Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

রাস্তা ফাঁকা, শ্রমিক মিছিল বন্ধ, ঠাঁই সরকারি শিবিরে

প্রধানমন্ত্রী লকডাউন ঘোষণা করার পর থেকেই দিল্লির পরিযায়ী শ্রমিকদের যে ঘরে ফেরার মিছিল শুরু হয়েছিল, সোমবার তা পুরোপুরি বন্ধ করা হয়েছে।

কোয়রান্টিন সেন্টারে ঠাঁই পরিযায়ী শ্রমিকদের। লখনউয়ে। ছবি: পিটিআই।

কোয়রান্টিন সেন্টারে ঠাঁই পরিযায়ী শ্রমিকদের। লখনউয়ে। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২০ ০৬:০০
Share: Save:

ক্লাসরুমের মেঝেতে তোষক-চাদর পেতে সার সার বিছানা। মাঝে হাতখানেক দূরত্ব। দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ সীমানা লাগোয়া গাজিপুরের সর্বোদয় কন্যা বিদ্যালয়। সকলের মুখে মাস্ক জোটেনি। অনেকে রুমাল দিয়েই মুখ বেঁধে রেখেছেন। খুদে ছানাদের মুখে তা-ও নেই। তিন ছেলেমেয়েকে বসে থাকা রূপালি যাদবের আফশোস নেই তাও। “মুখে মাস্ক নেই তো কী হয়েছে? মুখে খাবার তো তুলে দিতে পেরেছি।”

দক্ষিণ দিল্লির এক কামরার বাড়ি ছেড়ে বুলন্দশহরের গ্রামের দিকে রওনা হয়েছিলেন রূপালিরা। শুনেছিলেন, আনন্দবিহার থেকে যোগী সরকারের বাস ছাড়ছে। কিন্তু রবিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কড়া নির্দেশ জারি হয়, পরিযায়ী শ্রমিকদের কোনও ভাবেই এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে যেতে দেওয়া হবে না। তাই আশ্রয় জুটেছে সরকারি স্কুলে। খাবার মিলছে। ডাক্তারও আসছেন। গাজিপুরের ত্রাণশিবিরের দায়িত্বে থাকা দিল্লির সিভিল ডিফেন্সের কর্তা শৈলেন্দ্র নিরালা বললেন, “এখনও পর্যন্ত শ’চারেক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। সকলেই উত্তরপ্রদেশ, বিহার, হরিয়ানার।” উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া জানান, “দিল্লিতে ৮০০-র বেশি কেন্দ্র থেকে গরিবদের জন্য দুপুরের খাবার বিলি হচ্ছে।” আশ্রয়ের ব্যবস্থাও আছে।

প্রধানমন্ত্রী লকডাউন ঘোষণা করার পর থেকেই দিল্লির পরিযায়ী শ্রমিকদের যে ঘরে ফেরার মিছিল শুরু হয়েছিল, সোমবার তা পুরোপুরি বন্ধ করা হয়েছে। রাস্তায় পুলিশের কড়া পাহারা। সীমানাও বন্ধ। যে সব রাস্তা দিয়ে এ ক’দিন মানুষ সার দিয়ে হাঁটছিলেন, আজ সে সবই ফাঁকা। শ্রমিকরা কেউ এসে পড়লেও পুলিশ-ভ্যানে তুলে তাঁদের ফের নিজের ঠিকানায় ফেরত পাঠানো হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব পুণ্যসলিলা শ্রীবাস্তব বলেছেন, “যদি পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘর ভাড়ার জন্য উচ্ছেদ করা হয় বা বেতন না দেওয়া হয়, তা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা হবে।” দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের আশ্বাস, “যাঁদের রেশন কার্ড নেই, আমরা শীঘ্রই তাঁদেরও রেশন দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। তত দিন ওঁরা দিল্লি সরকারের শিবিরে নিখরচায় থাকতে, খেতে পারেন।”

কিন্তু পরিযায়ী শ্রমিকরা কেন দিল্লি ছাড়ছিলেন? কেনই বা সরকারি বাসে করে তাঁদের আনন্দবিহার বাস টার্মিনাসে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল, কেন তাঁদের রেশনের বন্দোবস্ত হয়নি, তা নিয়ে কেন্দ্রের আঙুল কেজরীবাল সরকারের দিকেই। রবিবারই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক চার উচ্চপদস্থ আমলার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করে। দুজনকে সাসপেন্ড, দুজনকে শো-কজ করা হয়। সেই সঙ্গে কার্ফু ও লকডাউনের নির্দেশ সত্ত্বেও দিল্লি পুলিশ সোমবারের আগে শ্রমিকদের রাস্তায় বের হতে দিয়েছিল কেন, সেই প্রশ্নও উঠেছে। জবাবে আজ দিল্লির পুলিশ কমিশনার এস এন শ্রীবাস্তব দাবি করেছেন, আনন্দবিহার বাস টার্মিনাসে যাঁরা জড়ো হয়েছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই দিল্লির নন।
বেশির ভাগ পঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান থেকে এসে উত্তরপ্রদেশ, বিহারে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সিসৌদিয়া মনে করিয়ে দিয়েছেন, পঞ্জাব, হরিয়ানা থেকে আজও মজুররা পালিয়ে যাচ্ছেন। আম আদমি পার্টির প্রশ্ন, শুধু দিল্লি সরকারের আমলাদের বিরুদ্ধেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কেন ব্যবস্থা নিল? একই অপরাধে কেন যোগী-সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হবে না?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE