ছবি: পিটিআই।
করোনার গিলতে আসা প্রকাণ্ড ‘হাঁ’-এর মুখে দাঁড়িয়ে এই মুহূর্তে গোটা দেশের প্রত্যাশা অনেক। অনেকে হয়তো মনে করেছিলেন, তার কিছু অন্তত পূরণের প্রতিশ্রুতি শুক্রবার ভিডিয়ো-বার্তায় শোনা যাবে প্রধানমন্ত্রীর মুখে। কিন্তু তার বদলে নরেন্দ্র মোদীর মুখে যা শুনলেন, তাতে তাঁরা বিস্মিত, ক্ষুব্ধ, হতাশ।
বিকেল ৫টায় ৫ মিনিট ধরে তালি আর থালা বাজাতে বলার পরে এ বার রাত ৯টায় ৯ মিনিট ধরে প্রদীপ আর মোমবাতি জ্বালাতে বলা! এর জন্য সারা দেশকে বার্তা সাতসকালে! বিরোধীদের কটাক্ষ, এই কঠিন সময়ে এমন নিষ্ঠুর রসিকতা মোদীই করতে পারেন। সারা পৃথিবীর কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দেওয়া করোনার সঙ্গে লড়াইয়ের পাকা রাস্তা না-বাতলে, নিজের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির কাঁচা চেষ্টা।
মূলত কোন কোন প্রত্যাশা পূরণের কথা শুনতে চেয়েছিল আমজনতা? খোদ প্রধানমন্ত্রী যাঁদের জন্য বিকেল ৫টায় ৫ মিনিট থালা বাজাতে বলেছিলেন, সেই ডাক্তার-নার্সদের হাতে চিকিৎসা সরঞ্জামের টান প্রবল। করোনা নির্ণয়ের জন্য যে পরীক্ষার (টেস্ট) কিট সবার আগে জরুরি, তার জোগান প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। রোগ থেকে নিজেদের বাঁচানোর উপযুক্ত শরীর ঢাকা পোশাক (পিপিই) পাননি সিংহ ভাগ ডাক্তার, নার্স। এন-৯৫ মাস্ক, ওষুধ, এমনকি স্যানিটাইজ়ারও জুটছে না প্রয়োজন মতো। তাই করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবার আগে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সরকারকে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় নজর দিতে বারবার বলছেন চিকিৎসকেরা। এ দিন সকালে কেউ কেউ আশা করেছিলেন, অন্তত এ সব ব্যাপারে কিছু শোনা যাবে। হতাশ তাঁরা।
আরও পড়ুন: ৯ মিনিটই চ্যালেঞ্জ বিদ্যুৎকর্তাদের
লকডাউনের জেরে রোজগার বন্ধ ঠেলা-রিকশা-টোটো চালক থেকে শুরু করে দেশের সমস্ত ‘দিন আনি দিন খাই’ শ্রমিক-মজুরের। দাবি ছিল, এই প্রবল আর্থিক দুর্যোগ সামাল দিতে হাতে অন্তত কিছু টাকা দিক কেন্দ্র। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সরকারি ত্রাণ প্রকল্পে যেটুকু সহায়তার কথা বলেছেন, তাতে আর যা-ই হোক, সংসার চলে না। প্রধানমন্ত্রীর বার্তায় তেমন প্রাপ্তিযোগের আশা করেছিলেন কেউ কেউ। হতাশ তাঁরাও।
কর্মী সংগঠনগুলির অভিযোগ, লকডাউনের জেরে সারা দেশে বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে গাদাগাদি করে আটকে রয়েছেন সাড়ে ৬ লক্ষেরও বেশি ভিন্ রাজ্যের শ্রমিক। কেন্দ্রের স্পষ্ট নির্দেশিকা সত্ত্বেও তাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অবাধে বেতন এমনকি কর্মী ছাঁটাইও করছে বহু সংস্থা। সারা দেশ থেকে তার অভিযোগ মিলছে ভুরিভুরি। চরম বিপাকে ঠিকা কর্মীরা। লকডাউনের জেরে রুটি এবং মাথার উপরে ছাদ দুই-ই হারিয়েছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা। ইউনিয়নগুলির দাবি, এঁদের জন্য নিদেন পক্ষে খাবার, থাকার জায়গা, ওষুধ, হাতে ন্যূনতম টাকার ব্যবস্থা করুক সরকার। কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হোক কর্মী ছাঁটাই করা মালিকদের বিরুদ্ধে। কিন্তু তেমন কথাও মোদী বললেন কই?
করোনা রুখতে দিনে বহু বার সাবানে হাত ধোয়ার কথা বলা হচ্ছে। অথচ দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষের না আছে সেই সাবান কেনার সামর্থ্য, না জলের জোগান। লকডাউনের তীব্র ধাক্কা দেশের অর্থনীতি (বিশেষত অসংগঠিত ক্ষেত্র) কী ভাবে সামলে উঠবে, তা এখনও অজানা। অনেকেই বলছেন, “আমরা চেয়েছিলাম, এ সবের উপরে আলো ফেলুন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তা হল কই!” প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের কথায়, সকলে আশা করেছিলেন অর্থনীতির ইঞ্জিন নতুন করে চালু করার টোটকা মিলবে। কিন্তু তা হয়নি।
হযবরল-য় শ্রী কাকেশ্বর কুচকুচের হাতে পেন্সিল ছিল। করোনা-সঙ্কটে দেশের মানুষের হাতে রইল মোমবাতি!
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy