁদের বংশধররাই অসমীয়া। অসম সাহিত্য সভার পরামর্শ অসমে থাকা যে সব ব্যক্তি নিজেদের প্রথম ভাষা, দ্বিতীয় ভাষা বা তৃতীয় ভাষা হিসেবে অসমীয়া গ্রহণ করেছেন তাঁরাই অসমীয়া। কিন্তু, বড়ো, কোচ রাজবংশী-সহ বেশ কিছু উপজাতি অসমীয়া ভাষা গ্রহণের ভিত্তিতে অসমীয়া হতে নারাজ।

এ দিন বিধানসভায় স্পিকারের সঙ্গে দেখা করেন বিদ্বজ্জনরা। বৈঠক শেষে গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ও পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজের আহ্বায়ক ননীগোপাল মহন্ত জানান, বিদ্বজ্জনদের অধিকাংশই ভাষা, জাতি, গোষ্ঠী নির্বিশেষে ১৯৫১ সালকে ভিত্তিবর্ষ ধরে অসমীয়ার সংজ্ঞা নির্ধারণের পক্ষে মত দিয়েছেন। কিন্তু, বৈঠকে বরাক উপত্যকার কোনও প্রতিনিধি ছিলেন না।

বিজেপি বিধায়ক দিলীপ পাল বলেন, “১৯৫১ সালকে ভিত্তি করে অসমীয়ার সংজ্ঞা নির্ণয় করা বা নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিবাদ করছি। আমাদের দাবি, বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু বাঙালিরা যখনই অত্যাচারিত হয়ে ভারতে আসবেন, নৈতিক ও মানবিক ভিত্তিতে ভারত সরকার তাদের শরণার্থীর মর্যাদা ও নাগরিকত্ব দিক। এ নিয়ে আমাদের প্রতিনিধিরা দিল্লি গিয়েছেন।”

সংখ্যালঘু ছাত্র সংগঠন আমসু গত কাল স্পিকার ও এ দিন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের সঙ্গে দেখা করে। সংগঠনের সভাপতি আবদুর রহিম আহমেদ মুখ্যমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়ে জানান ১৯৫০ সালের সংঘর্ষের সময় প্রায় ৫৩ হাজার পরিবার ভারত ছেড়ে পূর্ববঙ্গে চলে যেতে বাধ্য হয়। নেহরু-লিয়াকত চুক্তির পরে ১৯৫৮ সালে তাঁদের মধ্যে ৪১ হাজার পরিবার ফের ভারতে ফিরে আসে। ফলে, ১৯৫১ সালের নাগরিক পঞ্জীতে এতগুলি পরিবারের তথ্য নেই। পাশাপাশি, তখন যোগাযোগ পরিকাঠামোর অভাবে অনেক নদীচর ও পাহাড়ে গণনাকারীরা যেতে পারেননি। ওদালগুড়ি, ডিব্রুগড়, শিবসাগর, কাছাড়, কার্বি আংলং ও ডিমা হাসাও জেলায় ১৯৫১ সালের নাগরিক পঞ্জীর কোনও প্রতিলিপি নেই। দরং, লখিমপুর, গোলাঘাট, কামরূপ, তিনসুকিয়া, নলবাড়ি, বরপেটা ও মরিগাঁওতে এই প্রতিলিপি আংশিক অক্ষত রয়েছে। এমন অসম্পূর্ণ তালিকার ভিত্তিতে অসমীয়ার সংজ্ঞা নির্ধারণ হলে বহু মানুষ বাদ পড়বেন। আমসুর মতে, অসম চুক্তির ভিত্তিতে ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পরে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত ও বিতাড়িত করে, বাকি যাঁরা অসমে স্থায়ী ভাবে বাস করে রাজ্যের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক কাঠামোর অংশ হয়ে উঠেছেন, সকলকেই অসমীয়া বলা উচিত। তারা হুমকি দেয়, ১৯৫১ সালের ভিত্তিতে অসমীয়ার সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হলে তাঁরা নাগরিক পঞ্জী তৈরির ক্ষেত্রে কোনও সহযোগিতা করবে না। তার জন্য ১৯৫১ সালের পক্ষে মত দেওয়া সংগঠনগুলি ও রাজ্য সরকার দায়ী হবে। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে স্পিকার আলোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ নিয়ে তাঁর কিছু করার নেই।

তবে, বরাকের বিধায়কেরা মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, ১৯৭১ সালকে ভিত্তি করেই নাগরিক পঞ্জী উন্নীতকরণ হোক। ১৯৫১ সালের ভিত্তিতে অসমীয়ার সংজ্ঞা নির্ধারণ করা নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হচ্ছে তার নিন্দা করে বরাকের বিধায়কদের মত, অসমে থাকা সকলেই অসমীয়া। খামোকা এ নিয়ে জলঘোলা করা হচ্ছে। স্পিকারের সঙ্গেও দেখা করেন বরাকের বিধায়ক গৌতম রায়, কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ, জামালউদ্দিন আহমেদ, কৃপানাথ মালা-সহ ৮ বিধায়ক। তাঁরা জানান, ১৯৫১ সালের অসম্পূর্ণ এনআরসিকে ভিত্তি করে অসমীয়া বা ভূমিপুত্রের সংজ্ঞা ঠিক করলে ও সংরক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করলে বরাকের কয়েক লক্ষ বঙ্গভাষী বঞ্চিত হবেন। ফলে পৃথক বরাকের দাবি জোরদার হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE