সত্যেন্দ্র দুবে। —ফাইল চিত্র
চিনিকলের ‘মুন্সি’ ভাগ্যেশ্বরী দুবের একটাই আক্ষেপ, ‘‘ছেলের আত্মবলিদানের এত দিন পরেও সড়ক নির্মাণে দুর্নীতি তো চলছেই! বদলায়নি কিছুই।’’
কে তাঁর ছেলে?
অটলবিহারী বাজপেয়ীর সময়ে ২০০৩ সালে ‘সোনালি চতুর্ভুজ’ যোজনায় দুর্নীতি বন্ধ করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন জাতীয় সড়ক প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ার সত্যেন্দ্র দুবে। প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা লুট নিয়ে তিনি সরাসরি চিঠি লিখেছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে। সেই ‘অপরাধে’ ২০০৪ সালে গয়ায় খুন হতে হয় তাঁকে। ওই ঘটনার পরে শোরগোল হয় দেশ জুড়ে। প্রশ্ন ওঠে, প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠি কী করে ফাঁস হয়ে গেল?
বেঁচে থাকলে এই নভেম্বরে সত্যেন্দ্রের বয়স হত পঁয়তাল্লিশ। ভাগ্যেশ্বরী তাঁরই বাবা।
পটনা থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে সিওয়ান জেলার সাহপুর গ্রামে এখনও বাড়ি রয়েছে ভাগ্যেশ্বরীর। সাত ভাইবোনের মধ্যে বেড়ে ওঠা মেধাবী সত্যেন্দ্র বিটেক করেন কানপুরের আইআইটি থেকে। এমটেক বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে। যোগ দিয়েছিলেন কোডারমা জেলার প্রজেক্ট ডিরেক্টর পদে। এখন সে কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন ভাগ্যেশ্বরী। বলেন, ‘‘দুর্নীতির সঙ্গে লড়তে গিয়েই খুন হল ছেলেটি। সবই কপাল!’’
সত্যেন্দ্র দেখেছিলেন, মাফিয়ারা কী করে কব্জা করে ফেলেছে প্রকল্পটিকে। তাদের পিছনে রয়েছে নেতাদের একাংশ। অন্য অফিসারদের মতো সত্যেন্দ্রর কাছে এসেছিল লুটের একাংশ হাতিয়ে নেওয়ার সুযোগ। ‘‘কিন্তু উনি ছিলেন অন্য ধাতুতে গড়া। মাফিয়াদের দেওয়া টাকা ভর্তি খাম মুখের উপর ছুঁড়ে তাদের বের করে দিয়েছিলেন।’’— আনন্দবাজারকে ওই সময়ে বলেছিলেন ওই কোডারমা অফিসের এক কর্মী। নিম্নমানের কাজ করায় এক ঠিকাদারকে তিনি ছ’কিলোমিটার রাস্তা খুঁড়ে ফেলতে নির্দেশ দিলেন। সর্বত্র হইচই পড়ে গেল।
এর পর তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করে উপরতলায় অভিযোগ করেছেন সত্যেন্দ্র। ফল হয়নি। শেষ ভরসা ছিলেন অটলবিহারী। ‘গোপন অভিযোগপত্র’ লিখে জানালেন তাঁকে। লিখেছিলেন, এক শ্রেণির অফিসার কী করে রাস্তার নকশা পাল্টে খরচ শ’য়ে শ’য়ে কোটি টাকা বাড়িয়ে দেখিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে অভিযোগপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হল প্রকল্পের কর্তাদেরই। অভিযোগ, সেখান থেকেই ফাঁস হয়ে গেল অভিযোগকারীর নাম। বোনের জন্য কাশীতে পাত্র দেখে মাঝরাতে গয়া স্টেশনে নেমেছিলেন তিনি। যে জিপটি তাঁকে নিতে আসার কথা ছিল স্টেশনে, বার বার ফোন করেও তার চালককে পাননি তিনি। একটি রিকশা নিয়ে ফেরার পথেই খুন হয়ে গেলেন।
এখন আর সাহপুরে থাকে না দুবে-পরিবার। ভাই ধনঞ্জয়ও আইআইটি থেকে পাশ করেছেন। তবে সরকারি চাকরির দিকে এগোননি। নয়ডাতে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। বাবা-মাকে নিজের কাছেই রেখেছেন। পাঁচ বোনের বিয়ে হয়েছে। সত্যেন্দ্রের খুনের পর থেকে অসুস্থ তাঁর মা। বার দুয়েক ‘ব্রেন হেমারেজ’ হয়েছে তাঁর। ভাল করে কথা বলতে পারেন না। ভাগ্যেশ্বরী বলেন, ‘‘অটলবিহারীর চেয়ে বড় কেউ ছিল নাকি! তিনিই যখন কিছু করতে পারেননি, তখন বাকিরা আর কী করবেন!’’ হত্যা তদন্তের কথা আর মনে করতে চান না তিনি। সনিয়া গাঁধী পরে এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে পাঠিয়েছিলেন সাহায্য দেবেন বলে। কিন্তু সেই আর্থিক সাহায্য ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ভাগ্যেশ্বরী। তাঁর কথায়, ‘‘ছেলেই যখন রইল না। তখন আর সাহায্য নিয়ে কী হবে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy