‘ইন্ডিয়াজ ডটার’ ভারতে নিষিদ্ধ করে দেওয়া নিয়ে সমালোচনা হয়েছে সর্বত্র। কিন্তু তার পাশাপাশি পশ্চিমী মিডিয়া যে ভাবে সব সময় একপেশে ভঙ্গিতে ভারতের সমালোচনা করে, তা নিয়েও বিতর্ক কম হচ্ছে না।
ভারত থেকে অনেকেই যেমন পাশ্চাত্যের এই বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, খোদ ব্রিটিশ মিডিয়ার একাংশও এ বার একই ভাবে সরব হচ্ছে। এই আবহে তথ্যচিত্রের পরিচালক লেসলি উডউইন জানাচ্ছেন, ইউটিউবে ছবিটি যে চেহারায় দেখা যাচ্ছে, সেটি অসম্পূর্ণ। ছবির শেষে ব্রিটেন-আমেরিকার মতো দেশগুলির ধর্ষণ-পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছিল। তাতেই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছিল, ধর্ষণ ভারতের একার সমস্যা নয়। কিন্তু লেসলির অভিযোগ, ইউটিউবে ছবিটির যে সংস্করণ দেখা যাচ্ছে, সেখানে শেষের এই অংশটাই বাদ পড়েছে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই দর্শকের মনে হচ্ছে, লেসলি বলতে চান, ভারত ছাড়া পৃথিবীর কোথাও ধর্ষণ হয় না। ভারত যেন ‘ধর্ষণের বিশ্ব রাজধানী’ প্রতি ২২ মিনিটে যেখানে একটি করে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
অথচ ব্রিটেনের নিজের অবস্থাই যে কত ভয়ঙ্কর, সেটা পরিসংখ্যানের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। সম্প্রতি ব্রিটেনেরই এক প্রথম সারির দৈনিকে লেখা হয়েছে ২০১২-র ডিসেম্বরে সারা পৃথিবী যখন নির্ভয়ার ঘটনা নিয়ে কথা বলছিল, তখন লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশের রেকর্ড দেখাচ্ছিল যে খাস লন্ডনে প্রতি বছর যত ধর্ষণ হয়, তার ১৫ শতাংশেরও বেশি ঘটনায় আক্রমণকারীর সংখ্যা থাকে তিন বা তারও বেশি। ওই দৈনিকই প্রশ্ন তুলেছে, এসেক্সের একটি ঘটনায় ১৬ বছরের কিশোরীকে গণধর্ষণের পরে প্রমাণ লোপ করতে তার শরীরে অ্যাসিড ঢেলে দেওয়া হয়েছিল। এই সব ঘটনা নির্ভয়ার থেকে কম কীসে, প্রশ্ন উঠতেই পারে। ২০১৪ সালের ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে অপরাধ সমীক্ষা তুলে ওই দৈনিক জানিয়েছে, প্রতি বছরে সেখানে ৮৫ হাজার ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। অর্থাৎ প্রতি ছ’মিনিটে একটি! আমেরিকায় আবার সব মহিলার এক শতাংশ প্রতি বছর যৌন নিগ্রহের শিকার হন, অর্থাৎ প্রতি ২৫ সেকেন্ডে একটি! তবে লেসলির বক্তব্যকে সমর্থন করেছে এই দৈনিকও। তাদেরও বক্তব্য, তথ্যচিত্রটির পূর্ণাঙ্গ সংস্করণ দেখলে কিন্তু একপেশে বলে মনে হয় না। কারণ সেখানে সব ধরনের পরিসংখ্যানই দেওয়া আছে। এমনকী দিল্লিতেও একটি প্রিভিউ শো-এ যখন পুরো ছবিটি দেখানো হয়েছিল, তখন আপত্তি তোলেননি কেউ, দাবি করেছে ওই দৈনিক। গণ্ডগোলটা হয়ে গিয়েছে ইউটিউবে কাটছাঁট করা ছবিটি আপলোড হওয়ার পর থেকেই।
এই কাটছাঁট করল কে? প্রাথমিক ভাবে বিবিসি কর্তৃপক্ষকেই দুষেছে ওই দৈনিক। তাদের বক্তব্য, তথ্যচিত্রের চূড়ান্ত সংস্করণে ইচ্ছাকৃত ভাবে ওই সমীক্ষা সংক্রান্ত অংশটি বাদ কেন দেওয়া হল, সেই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে বিবিসিকে। কিন্তু বিবিসির এক মুখপাত্র দাবি করছেন, “আমরা ইউটিউবে কিছু আপলোড করিনি। আমার শুধু আমাদের চ্যানেলে ছবিটি সম্প্রচার করেছি মাত্র। সেখানে পুরো ছবিটাই দেখানো হয়েছে।”
শেষ পর্যন্ত এই গোটা পর্বে মুখ পুড়েছে পরিচালকেরই। লেসলি আনন্দবাজারকে বলেছেন, “ভারতে অনেকেই ইউটিউবের অসম্পূর্ণ সংস্করণ দেখেছেন। অথচ আমি দেখাতে চেয়েছিলাম এ ধরনের ঘটনা শুধু ভারতেই ঘটে, এমন নয়। কিন্তু ছবিটা অসর্ম্পূণ ভাবে দেখানোয় প্রাসঙ্গিক বার্তাটাই হারিয়ে গিয়েছে।”
ভারতের মানুষ যাতে আহত বোধ না করেন, সে জন্য ভারতীয় আইন মেনে ছবির ভারতীয় সংস্করণে নির্ভয়ার নাম উল্লেখ করা হয়নি। লেসলির মন্তব্য, “ভারতীয় আইনের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। নির্যাতিতার ছবি বা নাম প্রকাশ করা সেখানে বেআইনি, তা আমরা জানতাম। সে জন্য তথ্যচিত্রটির দু’টি সংস্করণ করা হয়েছে।”
এত কিছুর পরেও ছবিটি ভারতে নিষিদ্ধ হওয়ায় দুঃখিত লেসলি। আনন্দবাজারের কাছে তিনি বলেন, “দুর্ভাগ্যবশত ভারত সরকারের কর্তাব্যক্তিরা তথ্যচিত্রের চূড়ান্ত সংস্করণটি এক বারও দেখেননি। ১৬ ঘণ্টার ফুটেজ দেখেছিলেন। যা দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে ওঁরা একটা ছোট সংস্করণ চেয়েছিলেন। আমরা তখন তিন ঘণ্টার একটি সংস্করণ ওঁদের দেখিয়েছিলাম। কিন্তু সর্বশেষ সংস্করণটি ওঁরা দেখেননি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy