Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
ব্যাটারি শেষ, বন্ধ পরীক্ষা!
Coronavirus

সংসদ বন্ধের দাবি, মানবে না সরকার

বিরোধী দলগুলির মধ্যে একমাত্র তৃণমূলই সংসদ বন্ধ করার দাবিতে মুখর হয়।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২০ ০৬:২৬
Share: Save:

গোটা দেশ নোভেল করোনাভাইরাসের আতঙ্কে টানটান। সংসদে চলছে টানাপড়েন। আজ সেখানে হাজিরা সামান্য কমলেও এখনও ‘ভিড়’ হচ্ছে যথেষ্ট। কিন্তু খাস সংসদেই সাবধানতা যা নেওয়া হয়েছে, সেটা ‘নামকে ওয়াস্তে’ বলে অভিযোগ বিরোধী সাংসদদের। বিভিন্ন কাজে সংসদে যাঁরা যাতায়াত করেন, তাঁদেরও এক মত। আজকের একটি ঘটনাই সকলকে উদ্বেগে ফেলে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট।

প্রবেশদ্বারগুলিতে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল আজ সকালে। এই গেটগুলি দিয়ে সাংসদ বাদে অন্যরা ঢোকেন। দুপুরের পরেই দেখা যায় তাপমাত্রা পরীক্ষার যন্ত্রগুলির ব্যাটারি ফুরিয়ে গিয়েছে! সংসদ বলে কথা। তৎক্ষণাৎ নতুন ব্যাটারি লাগানো হবে, এমনটাই প্রত্যাশিত। বাস্তবে দেখা যায়, বিকেল পর্যন্ত বন্ধ ছিল পরীক্ষা। এক বিরোধী সাংসদের কথায়, ‘‘আমরা তো সরাসরি গাড়ি করে মূল ফটকে ঢুকে যাই। তার পরে কোনও পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। আমাদের কথা ছেড়ে দিন, যে ড্রাইভার আমাদের ভিতরে ছেড়ে দিয়ে যাচ্ছেন, তাঁরও তো সংক্রমণ থাকতে পারে!’’

সংসদ কী তা হলে বন্ধ করে দেওয়া হবে?

বিরোধী দলগুলির মধ্যে একমাত্র তৃণমূলই সংসদ বন্ধ করার দাবিতে মুখর হয় আজ। রাজ্যসভার জিরো আওয়ারে করোনাভাইরাস নিয়ে আলোচনার জন্য নোটিস দিয়েছিল তৃণমূল, এসপি, বিজেডি এবং এডিএমকে। কিন্তু সেই নোটিস গ্রাহ্য করা হয়নি। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী জানিয়েছেন, আপাতত অধিবেশন বন্ধ করার কোনও পরিকল্পনা নেই। যে রকম চলছে, চলবে। সরকারি শীর্ষ সূত্র থেকে পাওয়া ইঙ্গিত, পরিস্থিতি ঘোরতর (স্টেজ থ্রি) না-হওয়া পর্যন্ত অধিবেশন চালিয়ে যাওয়ার কথাই ভাবা হচ্ছে। শাসক শিবিরের বক্তব্য, এমনিতেই গোটা দেশে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। সংসদ বন্ধ করা হলে, তা বহু গুণ বেড়ে যাবে। ছাপ পড়বে শেয়ার বাজারেও।

রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতাও রয়েছে সংসদ চালু রাখার পিছনে। মধ্যপ্রদেশে সরকার টালমাটাল। জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার বিজেপিতে যোগদানের পর সেই রাজ্যে সরকার গড়তে ঝাঁপিয়েছে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহের দল। এর মধ্যে ২৬ মার্চ পর্যন্ত বিধানসভা বন্ধ করে দেওয়ায়, বিজেপি তার বিরোধিতা করছে। এই অবস্থায় সংসদ বন্ধ করার ফরমান জারি করাটা বিজেপি নেতৃত্বের পক্ষে রাজনৈতিক ভাবে সমস্যার।

তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন এ দিন রাজ্যসভায় হাতে-কলমে অভিনয় করে দেখানোর চেষ্টা করেন, নোভেল করোনভাইরাস থেকে দূরে থাকার জন্য কী করা উচিত। কিন্তু হাত-নেড়ে কিছু দেখাতে তাঁকে নিষেধ করেন রাজ্যসভার চেয়ারপার্সন।যুক্তি, এটি সংসদীয় কানুনের বিরোধী। পরে সাংবাদিক বৈঠককরে ডেরেক বলেন, ‘‘স্কুল-কলেজের থেকেও সংসদে ঝুঁকি বেশি। প্রবীণদেরই এই ভাইরাসে কাবু হওয়ার আশঙ্কা বেশি। রাজ্যসভায় সাংসদদের গড় বয়স ৬৪ বছর। লোকসভায় অবশ্য তা কিছুটা কম, ৫৩ বছর। এ ছাড়া শুধু সাংসদরা নন, বিভিন্ন মন্ত্রকের সচিব, সহসচিব, সুরক্ষা কর্মী, ক্যান্টিন ও সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা রোজ সংসদে আসেন। রয়েছেন টি বোর্ড, কফি বোর্ড এবং সহকারী কর্মীরাও। রোজ প্রায় ৬ হাজার মানুষ আসেন সংসদে।’’

কংগ্রেস মুখপাত্রের বক্তব্য, ‘‘সরকারের কাছে জানতে চাইছি, দেশে কোভিড-১৯ কোন পর্যায়ে রয়েছে। স্টেজ থ্রি হলে অবশ্যই সমস্ত কিছু বন্ধ করতে হবে।’’ স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানাচ্ছে, ভারত বর্তমানে স্টেজ-টু-তে রয়েছে। পরিস্থিতি য়াতে স্টেজ-থ্রি-তে না-যায়, তার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।

আপাতত বাইরে থেকে অধিবেশন দেখতে আসা ব্যক্তিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। কিন্তু শাসক পক্ষের সাংসদদের বড় অংশকে বাধ্যতামূলক ভাবে লোকসভায় থাকতে হয়। প্রতি দু’ঘণ্টায় ৫৫ জন করে সরকারি পক্ষের সাংসদকে উপস্থিত থাকতে হয়। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে তাঁরা থাকেন। ফলে একটা বিষয় স্পষ্ট। সংসদ বন্ধ করে দেওয়া হলে আলাদা কথা। কিন্তু চালু রাখলে প্রতিদিন সেখানে বড় মাপের জনসমাগম হবে। অন্যান্য সব ক্ষেত্রে যেটা করতে নিষেধ করছে সরকারই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Parliament
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE