Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

আবর্জনা তুলতে বাস-অটো, দুর্নীতির গন্ধে হইচই রাঁচিতে

আবর্জনা ফেলার জন্য সরকারি কোষাগার থেকে বের করা হয়েছিল তেইশ কোটিরও বেশি টাকা। আবর্জনা ফেলার বরাত দেওয়া হয়েছিল দিল্লির একটি সংস্থাকে। কিন্তু রাঁচি পুরসভার আবর্জনা ফেলার খরচের হিসেব দেখে চোখ কপালে উঠেছে কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) আধিকারিকদের। কারণ, ওই হিসেব অনুযায়ী আবর্জনা তোলা হয়েছে বাস, অটো বা স্কুটারে। আবর্জনা ফেলতে যে সব গাড়ি একেবারেই ব্যবহার করা হয় না। এতে বড় ধরনের কেলেঙ্কারির গন্ধ পাচ্ছেন বিরোধীরা।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
রাঁচি শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৫ ০৩:২৮
Share: Save:

আবর্জনা ফেলার জন্য সরকারি কোষাগার থেকে বের করা হয়েছিল তেইশ কোটিরও বেশি টাকা। আবর্জনা ফেলার বরাত দেওয়া হয়েছিল দিল্লির একটি সংস্থাকে। কিন্তু রাঁচি পুরসভার আবর্জনা ফেলার খরচের হিসেব দেখে চোখ কপালে উঠেছে কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) আধিকারিকদের। কারণ, ওই হিসেব অনুযায়ী আবর্জনা তোলা হয়েছে বাস, অটো বা স্কুটারে। আবর্জনা ফেলতে যে সব গাড়ি একেবারেই ব্যবহার করা হয় না। এতে বড় ধরনের কেলেঙ্কারির গন্ধ পাচ্ছেন বিরোধীরা।

২০১২-১৩ সালে রাঁচি পুরসভার আবর্জনা ফেলার খরচের হিসেবে কেন আবর্জনা পরিবহণের ট্র্যাক্টরের বদলে ওই সব গাড়ির নম্বর রয়েছে?

পুরসভার তরফে বিষয়টি অনিচ্ছাকৃত ভুল বলে সিএজি-কে জানানো হয়েছে। তা মানতে রাজি নয় সিএজি। ঝাড়খণ্ডে সিএজি-র প্রধান অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেল মৃদুলা সাপ্রুর অভিযোগ, ওই ভুল ইচ্ছাকৃত। কারণ একাধিক বার এমন সব যানবাহনের নম্বর দেওয়া হয়েছে, যা আবর্জনা পরিবহণের কাজে ব্যবহার হয় না।

সিএজি-র রিপোর্ট বলছে, দু’ বছরে ৭৮ হাজার ৬৩৩ টন আবর্জনা বহন করা হয়েছে ওই সব যানবাহনে। যানবাহনের নম্বর পরিবহণ দফতরের থেকে খতিয়ে দেখে সিএজি জানতে পারে, যে সব গাড়ির নম্বর দেওয়া হয়েছিল তা আবর্জনা পরিবহনের ট্র্যাক্টরের নয়। গ্লোবাল টেন্ডারের মাধ্যমে এ টু জেড নামে দিল্লির একটি সংস্থা আবর্জনা তোলার টেন্ডার পেয়েছিল। ২০১১-এ ওই টেন্ডার হয়।

ঘটনার তদন্ত চেয়ে আজ বিধানসভায় বিরোধী দলের বিধায়কেরা হৈ চৈ জুড়ে দেন। তাঁরা ওই ঘটনাকে কেলেঙ্কারি বলে দাবি করে তদন্ত চান। ওই সময় রাজ্যে বিজেপিরই সরকার ছিল। বিরোধীদের দাবি, বিহারের পশুখাদ্য কেলেঙ্কারির ক্ষুদ্র সংস্করণ রাঁচি পুরসভার এই ঘটনা। পশুখাদ্য কেলেঙ্কারির সময়েও পশুর খাবার আর গবাদি পশু বহনের বাহন হিসেবে মোটর বাইক আর স্কুটারের ভুয়ো নম্বর দেওয়া হয়েছিল। যা পরে তদন্ত রিপোর্টে জানা যায়। এ বার আবর্জনা তোলার জন্যও একই ভাবে বাস কিংবা স্কুটারের ভুয়ো নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে। রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী চন্দ্রেশ্বর প্রসাদ সিংহ অবশ্য আজ এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, বিধানসভা অধিবেশন শেষ হলে এই নিয়ে আলোচনা হবে।

ঘটনা যে সময়ের সেই সময় রাঁচির পুরসভার মেয়র ছিলেন রমা খালকো। যিনি পরে পুরসভা নির্বাচনের সময়ে ভোটারদের টাকা দিয়ে প্রভাবিত করতে চাওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন। এখন তিনি অবশ্য কংগ্রেসে। ঘটনা অস্বীকার করে রমা জানান, গ্লোবাল টেন্ডারের মাধ্যমে দিল্লির ওই সংস্থাটিকে বরাত দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই সংস্থাটিকে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৎকালীন সরকার দিতে পারেনি। ফলে ওই সংস্থা চলে যায়। তিনি বলেন, “সংস্থাটিকে টেন্ডার দেওয়ার বিষয়টি পুরসভায় চূড়ান্ত হয়। তারপরে নগরোন্নয়ন দফতরকেও বিষয়টি জানানো হয়। আবর্জনা তোলার গাড়ি পুরসভাই সরবরাহ করেছিল।” রমাদেবীর মতে, সিএজি কেন এই রিপোর্ট দিয়েছে তা তিনি বুঝতে পারছেন না। ওই কাজের গতি-প্রকৃতির উপরে নজর রাখার জন্য আলাদা বিভাগ ছিল। তিনিও ঘটনার তদন্ত চান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE