একের পর এক শহর ও জেলার নাম বদলের আগে খোদ বিজেপি সভাপতির ‘শাহ’ পদবিটা পাল্টানো উচিত বলে গত কাল মন্তব্য করেছিলেন পদ্মভূষণ ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিব। বিজেপির মুসলিম নেতাদের নাম পাল্টানোর দাবি তুলে খোঁচা দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের শরিক নেতা ওমপ্রকাশ রাজভর। এ বার অজ্ঞতার অভিযোগও উঠল আগরা ও মুজফ্ফরনগরের নাম বদলের দাবি তোলা দুই বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে। কারণ, ওই দুই জায়গার নাম বদলের দাবির নেপথ্যে তাঁদের যুক্তির সঙ্গে রাজ্য সরকারের তুলে ধরা ইতিহাসেরই বিস্তর ফারাক!
মুজফ্ফরনগরের নাম লক্ষ্মীনগর করার দাবি তুলে উত্তরপ্রদেশের বিজেপি বিধায়ক সঙ্গীত সোম ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, ‘‘নবাব মুজফ্ফর আলির নামে এই নাম রাখা হয়েছে।’’ কিন্তু সরকারি নথিপত্র এবং ওয়েবসাইটে এই নামে কারও উল্লেখ নেই! ১৯৯০ সালে উত্তরপ্রদেশ সরকারের প্রকাশ করা ওই জেলার ভৌগোলিক অভিধান বলছে, ‘‘শাহজাহানের আমলে দারোত বা সর্বৌত নামে একটি প্রাচীন নগরের এলাকায় মুজফ্ফরনগরের পত্তন হয়েছিল। শাহজাহানের কাছ থেকে তাঁর অন্যতম মন্ত্রী আব্দুল মুজফ্ফর খান ‘জায়গির’ হিসেবে পেয়েছিলেন সর্বৌত এবং খটৌলি। মুজফ্ফরের মৃত্যুর পরে নগর নির্মাণ শেষ করেন তাঁর ছেলে আব্দুল মনসুর খান। তিনি বাবার নামে নগরের নাম রাখেন মুজফ্ফরনগর।’’
জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটেও প্রায় একই ব্যাখ্যা। এমনকি সেখানে বলা হয়েছে, ‘‘মান্ডি গ্রামে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের পরে ইঙ্গিত মিলছে যে, অবিভক্ত মুজফ্ফরনগর জেলার শিকড় হয়তো রয়েছে হরপ্পায়।’’ সঙ্গীত সোমকে ‘দাঙ্গায় অভিযুক্ত’ বলে দাবি করে আর এক ইতিহাসবিদ এস ইরফান হাবিব টুইটারে লিখেছেন, ‘‘মুজফ্ফরনগরের পত্তন হয় ১৬৩৩ সালে। কোনও জায়গার নাম পাল্টানো হয়নি। মুজফ্ফরনগরের কাছে সর্বৌত নামে একটা গ্রাম এখনও রয়েছে।’’
আগরার নাম ‘অগ্রবন’ বা অগ্রওয়াল করার দাবি তুলেছিলেন স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক জগনপ্রসাদ গর্গ। তাঁর দাবি, ‘আগরা’ শব্দের কোনও অর্থ নেই। যদিও এখানেও আগরা জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইট বলছে, ‘‘মহাভারতের সময়ে আগরা নামে একটা শহর ছিল বলে মনে করা হয়। আবার দিল্লির সুলতান সিকন্দর লোদি ১৫০৪ সালে আগরা শহরের পত্তন করেন। পানিপথের প্রথম যুদ্ধের আগে পর্যন্ত আগরা থেকেই রাজত্ব করেছেন তাঁর ছেলে ইব্রাহিম লোদি।’’
বিজেপির অস্বস্তি আরও বাড়িয়েছেন যোগীর মন্ত্রিসভার সদস্য তথা সুহেলদেব ভারতীয় সমাজ পার্টির নেতা রাজভর। সোশ্যাল মিডিয়ায় এক ভিডিয়োয় তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘বিজেপির বর্তমান জাতীয় মুখপাত্রের নাম শাহনওয়াজ হুসেন। মুখতার আব্বাস নকভি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। উত্তরপ্রদেশে মহসিন রাজা প্রতিমন্ত্রীর পদে রয়েছেন। আগে এই তিন জনের নাম পাল্টে দিক বিজেপি। উপড়ে ফেলুক জি টি রোড। সেটাও তো শের শাহ সুরির তৈরি! লাল কেল্লা, তাজ মহল— এ সব কারা বানিয়েছিল?’’
খতিয়ান বলছে, গত এক বছরে দেশ জুড়ে অন্তত ২৫টি গ্রাম-শহরের নাম পাল্টানোয় সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে কেন্দ্র। শিবসেনা বলেছে, ‘‘উত্তরপ্রদেশের কাণ্ডকারখানা ভোটারদের ললিপপ দেখানো ছাড়া কিছু নয়!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy