Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

দেশে আতঙ্কের কেন্দ্রস্থল মুম্বই, এখনও গোষ্ঠী সংক্রমণ বলতে নারাজ সরকার

মহারাষ্ট্রে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ৯৯১৫। মৃত্যু হয়েছে ৪৩২ জনের।

মুম্বইয়ের ধারাভি বস্তিতে চলছে স্ক্রিনিং। ছবি: পিটিআই

মুম্বইয়ের ধারাভি বস্তিতে চলছে স্ক্রিনিং। ছবি: পিটিআই

সংবাদ সংস্থা
মুম্বই শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২০ ১৩:৪৭
Share: Save:

কেরল ছাড়িয়ে যখন করোনাভাইরাসের প্রকোপ ধীরে ধীরে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে, তখন থেকেই আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যায় কার্যত শীর্ষে মহারাষ্ট্র। পাঁচ সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে লকডাউন চলার পরেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে, এমন দাবি করতে পারছে না সে রাজ্যের সরকার। বরং প্রতিদিন গড়ে পাঁচ শতাধিক মানুষ নতুন আক্রান্ত হচ্ছেন। বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। আর সেই কারণেই গোটা দেশের করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও আলাদা করে উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে মহারাষ্ট্র। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়েছে মহারাষ্ট্রে?

মহারাষ্ট্রে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে ৯ মার্চ, তিন জনের শরীরে। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই দেশের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যায় সবার উপরে উঠে আসে মহারাষ্ট্র। তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় সব সময়ই শীর্ষস্থানে রয়েছে এই রাজ্য। বৃহস্পতিবার সকালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া হিসাবে মহারাষ্ট্রে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ৯৯১৫। মৃত্যু হয়েছে ৪৩২ জনের। স্বাভাবিক ভাবেই সারা দেশের মধ্যে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যায় শীর্ষে মহারাষ্ট্র। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৫৯৭ জন মানুষ। মৃতের সংখ্যা বেড়েছে ৩২। অন্য দিকে সারা দেশে মোট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩১০৫০ জন। মৃতের সংখ্যা ১০৭৪।

মহারাষ্ট্রের সংক্রমণের চিত্রটা বুঝতে শুধু এই পরিসংখ্যানই যথেষ্ট নয়। সারা দেশে কোভিড আক্রান্তের মধ্যে ৩১ শতাংশেরও বেশি আক্রান্ত এই রাজ্যেই। মৃত্যুর হিসাবটা আরও ভয়ঙ্কর। সারা দেশের ৪৬ শতাংশেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে মহারাষ্ট্রেই। আবার সারা দেশে প্রতিদিন যত সংখ্যক মানুষ নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন, তার প্রায় এক তৃতীয়াংশই মহারাষ্ট্রের।

আরও পড়ুন: প্রয়াত ঋষি কপূর, বলিউডে শোকের ছায়া

তবে কী গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়েছে মহারাষ্ট্রে? কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক বা মহারাষ্ট্রের স্বাস্থ্য প্রশাসন অবশ্য সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে। তাঁদের দাবি, আক্রান্তদের অধিকাংশেরই বিদেশভ্রমণের ইতিহাস রয়েছে অথবা করোনা আক্রান্ত কিংবা বিদেশে ভ্রমণ করেছেন এমন কারও সংস্পর্শে এসেছেন। এক সপ্তাহ আগেও বৃহন্মুম্বই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের তরফে জানানো হয়, গোষ্ঠী সংক্রমণের কোনও নজির নেই। বরং স্থানীয় সংক্রমণ হচ্ছে। অর্থাৎ যে এলাকায় কোনও কোভিড আক্রান্ত রোগী রয়েছেন, সেখানেই নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন লোকজন।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এখন সারা দেশের সঙ্গে মহারাষ্ট্রেও চলছে লকডাউন। ঘরবন্দি অধিকাংশ মানুষ। আন্তর্জাতিক উড়ান বন্ধ হয়েছে ২২ মার্চ থেকে। ফলে বিদেশভ্রমণ স্তব্ধ। কোভিড আক্রান্ত বা তাঁদের সংস্পর্শে আসা লোকজনও কার্যত চিহ্নিত। তার পরেও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে কী ভাবে? রাজ্য প্রশাসনের অবশ্য যুক্তি, টেস্টের সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়ানোর ফলেই নতুন আক্রান্তের সংখ্যা এ ভাবে বাড়ছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও প্রশ্ন, অন্য রাজ্যগুলিতেও তো একই ভাবে টেস্টের সংখ্যা বাড়ছে। তাহলে সেই রাজ্যগুলির তুলনায় মহারাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা এত লাফিয়ে বাড়ছে কেন? সে কারণেই গোষ্ঠী সংক্রমণের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। একটা অংশ এটাও মনে করছেন, গোষ্ঠী সংক্রমণ না হলে এত বিপুল হারে আক্রান্ত বাড়ার কোনও কারণ নেই।

আরও পড়ুন: আমি ধ্বংস হয়ে গেলাম: অমিতাভ

মহারাষ্ট্রে আক্রান্তের অধিকাংশই মুম্বই এবং সংলগ্ন এলাকায়। তার মধ্যেও আবার শুধু বৃহন্মুম্বই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন এলাকাতেই আক্রান্তের সংখ্যা ৬৬৪৪। অর্থাৎ মুম্বই শহরাঞ্চলেই আক্রান্তের মোট আক্রান্তের প্রায় দুই তৃতীয়ংশ। রাজ্যে সংক্রমণ ছড়িয়েছে মূলত ঠাণে ডিভিশনে। বৃহন্মুম্বই ছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে ঠাণে, ঠাণে পুরসভা, নবি মুম্বই পুরসভা, কল্যাণ-ডোম্বিভ্যালি পুরসভার মতো এলাকা। সব মিলিয়ে ঠাণে ডিভিশনেই সিংহভাগ আক্রান্ত মৃত।

আর এখান থেকেই উঠে আসছে, অন্য একটা যুক্তি। বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, বাণিজ্যনগরী মুম্বইয়ের বড় অংশই ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি। এ ছাড়া রয়েছে বলিউডের বিরাট অংশ। এই শ্রেণির মানুষজন হামেশাই বিদেশে যাতায়াত করেন। আবার এই শ্রেণির মানুষের থেক সংক্রমণের সম্ভাবনাও বেশি থাকে। কারণ তাঁদের সংস্পর্শে আসা লোকজনের সংখ্যাও বেশি। বাড়িতে যেমন পরিচারক-পরিচারিকার সংখ্যা বেশি, তেমনই শপিং মল, রেস্তরাঁ, ক্লাব, নাইটক্লাবের মতো জমায়েত হয় এমন জায়গায় যাতায়াত বেশি। এই অংশের মানুষজনের থেকে বিস্তীর্ণ এলাকায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE