Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus Lockdown

রেলে ব্যয় কমাতে রুটেও কোপ!

কোন কোন পথে খরচ কাটছাঁট করা যায়, তারও সুলুকসন্ধান দিয়েছেন রঙ্গরাজন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ফিরোজ ইসলাম
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২০ ০৫:০০
Share: Save:

রেলের বেহাল আর্থিক অবস্থার আঁচ মিলেছিল গত বছরেই। তার সুরাহার পথ সন্ধান চলতে চলতেই এসে পড়ে করোনা এবং দীর্ঘ লকডাউন। এখন আর্থিক দুরবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে, রেলের অর্থ কমিশনার মঞ্জুলা রঙ্গরাজন সম্প্রতি সব জ়োনকে চিঠি লিখে ব্যাপক ভাবে খরচ কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন। খরচ বাঁচাতে প্রয়োজনে অলাভজনক রুট বন্ধের কথাও বলা হয়েছে তাঁর নির্দেশিকায়।

আর কোন কোন পথে খরচ কাটছাঁট করা যায়, তারও সুলুকসন্ধান দিয়েছেন রঙ্গরাজন। বলা হয়েছে, সংরক্ষিত টিকিটের কাউন্টারের সংখ্যা কমানো হোক। কর্মীদের বেতন বাবদ খরচ কমাতে যাবতীয় পুনর্নিয়োগ খতিয়ে দেখার পাশাপাশি রেলের সুরক্ষা ক্ষেত্র ছাড়া অন্যত্র নতুন পদ সৃষ্টির ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যে-সব পদে দু’বছরের বেশি সময় নিয়োগ হয়নি, সেগুলো ছেড়ে দেওয়া হোক। ঘটা করে বিভিন্ন উদ্বোধন এবং জেনারেল ম্যানেজারদের বার্ষিক পরিদর্শনে ধুমধাম যথাসম্ভব কমানোর কথা বলা হয়েছে অর্থ কমিশনারের চিঠিতে।

রেল সূত্রের খবর, গত তিন মাসের লকডাউন পর্বে পার্সেল ট্রেন চললেও খুব বেশি আয় হয়নি। দেশের সর্বত্র অধিকাংশ শিল্প, কলকারখানা বন্ধ থাকায় পণ্য পরিবহণ কার্যত তলানিতে এসে ঠেকেছে। যাত্রিবাহী ট্রেন থেকেও কোনও আয় হয়নি। চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত হিসেবে দেখা যাচ্ছে, সব ধরনের ট্রেন চলাচল থেকে ৫৮ শতাংশ পর্যন্ত আয় কমেছে। ভাঁড়ারে জমা পড়া তো দূরের কথা, করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে গিয়ে কয়েক মাস ধরে রেলের কোষাগার থেকে অনবরত খরচ হয়ে চলেছে। আইসোলেশন কোচ, মাস্ক বা মুখাবরণ, স্যানিটাইজ়ার বা হাতশুদ্ধি, পিপিই কিট বা বর্মবস্ত্র, বিশেষ হাসপাতাল তৈরির পাশাপাশি আইআরসিটিসি-র রান্নাঘর থেকে দুঃস্থদের বিনামূল্যে দু’বেলা খাবার দেওয়ার মতো নানা কাজ হয়েছে।

এখন লকডাউন শিথিল হলেও সারা দেশে মাত্র ২৩০টি যাত্রিবাহী ট্রেন চলছে। তার উপরে পর্যাপ্ত যাত্রী নেই। ফলে আয়ের সুযোগ ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। অগত্যা ব্যয় কমাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন রেল-কর্তৃপক্ষ। খরচ বাঁচাতে রেলের অফিসগুলিতে অন্তত ২৫ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার কথা বলা হয়েছে। ৩১ বছরের বেশি পুরনো ডিজেল ইঞ্জিন বিক্রি করে টাকা তোলার কথাও বলা হয়েছে অর্থ কমিশনারের চিঠিতে। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ব্যয়বহুল হাইস্পিড ডিজেলের ব্যবহার যথাসম্ভব কমাতে হবে। বিভিন্ন স্তরের কর্তা ও আধিকারিকদের গাড়ির খরচ কমানোর পাশাপাশি স্টেশন, ট্রেন, অফিস পরিষ্কার করার জন্য নিযুক্ত কর্মীর সংখ্যাও খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ওভারটাইম এবং যাতায়াতের খরচ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে হবে।

এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে ইস্টার্ন রেলওয়ে মেনস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অমিত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘খরচ ছাঁটাইয়ের নামে রেলকর্মীদের অর্জিত অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া রেলে কী ভাবে আয় বাড়ানো যেতে পারে, সেই বিষয়ে কর্মীদের মতামত নেওয়ার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু রেল-কর্তৃপক্ষ একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছেন। লাভজনক ক্ষেত্রগুলো বেসরকারি হাতে ছেড়ে দিলে রেলের লাভ হবে কী ভাবে? এটা সমাধান নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Indian Railways
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE