Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

১৩ লক্ষ সংক্রমণ, আশঙ্কা গবেষণায়

করোনা ঠেকানোর একমাত্র উপায় হল যে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখা, শুরু থেকেই তা বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)।

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২০ ০৪:২৫
Share: Save:

বিদেশের বিশেষজ্ঞেরা আশঙ্কা করছেন, ভারতের মতো জনঘনত্বের দেশে অন্তত ১০ থেকে ১৩ লক্ষ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হতে চলেছেন। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ বা আইসিএমআর-এর রিপোর্ট যদিও বলছে, পারস্পরিক সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলে এ দেশে করোনা-সংক্রমণ প্রায় ৬২ শতাংশ কমানো সম্ভব। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের একাংশ এতে আশ্বস্ত হচ্ছেন না। তাঁদের মতে, সরকার না-মানলেও ভারতে গোষ্ঠী-সংক্রমণ শুরু হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ অনেকেরই সংক্রমণের উৎস বোঝা যাচ্ছে না। অতএব আইসিএমআরের তত্ত্ব তখনই খাটে, যদি গোষ্ঠী-সংক্রমণ শুরু হওয়ার আগে থেকেই সামাজিক দূরত্ব পালন যায়।

করোনা ঠেকানোর একমাত্র উপায় হল যে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখা, শুরু থেকেই তা বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। একই মত দেশীয় বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের মতে, সংক্রমণের প্রশ্নে এই ভাইরাস সমগোত্রীয় সার্স বা মার্স-এর থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী। আইসিএমআরের রিপোর্টে বলা হয়েছে, সাধারণ পরিস্থিতিতে এক জন করোনা-আক্রান্ত ব্যক্তি গড়ে দেড় জনকে সংক্রমিত করতে সক্ষম। বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে তিনিই গড়ে ৪.৯ জনকে সংক্রমিত করতে পারেন। সেই কারণেই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে পারস্পরিক দূরত্বের উপরে জোর দিয়ে তিন সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

গত মাসের শেষ সপ্তাহে দেশে করোনা-সংক্রমণের চিত্রটি বুঝতে একটি সমীক্ষা চালায় আইসিএমআর। যে-হেতু ওই রোগের উৎস চিন, তাই কারণে মূলত বিদেশ থেকে আগত বিমানযাত্রীদের মাধ্যমে এ দেশে কতটা ব্যাপক ভাবে করোনা ছড়াতে পারে, তার উপরেই সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। দেখা যায়, বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ানোর প্রশ্নে শীর্ষে রয়েছে দিল্লি। তার পরে মুম্বই, কলকাতা, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, হায়দরাবাদ। যদিও বাস্তবে সংক্রমণের প্রশ্নে দিল্লিকে ছাপিয়ে গিয়েছে মুম্বই-সহ মহারাষ্ট্র।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, আক্রান্তদের পাশাপাশি যাঁদের উপসর্গ দেখা দিয়েছে, তাঁদেরও গৃহবন্দি রাখা গেলে ভারতে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা ৬২ শতাংশ কমবে। তবে গোষ্ঠী-সংক্রমণের পর্যায়ে যাওয়ার আগে ওই পদক্ষেপ করতে হবে। না-হলে দেশে কার্যত মৃত্যু-মিছিল শুরু হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ৮০ শতাংশ সংক্রমিত ব্যক্তির শরীরে উপসর্গ দেখা যায় না। তিনি সুস্থ আছেন ভেবে অন্যদের সংক্রমিত করতে থাকেন। তাই এই ভাইরাস রোখার একমাত্র রাস্তা হল, ঘরে থাকা।

আমেরিকার জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, ভারতের যা স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, তাতে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত অন্তত ১০ থেকে ১৩ লক্ষ লোক করোনায় সংক্রমিত হতে পারেন। রিপোর্টটি বলছে, প্রাথমিক ভাবে আমেরিকা বা ইটালির চেয়ে ভাল ভাবে পরিস্থিতি সামলাচ্ছে ভারত। কিন্তু পিছিয়ে রয়েছে রোগীর প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয়ের পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে। কত জনকে পরীক্ষা করা হচ্ছে, পরীক্ষা নির্ভুল ভাবে হচ্ছে কি না, কত ঘন ঘন সেই পরীক্ষা হচ্ছে— এই সবের উপরেই বিষয়টির সাফল্য নির্ভর করছে।

এখানেই অনেকের প্রশ্ন, দুর্বল স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়ে ভারতে যেখানে সার্বিক লকডাউন ছাড়া করোনা রোখা কার্যত অসম্ভব, সেখানে সিদ্ধান্তটি নিতে নরেন্দ্র মোদী সরকার দেরি করে ফেলল কি না। করোনাকে হু ‘অতিমারি’ ঘোষণা করার আগেই সিঙ্গাপুর-হংকং কিন্তু লকডাউন হয়ে গিয়েছিল। কেন্দ্রের ১৫ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ যথেষ্ট কি না, তা নিয়েও বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন। এই পরিস্থিতিতে লকডাউনে আদৌ সাফল্য মিলছে কি না, আগামী সাত-দশ দিনের মধ্যেই তা বোঝা যাবে বলে বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE